ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কাগুজে টেন্ডার উঠে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

কাগুজে টেন্ডার উঠে যাচ্ছে

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ হাতে লেখা চিঠি যেমন এখন প্রায় অতীত। সেই জায়গা দখল করে নিয়েছে মোবাইল ফোনের ক্ষুদে বার্তা ও ই-মেইল। ঠিক তেমনি ইতিহাস ঘটতে যাচ্ছে সরকারী কেনাকাটায়। উঠে যাচ্ছে কাগুজে দরপত্র। আগামী ডিসেম্বর মাস থেকে অনলাইনে যাচ্ছে সরকারী সব দরপত্র। পাইলট প্রকল্পের সফলতার পর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার অন্যতম বাস্তবায়ন ঘটতে যাচ্ছে। এজন্য যাবতীয় প্রস্তুতি গুছিয়ে নিচ্ছে সেন্টাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ)। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ প্রক্রিয়ার ফলে ঘরে বসেই দরপত্র সংক্রান্ত সব কাজ করতে পারেন ঠিকাদাররা। পাশাপাশি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে দরপত্রের প্রস্তাব, মূল্যায়ন চুক্তি ব্যবস্থাপনা ও ই-পেমেন্টসহ সংশ্লিষ্ট অনেক কাজই স্বল্প সময়ে, সহজে ও সমন্বিতভাবে করা সম্ভব হবে। অন্যদিকে দিন ফুরিয়ে যাবে টেন্ডারবাজদের। ফলে কমবে দুর্নীতি, সন্ত্রাস এবং অনিয়ম। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী ও ই-জিপির সফল বাস্তবায়নে নীতি নির্ধারণী কমিটির আহ্বায়ক আ হ ম মুস্তফা কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হলে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর বিকল্প নেই। আধুনিক প্রযুক্তি সঠিক ব্যবহারের ফলে দুর্নীতি ও অনিয়ম কমিয়ে আনা সম্ভব। এজন্য সরকারী প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় দরপত্রের স্বচ্ছতা আনতে ই-টেন্ডারিং ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল। দেশের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে ই-টেন্ডারিংয়ের আওতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। ফলে এখনকার কাগুজে টেন্ডার আর থাকবে না। সিপিটিইউ সূত্র জানায়, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সবগুলো মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে ই-জিপির আওতায় নিয়ে আসতে ইতোমধ্যেই যেসব প্রস্তুতি শুরু হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, কেনা হচ্ছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ডাটা সেন্টার। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই এটি স্থাপনের কাজ শেষ করা হবে। যারা ই-টেন্ডারিং কার্যক্রম পরিচালনা করবেন তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। তাছাড়া ঠিকাদারদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও চলছে। এ কার্যক্রমকে আরও বেগবান করতে বর্তমান পাইলট প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত চলমান চারটি টার্গেট এজেন্সির মাধ্যমে জেলা পর্যায়ে ল্যাব স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এই ল্যাবে ঠিকাদারদের প্রশিক্ষণ পরিচালনা করা হবে। সিপিটিইউতে ই-জিপি বাস্তবায়নে জড়িত বেসরকারী সংস্থা দোহাটেকও ঠিকাদারদের প্রশিক্ষণ পরিচালনা করছে। সিপিটিইউর সক্ষমতা বাড়াতে সিপিটিইউকে একটি কর্তৃপক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠার বিষয়েও চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) আওতায় রেগুলেটরি ইউনিট হিসেবে কাজ করছে, যা শুধু মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে কিন্তু কোন নির্দেশ দিতে পারে না। এছাড়া আনুষঙ্গিক প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ বিষয়ে আইএমইডির সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার জনকণ্ঠকে বলেন, দেশে মোট সরকারী ক্রয়ের শতকরা প্রায় ২০ ভাগ বর্তমানে অনলাইনে সম্পাদন করা হচ্ছে। ২০১৬ সালের মধ্যে সকল সরকারী প্রতিষ্ঠানের সব কেনাকাটা অনলাইনে হবে। এতে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় নানাবিধ জটিলতার নিরসন হচ্ছে। খরচ ও সময়ের সাশ্রয় হচ্ছে। তবে ইলেকট্রনিক গবর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) ব্যবস্থার কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য সরকারী ক্রয়কারী সংস্থার পাশাপাশি ঠিকাদারদের প্রশিক্ষণ অত্যন্ত জরুরী সে কাজটি পরিচালনা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে অনলাইনে সরকারী কেনাকাটার কার্যকর বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সকলের সক্রিয় সহযোগিতা প্রয়োজন। সিপিটিইউ সূত্র জানায়, ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঠিকাদার এবং পরামর্শক মিলে মোট ১৯ হাজার ৬৮২ জন ই-জিপিতে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। ৩৩টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীনে ২ হাজার ২৩৬টি সরকারী ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েছে। সারাদেশে ৪০টি ব্যাংকের ১ হাজার ৭০০ এর বেশি শাখা ই-জিপিতে সেবা দেয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। তাছাড়া নিবন্ধিত উন্নয়ন সহযোগী রয়েছে পাঁচটি। এগুলো হচ্ছে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা), ইউনিসেফ, চীন এবং নেদারল্যান্ড। ২০১১ সাল থেকে গত ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ই-জিপির আওতায় ২১ হাজার ৭৮৩টি চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। যেগুলোর মোট আর্থিক সংশ্লেষণ ৩০ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে সিপিটিইউ গত জানুয়ারি পর্যন্ত নিবন্ধন ফি ও টেন্ডার ডকুমেন্ট বিক্রি বাবদ ই-জিপি সিস্টেম থেকে আয় করেছে ৫৯ কোটি টাকা, যা চালানের মাধ্যমে সরকারের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, সক্ষমতা বাড়ছে ই-জিপি (ইলেকট্রনিক্স গবর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট) কার্যক্রমে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) বাস্তবায়নাধীন পিপিআরপি-২ (সংশোধিত) প্রকল্পের আওতায় ক্রয় করা হচ্ছে অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন নিউ ডাটা সেন্টার। এটি স্থাপনের পর বাড়বে এই সক্ষমতা। ফলে পর্যায়ক্রমে দেশের সকল সরকারী সংস্থার ক্রয় কার্যক্রম ডিজিটাল বা ই-জিপি করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে ডিও লেটার পাঠিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এতে তিনি সকল ধরনের দরপত্র ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিয়ে আসার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। এ বিষয়ে সিপিটিইউর মহাপরিচালক ফারুক হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের সকল সরকারী সংস্থার ক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা ও অনলাইনে দরপত্র প্রক্রিয়াকরণ একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে এটি মাইলফলক হবে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে পাঠানো ডিও লেটারে পরিকল্পনামন্ত্রী জানিয়েছেন, ই-জিপি বাস্তবায়নে সামগ্রিক উন্নতি অগ্রগতি হলে এখনও ৫০ কোটি টাকার উর্ধে পণ্য ও কার্য এবং ১০ কোটি টাকার উর্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক ও পেশাগত সেবা ক্রয়ের অনুমোদনের বিষয়টি শুরু হয়নি। অর্থাৎ ৫০ কোটি টাকার বেশি হলে সরকারী ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন প্রয়োজন। তাই ই-জিপিতে ক্রয়ের নির্দিষ্ট সীমা তুলে দিয়ে ওই কমিটির কার্যক্রম তথা প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন কার্যক্রমও অনলাইনে নেয়ার জন্য সিসিজিপির কোন একটি সভায় কার্যকর পন্থা উদ্ভাবনে আলোচনার জন্য বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছিলেন। পরবর্তীতে সম্প্রতি দেশের সব দরপত্র কার্যক্রমই ই-জিপিতে যুক্ত করতে এক বৈঠকে বসে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সভাপতিত্ব করেন। এ সময় ৫০ কোটি টাকার উপরের বড় কাজের দরপত্র এবং ১০ কোটি টাকার বেশি বুদ্ধিবৃত্তিক এবং পেশাগত সেবা ক্রয়ের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়। এ বৈঠক বিষয়ে সিপিটিইউ মহাপরিচালক ফারুক হোসেন বলেন, এর আগে ৫০ কোটি টাকার বেশি বড় কেনাকাটায় অনলাইনভিত্তিক করার ক্ষেত্রে পরিকল্পনামন্ত্রী মহোদয় একটি প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটি কেবিনেট ডিভিশন বুঝতে পারছে না। এজন্য আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার করতেই এ বৈঠক করা হয়। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়সহ ই-জিপির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্বশীলরা উপস্থিত ছিলেন। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, উন্নয়ন কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করা ও সরকারী অর্থ ব্যয় অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্যই ই-টেন্ডারিং ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। ২০১১ সালের ২ জুন এ প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। ক্রয় প্রক্রিয়া ছাড়াও উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি দূর করতে অনেক আগে থেকেই দাতা সংস্থারা চাপ দিয়ে আসছিল। এ অবস্থায় প্রথম পর্যায় সরকারী চারটি সংস্থা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর, সড়ক ও জনপথ অধিদফতর, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে পরীক্ষামূলকভাবে ই-টেন্ডারিং চালু করা হয়। বিশ্বব্যাংকের মতে, প্রতিবছর সরকারীভাবে যে ক্রয় কাজ করা হয় তার অধিকাংশই এ চারটি সংস্থা সম্পন্ন করে থাকে। তাই এই ৪টি বৃহত সংস্থাকেই পাইলট প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছিল। বিশ্বব্যাংকর প্রশংসা ॥ দুর্নীতি ও টেন্ডারবাজি ঠেকাতে সরকারের অন্যতম উদ্যোগ ই-টেন্ডারিং সফল হয়েছে। ইতোমধ্যেই এ পদ্ধতির সুফল মিলছে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় গৃহীত এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন সরকারী অফিস। ইতোমধ্যেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে এই পদ্ধতিতে। ফলে ঘরে বসেই দরপত্র সংক্রান্ত সকল কাজ করতে পারছেন ঠিকাদাররা। পাশাপাশি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে দরপত্রের প্রস্তাব, মূল্যায়ন চুক্তি ব্যবস্থাপনা ও ই-পেমেন্টসহ সংশ্লিষ্ট অনেক কাজই স্বল্প সময়ে, সহজে ও সমন্বিতভাবে করা সম্ভব হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক মূল্যায়নে বলা হয়েছে, ই-টেন্ডারিং এ বাংলাদেশ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি ভাল করেছে। এ প্রক্রিয়ার পাইলট কার্যক্রম সফল হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ই-টেন্ডারিং মূল্যায়ন সংক্রান্ত ১১ সদস্যের একটি মিশন এ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেছে। মিশনের সদস্য বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের যোগাযোগ কর্মকর্তা মেহেরিন এ মাহবুব জনকণ্ঠকে জানান, আমরা আশাবাদী এক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে সেই সঙ্গে দুর্নীতি ও টেন্ডারবাজির দিনও শেষ হবে। কেননা ইতোমধ্যেই ই-টেন্ডারিং বাংলাদেশে প্রশংসনীয়ভাবে এগিয়েছে। পরিবর্তনের উদ্যোগ ॥ পরিবর্তন নিয়ে আসার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সরকারী ক্রয়ে। ২০০৬ সালে প্রণীত ক্রয় আইন এবং বিধিমালায় ফাঁকফোকরের সুযোগে সরকারী ক্রয় কার্যক্রমে সিন্ডিকেট করে ঠিকাদাররা কাজ বাগিয়ে নেয়াসহ নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়। এ পরিপ্রেক্ষিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি ক্রয় আইন এবং বিধিমালার সংশোধনীর বিষয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বৈঠকে বসেছিল পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। আন্তর্জাতিক কেনাকাটায় পদ্ধতিগত ত্রুটি থাকার কারণে একদিকে বিদেশী কোম্পানি উচ্চ দরে কাজ পাচ্ছে। অন্যদিকে প্রকল্প ব্যয় বিশে^র অন্য দেশের চেয়ে অনেক বেশি। আন্তর্জাতিক ক্রয়ে যোগসাজশে উচ্চ দরে কাজ নিচ্ছে নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানি। স্থানীয় কেনাকাটার ক্ষেত্রেও সমস্যা রয়েছে। দরপত্র জমা দেয়াকে কেন্দ্র করে ঘটছে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। এজন্য কেনাকাটার ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনের ৩৮টি ক্ষেত্রে পরিবর্তন করা হচ্ছে। এতে সরকারী কেনাকাটায় নতুন করে সমস্যা সৃষ্টি হবে না। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, অভ্যন্তরীণ কেনাটাকায় এক ধাপ দুই খাম পদ্ধতি প্রচলিত আছে। এজন্য আর্থিক ও কারিগরি প্রস্তাব একই সঙ্গে নেয়া হয়। এর পর কারিগরি মূল্যায়ন করে আর্থিক বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হয়। এজন্য সিন্ডিকেট করে উচ্চ দর দেয়ার সুযোগ থাকে না। তবে আন্তর্জাতিক কেনাকাটায় প্রথমে কারিগরি প্রস্তাব নেয়া হয়। এখানে যারা বিবেচিত হয় তারা আর্থিক প্রস্তাব দেয়। এর ফলে কারিগরি প্রস্তাবে নির্বাচিত কয়েকটি কোম্পানি আর্থিক প্রস্তাব দেয়ার সুযোগ পায়। এভাবে বিদ্যুত বিভাগ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সিন্ডিকেট করে উচ্চ দর দেয়ার অভিযোগ উঠছে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং বিদ্যুত বিভাগের নজরে আসায় আন্তর্জাতিক কেনাকাটায় এক ধাপ দুই খাম পদ্ধতি অন্তর্ভুক্তি করা হচ্ছে। এছাড়া বড় বড় প্যাকেজ করে চিহ্নিত বা পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ দেয়া হচ্ছে, এতে বাস্তবায়নেও ব্যাপক বিলম্ব হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এটি ঠেকাতে এসব প্যাকেজ যুক্তিসঙ্গতভাবে ছোট করা হচ্ছে। এতে একাধিক ঠিকাদারের মাধ্যমে একসঙ্গে কাজ আরম্ভ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। এসব দিক বিবেচনায় বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। চুক্তি বাস্তবায়নে গাফিলতি বা ব্যর্থতার কারণে ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের সুপারিশে একটি সময় পর্যন্ত অযোগ্য ঘোষণার পাশাপাশি আরও কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে ভাবছে সিপিটিইউ। সরকারী ক্রয় আইন ও বিধিমালায় পরিবর্তন নিয়ে আসার বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে ক্ষেত্রে অন্যতম একটি বিষয় হচ্ছে প্রকিউরমেন্ট। অনেক সময় দেখা যায় এই প্রকিউরমেন্ট প্রক্রিয়া দেরি হওয়ায় প্রকল্পের বাস্তবায়নও পিছিয়ে যায়। এসব দিক বিবেচনা করে প্রকিউরমেন্ট আইন ও বিধিমালা স্বচ্ছ, সহজ এবং সময় কমিয়ে আনা প্রয়োজন। যেহেতু বর্তমানে উন্নয়ন প্রকল্প সঠিক সময় বাস্তবায়নে ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে, সেহেতু সরকারী ক্রয় আইন ও বিধিমালার ক্ষেত্রেও কিছু পরিবর্তন সময়োপযোগী হবে।
×