ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সফল আয়োজনে পর্দা নামল যুব বিশ্বকাপের

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

সফল আয়োজনে  পর্দা নামল যুব  বিশ্বকাপের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ওয়েস্ট ইন্ডিজের শিরোপা জয়ের মধ্য দিয়ে রবিবার পর্দা নামল অনুর্ধ ১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ১১তম আসরের। টুর্নামেন্টও হলো সফল। আর সেই সফল আয়োজনে চ্যালেঞ্জ জিতল বাংলাদেশও। দলগত ও সাংগঠনিক-দুইভাবেই চ্যালেঞ্জ জয় করল বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টে তৃতীয় দল হয়ে যুব বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ সাফল্য পেয়ে দলগতভাবে যেমন চ্যালেঞ্জ জিতল, তেমনি নিরাপত্তা নিয়ে যে সমস্যার ধোয়া উঠেছিল, তার ছিটেফোঁটাও না লাগায় সাংগঠনিক দক্ষতারও জয় হােল। বাংলাদেশে, বিশেষ করে ক্রিকেটে নিরাপত্তা নিয়ে যে কোন সমস্যা নেই, তা যুব বিশ্বকাপের মাধ্যমে প্রমাণ করে দেয়া গেল। গত মাসের ২৭ তারিখে শুরু হয়েছিল যুব বিশ্বকাপ। তবে শুরু হওয়ার আগেই ঝামেলা পেকে গিয়েছিল। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল শুরু থেকেই নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে থাকে। শেষপর্যন্ত টুর্নামেন্ট শুরুর আগ মুহূর্তে গিয়ে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেয় অস্ট্রেলিয়া। নিরাপত্তা অজুহাত দেখায়। তা নিয়ে সবার ভেতরই একটা শঙ্কা জাগে। ইংল্যান্ডও নিরাপত্তা নিয়ে কথা ওঠায়। কিন্তু শেষপর্যন্ত অস্ট্রেলিয়াকে ছাড়াই যখন বিশ্বকাপ আয়োজনের নিশ্চয়তা দেয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি, তখন আর কোন দলই নিরাপত্তা নিয়ে উচ্চৈঃকণ্ঠে জড়িত হয়নি। বরং নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলগুলো উল্টো নিরাপত্তা নিয়ে কোন সমস্যা নেই বলে দেয়। এবং টুর্নামেন্টে ভাল খেলার আশাও প্রকাশ করে। সেই টুর্নামেন্ট তিনবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে ছাড়া শুরুও হয়ে যায়। অস্ট্রেলিয়ার স্থানে আয়ারল্যান্ডকে যুক্ত করা হয়। ১৭ দিনের এ টুর্নামেন্ট শেষও হয় সুষ্ঠুভাবেই। অবশ্য টুর্নামেন্টের ব্যাপ্তি ১৭ দিনের চেয়েও বেশি ছিল। কারণ, ২২ জানুয়ারি থেকে প্রস্তুতি ম্যাচগুলো হয়। সেই হিসেবে ২৪ দিনের টুর্নামেন্ট শেষ হয়েছে ধরতে হবে। ২২ জানুয়ারির আগে থেকেই টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া দলগুলো বাংলাদেশে আসে। সেই থেকেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়েছে। বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) প্রধান নির্বাহী ডেভিড রিচার্ডসনের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল গণভবনে সাক্ষাত করেন। সেখানে শেখ হাসিনা নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেন। বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ ক্রিকেট পাগল। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমরা সব সময় আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করি। আমরা আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করব।’ বিশ্বকাপের নিরাপত্তার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বিশ্বকাপ শুরুর আগেই আইসিসির প্রধান নির্বাহী ডেভিড রিচার্ডসন বাংলাদেশ সফর করেছেন। রিচার্ডসন সাংবাদিকদের তখন জানিয়েছিলেন, ‘অনুর্ধ ১৯ বিশ্বকাপের নিরাপত্তা পরিকল্পনা নিয়ে খেলোয়াড়, তাদের পরিবার এবং দর্শকদের নিরাপত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেছি। এই টুর্নামেন্টে যেসব দল অংশ নিচ্ছে সেসব দেশের দূতাবাসের সঙ্গেও কথা হয়েছে। নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে। এর মানে এই নয় যে, প্রতিযোগিতা বন্ধ থাকবে। যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। আমরা বিসিবি, সরকার, গোয়েন্দা সংস্থা এবং সামরিক বাহিনীসহ যারা নিরাপত্তার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করবে, তাদের সবার সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা কিসের বিরুদ্ধে আছি, কী করতে হবে, কী করে এটা মোকাবেলা করা যায় সেটা বুঝতে পেরেছি। সেজন্য আমরা সন্তুষ্ট।’ এরপর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেছিলেন, ‘নিরাপত্তা নিয়ে কোন শঙ্কা নেই। নিরাপত্তা শতভাগ, তবে নিশ্চয়তা বলতে কোন কথা নেই। পৃথিবীতে কোন জায়গা এখন নিরাপদ না, কেউ বলতেও পারবে না আমার এখানে কিছু হবে না। অনুর্ধ ১৯ বিশ্বকাপটি পুরোপুরি নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য হবে। তবে নিশ্চিত করে বলতে পারি, খেলোয়াড়রা, দলের প্রতিনিধিরা ও যারা খেলা দেখতে আসবে তাদের নিরাপত্তা দেয়া হবে। এটাই আমাদের চ্যালেঞ্জ।’ সেই চ্যালেঞ্জে পাস মার্কই মিলেছে। সুন্দর, সুষ্ঠুভাবেই শেষ হয়েছে যুব বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপের আমেজ আরও বেড়ে গেছে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ অর্জন পাওয়ায়। এ পর্যন্ত ১১ বার যুব বিশ্বকাপ হয়েছে। বাংলাদেশ যুব দল এর আগে কখনই সেমিফাইনালে খেলতে পারেনি। এবার খেলেছে। বিশ্বকাপের মতো আসরে বাংলাদেশের কোন খেলাতেই যে সাফল্য মিলেনি, তা বাংলাদেশ যুব ক্রিকেট দল করে দেখিয়েছে। ফাইনালে ওঠার আশা ছিল। চ্যাম্পিয়ন হওয়ারও স্বপ্ন ছিল। কিন্তু সেমিফাইনালে হেরে ফাইনালে ওঠা ও শিরোপা জেতার স্বপ্ন ধূলিস্মাত হয়ে যায়। এরপরও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে যে তৃতীয় হয়েছে বাংলাদেশ, সেটি সর্বোচ্চ অর্জন। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ পঞ্চম হয়েছিল। সেটিই এ বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত সেরা অর্জন ছিল। এবার মিরাজবাহিনী সেই অর্জনকেও ছাপিয়ে গেছে। চ্যালেঞ্জে জিতেছে। মিরাজদের এ সাফল্যে দলগত প্রাপ্তি মিলেছে। আর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সাংগঠনিক চ্যালেঞ্জে জেতার প্রাপ্তিও যুক্ত হয়ে গেছে। এখন আর ক্রিকেটে বাংলাদেশ নিরাপদ নয়, তা বলার অবকাশ কোন দেশেরই, কোন দলেরই থাকল না। বাংলাদেশ তাই সাংগঠনিকভাবে গর্ব করতে পারে। ১৯৯৮ সালে মিনি বিশ্বকাপ (চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি), ২০১১ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও ২০১৪ সালের টি২০ বিশ্বকাপ সফলভাবে আয়োজনের পর এবার যুব বিশ্বকাপও সফলভাবেই আয়োজন করল বাংলাদেশ। চ্যালেঞ্জ জিতল।
×