ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আনন্দের মাঝে শোকের খবর

মহিলা হ্যান্ডবলের ফাইনালে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

মহিলা হ্যান্ডবলের ফাইনালে বাংলাদেশ

হুমায়ুন সম্রাট ॥ ভারতের গুয়াহাটি ও শিলংয়ে চলমান এসএ গেমসে বাংলাদেশ মহিলা হ্যান্ডবল দল জিতেই চলেছে। গতকাল বরিবার গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত সেমিফাইনালে বাংলাদেশের মেয়েরা ৩৩-২৮ গোলে নেপালকে হারিয়ে ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। দলের মধ্যে যখন বয়ে যাচ্ছে জয়ের আনন্দ স্রোত। তখন দলের অন্যতম খেলোয়াড় গোলকিপার শিলা রায় শুনতে পারলেন ভীষণ এক কষ্টের খবর। মুহূর্ত্বের মধ্যে জয়ের আনন্দ মুছে গিয়ে চোখ গড়িয়ে ঝরতে শুরু“অঝোরে কষ্টের নোনা জল। শিলা জানতে পারলেন তার মা মনি রায় হঠাৎ হার্ট এ্যাটাকে মারা গেছেন। কালীবাড়ি, নতুন শহর, মাদারীপুর থেকে এমন দুঃসংবাদ পান গুয়াহাটিতে থাকা শিলা। গেমস শেষ করে দলের সঙ্গে দেশে ফেরা আর হলো না মেয়েটির। ভারতের ডাউকি চেকপোস্টে বাস্কেটবল খেলোয়াড়দের সঙ্গে একমাত্র মেয়ে হ্যান্ডবল খেলোয়াড়কে দেখে একটু কেমন জানি লাগে। মেয়েটি খুব হতাশ হয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অপেক্ষার প্রহর গুনছে কখন সে পৌঁছাতে পারবে তার মায়ের কাছে। কখন দেখবে মায়ের সুন্দর মুখ শেষবারের মতো। তখনও চোখ ছলছল। জানতে চাইলাম। আপনি এদের সঙ্গে? কেমন যেন দেখাচ্ছে, আপনি কি অসুস্থ? ভাঙ্গা গলায় খুব কষ্ট করে উত্তর দিলেন শিলা। বললেন গত ১২ তারিখে হঠাৎ করে তার মা মনি রায় (৫৫) মারা গেছেন। এর বেশি কিছু বলতে তার খুব কষ্ট হচ্ছিল। তাই আর কোন ধরনের কথা বলা ঠিক হবে না ভেবে তার সঙ্গে কথা আর না বলে সঙ্গে থাকা অন্যদের কাছে জানা গেল শিলাকে নাকি বিমানে দেশে পাঠানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু বিমান সময় মতো পাওয়া না যাওয়াতে তাকে পাঠানো হয়েছে বাস্কেটবল টিমের সঙ্গে! প্রশ্ন গুয়াহাটিতে বাংলাদেশ হ্যান্ডবল দলের সঙ্গে পুরুষ ও মহিলা অনেক অপ্রয়োজনীয় লোককে দেখা গেছে। তাহলে নিজ দলের একজন খেলোয়াড়কে বিপদের সময় কেন হ্যান্ডবল দলের কেউ সঙ্গে করে দেশে তার মাদারীপুরে নিয়ে গেল না। নাকি ওর সঙ্গে আসলে আর জীবনে ভারত ঘুরা হতো না কখনও? মা হারা শিলা কান্না করতে করতে বর্ডার পার হয়ে বাস্কেটবল কোচের সঙ্গে মাদারীপুরের উদ্দেশে রওনা হয়। তার আগে ওপারেই কারও সঙ্গে ফোনে ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় জোর করে কান্না করতে করতে বলতে শোনা গেল- মা’র তো তেমন বয়স হয়নি? তাহলে অসময়ে কেন এভাবে চলে যাবে? আমি মানতে পারছি না। আসলে আমরা বাবা-মা’র মৃত্যু সংবাদ কখনই মেনে নিতে পারি না। তবু বাস্তবতা মানতে হয়। হ্যান্ডবল খেলোয়াড় শিলার এমন বিপদের সময় নিজ দলের কেউ তার সঙ্গে তার মাকে দেখার জন্য দেশে ফেরার সময় আসল না। দলের খেলোয়াড়ের বিপদে তার সঙ্গে ফেডারেশনের কেউ নেই! এই কষ্টের অভিজ্ঞা কি শিলা কখনও ভুলতে পারবে?
×