ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অনাবিল ভালবাসা -শামীম হাসান

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

অনাবিল ভালবাসা   -শামীম হাসান

প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাস এলেই চারদিকে ভালবাসার সুবাতাস বইতে শুরু করে। বিশ্বময় শুরু হয়ে যায় মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের ভালবাসা বাণিজ্য। আর ১৪ তারিখে যেন ভালবাসার বিস্ফোরণ ঘটে। শুরু হয় মহোৎসব। কারণ এই মাসের ১৪ তারিখ যে ভালবাসা দিবস বা ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’। অনেক অনেক বছর পূর্বে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস নামক এক প্রার্থীকে ভালবাসার অপরাধে মৃত্যুদ- দেয়া হয়। সেদিনটি ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি। এই ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখতেই প্রতিবছর পালিত হয় ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’। ভালবাসার জন্য জীবন দান বলেই এই দিনটি বিশ্ব ভালবাসা দিবস। ভালবাসা দিবসটি এখন আর শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সকল বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, ছেলেমেয়ে, বৃদ্ধ-শিশু নির্বিশেষে সবার মাঝে ছড়িয়ে গেছে। ভালবাসা দিবসের মূল প্রতিপাদ্য হলো ভালবাসা, তা সে প্রেমের ভালবাসাই হোক বা অন্য কোন ভালবাসাই হোক। বিষয়টি আমরা শুধুই ‘ভালবাসা’ হিসেবে দেখতে চাই। তাই তো আমরা ভালবাসা ছড়িয়ে দিতে চাই সবার মাঝে। কিন্তু আমরা ভুলে যাই সেই স্থানটির কথা, সেই মানুষগুলোর কথা, যেখানে ভালবাসার জন্ম হয়, ভালবাসা পরিপূর্ণতা লাভ করে। সেই স্থানটির নাম হচ্ছে পরিবার। আমাদের সর্বাগ্রে যে ভালবাসা প্রয়োজন, তা হচ্ছেÑ পরিবারের প্রতি ভালবাসা। পরিবারের ভালবাসা না থাকলে বাইরের ভালবাসায় ডুবে থাকলেও তা কখনও পরিপূর্ণতা পাবে না। প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে কথার ফুলঝুড়ি, আবেগ-অভিব্যক্তি, উপহার আদান-প্রদান ইত্যাদির মাধ্যমে ভালবাসা প্রকাশিত হয়। কিন্তু পরিবারের প্রতি ভালবাসা প্রকাশিত হয় কাজের মাধ্যমে, দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে। পরিবারের প্রতি ভালবাসায় থাকে আদর-স্নেহ, মায়া-মমতা, সম্মান-শ্রদ্ধা, সহমর্মিতায়। এমনকি মায়ের বকুনি আর বাবার শাসনের মাধ্যমেও ভালবাসা প্রকাশিত হয়। আমরা সবাই কমবেশি পরিবারের জন্য কাজ করি। পরিবারের দায়িত্ব পালন করি। কিন্তু অনেকেই জানি না কোন কাজটি বা কিভাবে দায়িত্ব পালন করলে ভালবাসা সৃষ্টি হয়। ভালবাসা বৃদ্ধি পায়। পারিবারিক বন্ধন অটুট হয়। সেই বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে। পরিবারের একজনের দুঃখ বা সমস্যাকে সকলের সমস্যা মনে করুন। বিপদে সকলে তার পাশে দাঁড়ান। সমস্যা সমাধানের সম্মিলিত ব্যবস্থা নিন। তেমনি সুখের মুহূর্তগুলো সবাই একসঙ্গে উপভোগ করুন। উৎসবের দিনগুলো একসঙ্গে উদ্যাপন করুন। এতে সুখ অনেকগুণ বেড়ে যাবে। ‘সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে।’ এ প্রবাদটিতে একদিকে যেমন নারীর প্রশংসা করা হয়েছে তেমনি অন্যদিকে তার ওপর দায় চাপানোর প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়েছে। পুরুষের সহযোগিতা না পেলে রমণীর গুণ প্রস্ফুটিত হয় না। তাই তো কবি বলেছেন, ‘এ বিশ্বের যা কিছু সুন্দর কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ রমণীদের সহযোগিতা করতে হবে। স্ত্রীকে বন্ধু ভাবুন। তাকে ঘরের প্রাণ হিসাবে বিবেচনা করুন। স্ত্রীর ভাল কাজ, সংসারে তার অবদান ও কৃতিত্বের প্রশংসা করুন। স্ত্রীর প্রতি বিশ্বস্ত থাকুন। শুধু দায়িত্ব পালনে নয় আচার-আচরণের মাধ্যমে ভালবাসার কথা প্রকাশ করুন। অফিসে বা কাজে যাবার সময় স্ত্রীকে বলে যান এবং ফিরেই তার খোঁজ করুন। কারণে-অকারণে স্ত্রীর বাপের বাড়ির কোন বিষয়ে তাকে খোটা দেয়া থেকে বিরত থাকুন। অপরদিকে স্ত্রীকে মনে রাখতে শুধু স্বামীর খেদমত করলে হবে না। স্বামীর ওপর অধিকার শুধু তার একার নয়। বাবা-মা, ভাই-বোনসহ আরও আপনজনেরও তার ওপর অধিকার আছে, দাবি আছে। স্বামীকে একা পেতে চাইলে সংসারে অশান্তি শুরু হবে। তাই তো পরিবারের সবার দিকে নজর দিতে হবে। হাদিস শরিফে ‘একজন স্ত্রী তার স্বামীর পরিজনদের এবং সন্তানদের তত্ত্বাবধানকারিনী।’ শ্বশুর-শাশুড়িকে নিজের বাবা-মার আসনে আসীন করলে শাশুড়িও তাকে মেয়ের জায়গায় স্থান দিতে বাধ্য থাকবেন। ননদকে বোন ভাবলে সেও আপন ভাববে। শ্বশুরবাড়ির লোকজনেরও ভুললে চলবে নাÑ বউ শ্বশুরবাড়ির সেবিকা বা চাকরানী নয়। বিশেষ করে নতুন অবস্থায় তাকে বেশি করে সহযোগিতা করতে হবে। মনে রাখতে হবে স্বামীর বাড়ি তার জন্য নতুন পরিবেশ। সে তার আপনজন, চেনা জগৎ ছেড়ে এই নতুন জগতে এসেছে। তার কিছু ভুলক্রটি হতেই পারে। সেটাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে হবে। তাকে দায়িত্ববান হওয়ার সময় দিতে হবে। বউয়ের সঙ্গে নিজ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল না হলে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় ছেলে। সবার কাছে ছেলেটাই খারাপ হয়ে যায়। মা ভাবেন বিয়ে করে ছেলে পর হয়ে গেল, আর বউ ভাবে বিয়ের পর এখনও মায়ের আঁচলের তলে আছে। ছেলের এই অবস্থা বিরূপ প্রভাব ফেলে সংসারে। বিশেষ করে ছেলে যদি পরিবারের প্রধান কর্তা ব্যক্তি বা একমাত্র উপার্জনক্ষম হয়। এতে সংসারে অশান্তি বিরাজ করে। ঘুড়ি আকাশের যত ওপরই উঠুক না কেন, লাটাই কিন্তু মাটিতেই থাকে। তেমনি আমরা যে যাই হই না কেন, অন্যের কাছ থেকে যত শ্রদ্ধা-ভালবাসা পাই না কেন, আমাদের মূল শক্তি কিন্তু থাকে এই পরিবারেই। পরকে ভালবাস সমস্যা নেই, কিন্তু ঘরকে পর করে পরকে আপন করায় কোন কৃতিত্ব নেই। আপনার সমস্ত প্রাপ্তি বা সুখের সঙ্গে যদি পরিবার না থাকে তবে সে সুখের মূল্য কোথায়? সমাজের শান্তিশৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা, অগ্রগতি ইত্যাদি অনেকাংশে নির্ভর করে পরিবারের শান্তি, পারিবারিক সুস্থতা ও দৃঢ়তার ওপর। যদি পারিবারিক জীবন অসুস্থ ও অশান্তিপূর্ণ হয়, যদি পরিবারে ভাঙ্গন ও বিপর্যয় দেখা দেয়, তবে সমাজে নানা অশান্তি সৃষ্টি হয়। ফলে সুখী, সুন্দর, পরিবার ও পারিবারিক জীবন সুষ্ঠু সমাজের জন্য একান্ত অপরিহার্য। ভালবাসা সুখ আনে আর সুখে আনে সমৃদ্ধি। আসুন আমরা সবাই পরিবারকে ভালবাসি। অতঃপর ভালবাসা দিবসের ভালবাসায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ইথার তরঙ্গে ভাসিয়ে দেই সবার জন্য ভালবাসা। বিশ্ববাসীর জন্য ভালবাসা। ছবি : আরিফ আহমেদ মডেল : নাদিয়া ও নাঈম
×