ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চুয়াডাঙ্গায় ব্যাহত হচ্ছে লেখাপড়া

৭ প্রাইমারি স্কুলে দেড়যুগ ধরে পুলিশ ক্যাম্প

প্রকাশিত: ০৭:১৩, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

৭ প্রাইমারি স্কুলে দেড়যুগ ধরে পুলিশ ক্যাম্প

রাজীব হাসান কচি, চুয়াডাঙ্গা ॥ সাতটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেড়যুগ ধরে রয়েছে পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্প। এতে ব্যাহত হচ্ছে এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। ভবন ও বিদ্যালয় চত্বর পুলিশের দখলে থাকায় শিশু শিক্ষার্থীদের সমাবেশ করতে হয় বিদ্যালয়ের বাইরের গাছতলায়। ক্লাসরুম সঙ্কটের কারণে এসব বিদ্যালয়ে ডাবল শিফট করে ক্লাস নিতে হয়। একই আঙিনায় দুটি অফিস থাকায় শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রীদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। কবে বিদ্যালয়গুলো থেকে ক্যাম্প সরিয়ে নেয়া হবে জানা নেই স্কুল কর্তৃপক্ষের। তবে পুলিশ বলেছে, অচিরেই ক্যাম্পগুলো নিজস্ব বিল্ডিংয়ে চলে যাবে। এক সময়ের রক্তাক্ত জনপদ খ্যাত চুয়াডাঙ্গায় সন্ত্রাস দমনে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ১৯৯৮ সালে জেলার চার উপজেলায় পর্যায়ক্রমে ৩১টি পুলিশ ক্যাম্প গড়ে তোলেন। ১৪টি স্থায়ী ক্যাম্পের পাশাপাশি ১৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। ইতোমধ্যে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ১০টি ক্যাম্প নিজস্ব জায়গায় স্থানান্তর করা হয়েছে। বাকি সাতটি ক্যাম্প রয়েছে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ক্যাম্পগুলো হলো- সদর উপজেলার শম্ভুনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়, দামুড়হুদার গয়েশপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, দলিয়ারপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছুটিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুলালনগর প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং আলমডাঙ্গা উপজেলার ওসমানপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুর্লভপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়। ক্যাম্প থাকার কারণে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।শম্ভুনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রোকসানা পারভীন বলেন, শ্রেণী সঙ্কটের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরা অধিকাংশ সময় খালি গায়ে ঘোরাফেরা করে। এটা আমাদের দেখতে খারাপ লাগে। এছাড়া পঞ্চম শ্রেণীতে অনেক বড় বড় মেয়ে রয়েছে, তাদের সামনে উন্মুক্ত স্থানে গোসল করে। বার বার বলা সত্ত্বেও তারা গোসল করার জায়গাটি ঘিরছে না। আমার মতো যারা নারী শিক্ষিকা রয়েছেন তাদেরও বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে বিদ্যালয়গুলোতে পুলিশ ক্যাম্প করা হয়েছে। স্কুলের বেঞ্চগুলো পুলিশরা তাদের প্রয়োজনে ব্যবহার করছে। ফলে রয়েছে বেঞ্চ সঙ্কট, যার কারণে ডাবল শিফটে ক্লাস নিতে হচ্ছে। বাথরুমের সঙ্কট তো রয়েছেই। এছাড়া পুলিশ সদস্যরা বারান্দায় বসে টিভি দেখে। এতে বাচ্চারা ক্লাসে মনোসংযোগ হারিয়ে ফেলে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি হাসিবুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ে তিনটি রুম পুলিশ ক্যাম্পের দখলে থাকায় রয়েছে শ্রেণী সঙ্কট। যে কারণে প্রাক-প্রাথমিক (শিশু শ্রেণীর) ক্লাস ও প্রথম শ্রেণীর ক্লাস একই কক্ষে নিতে হয়। এতে উভয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় মনোযোগ বিঘিœত হয়। ক্যাম্পটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হলে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসবে। পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান বলেন, জেলায় ১৭টি অস্থায়ী ক্যাম্প রয়েছে। সরকারীভাবে বরাদ্দ না পাওয়ায় নতুন ভবন নির্মাণ করা যাচ্ছে না। তারপরও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ১০টি ক্যাম্প নিজস্ব জায়গায় স্থানান্তর করা হয়েছে। বাকি সাতটি ক্যাম্প স্থানান্তর করার জন্য আমরা চেষ্টা করছি।
×