ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ডাইনি’ শিশুদের বাঁচাতে ড্যানিশ নারীর মহানুভবতা

প্রকাশিত: ১৯:৫২, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ডাইনি’ শিশুদের বাঁচাতে ড্যানিশ নারীর মহানুভবতা

অনলাইন ডেস্ক॥ ডাইনি বা খারাপ আত্মা ভর করেছে, কালো জাদুর চর্চা করছে—এ ধরনের অপবাদ দিয়ে শিশু নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে আফ্রিকা মহাদেশের বেশ কিছু অংশে। এ ধরনের অপবাদে নির্যাতিত হওয়ার ক্ষেত্রে অনাথ, পথশিশু ও প্রতিবন্ধীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে রয়েছে। সম্প্রতি নাইজেরিয়ায় হোপ নামে দুই বছরের একটি শিশুকে তারা বাবা-মা জাদুকরের অপবাদ দিয়ে রাস্তায় ফেলে দেয়। দিনের পর দিন খেতে দেওয়া হয়নি হোপকে। হোপ একটা উদাহরণ। এরকম অনেক হোপের জীবন এখন অন্ধকারে। যুক্তরাজ্যের ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকার এক খবরে বলা হয়েছে, প্রায় আট মাস আগে শিশুটির মধ্যে জাদুকরি ক্ষমতা আছে দাবি করে পরিবারের সদস্যরা তাকে রাস্তায় ফেলে যায়। পথচারীদের ফেলে যাওয়া খাবার খেয়েই শিশুটি এত দিন কোনো রকম বেঁচে ছিল। সম্প্রতি আফ্রিকান চিলড্রেনস এইড এডুকেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট নামক একটি দাতব্য সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা লোভেনের নজরে পড়ে শিশুটি। পরে তিনি শিশুটিকে পানি পান করান ও একটি কম্বলে মুড়ে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে রক্তশূন্যতায় ভোগা শিশুটির দেহে রক্ত দেওয়া হয়। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শেষে শিশুটির অবস্থা এখন স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানিয়েছেন লোভেন। তিনি শিশুটির নাম দিয়েছেন হোপ। অনলাইনে হোপের জন্য সাহায্যের আবেদন করার দুই তিনের ১০ লাখ ডলার অনুদান পাওয়া গেছে। এই অর্থ দিয়ে হোপের চিকিৎসা ব্যয় মেটানোর পাশাপাশি নির্যাতিত শিশুদের জন্য একটি হাসপাতাল করার ঘোষণা দিয়েছেন লোভেন। নিজের ফেসবুক পেজে লোভেন বলেন, ‘হাজার হাজার শিশুকে এখানে ডাইনি বা জাদুকরের অপবাদ দেওয়া হয়। আমরা নির্যাতিত শিশু, মৃত শিশু ও আতঙ্কিত শিশুদের দেখেছি।’ ২০১০ সালে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ডাইনি বা কালো জাদুকর হিসেবে আখ্যা দেওয়া শিশুদের আগুনে ফেলে দেওয়া, মারধর এবং হত্যার মতো শাস্তি দেওয়া হয়। গবেষকেরা বলছেন, একটি শিশু ডাইনি বা শয়তান জাদুকর হতে পারে—ওই অঞ্চলে এমন বিশ্বাসের প্রচলন অপেক্ষাকৃত নতুন। ১০-২০ বছর আগেও সাধারণত নারী ও বৃদ্ধদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ আনা হতো। ইউনিসেফ বলছে, এ ধরনের অভিযোগ এনে অসহায় শিশুদের নির্যাতন করার হার বাড়ার একটি কারণ নগরায়ণ। পাশাপাশি যুদ্ধ ও সংঘাতের কারণে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় অসহায় শিশুরা এভাবে নিগৃহীত হচ্ছে। শিশুদের লালনপালনের খরচ বেড়ে যাওয়া এ ক্ষেত্রে একটি বড় কারণ হিসেবে কাজ করছে। সংস্থার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ডাকিনিবিদ্যার এই বিশ্বাসের বিরুদ্ধে খুব বেশি কিছু করা তাদের পক্ষে সম্ভব না।
×