ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সারা দেশে গঠন হচ্ছে গবর্নমেন্ট এ্যান্ড কন্ট্রাক্টর ফোরাম

সরকারী ক্রয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:০১, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

সরকারী ক্রয়ে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ সরকারী কেনাকাটায় বদলে যাচ্ছে পুরনো দৃষ্টিভঙ্গি। পারস্পারিক বিপরীতমূখীতা বাদ দিয়ে ক্রয়ের মান বৃদ্ধির জন্য সরকার ও টেন্ডারারের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে সারা দেশে গঠন করা হচ্ছে গবর্নমেন্ট এ্যান্ড কন্ট্রাক্টর ফোরাম বা ক্রয় সংলাপ ফোরাম। ইতোমধ্যেই ২৩টি জেলায় গঠন করা হয়েছে এই ফোরাম। সরকারী ক্রয়ের ক্ষেত্রে এটি একটি নতুন আইডিয়া এবং এর মাধ্যমে সরকারী ক্রয় প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ক্রয়কারী সংস্থা এবং ঠিকাদারদের মাঝে সরকারী ক্রয় বিষয়ে পারস্পরিক ধারণা, অভিজ্ঞতা ও মতবিনিময়ের মধ্যে যেকোন সমস্যা সমাধানের পথ তৈরি হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের মহাপরিচালক ফারুক হোসেন এ বিষয়ে জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের যে উন্নয়ন কার্যক্রম তা সরকার একা করতে পারবে না। এখানে টেন্ডারার লাগবেই। কারণ সরকার একা কোন কাজ করে না। সুতরাং এই দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে হবে না যে টেন্ডারাররা ব্যবসায়ী আর সরকার কাজ দিচ্ছে। কোন ভুলত্রুটি হলে আবার শাস্তি দেয়া হচ্ছে। এজন্য উভয়ের মধ্যে একটি চুক্তি থাকলে উভয়ের অধিকার ও দায় সংরক্ষিত হবে। পাশাপাশি কাজও বাস্তবায়ন সহজ হবে। ইউরোপে তো টেন্ডারার বলে না তারা বলে ইকোনমিক অপারেটর। অর্থাৎ অর্থনীতির চালিকা শক্তি। আমরাও এজন্য একটি সুসম্পর্কের মাধ্যমে চুক্তি বাস্তবায়ন করতে চাই। ফলে ফোরাম গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সিপিটিইউ সূত্র জানায়, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রিফর্ম প্রজেক্ট-২ (পিপিআরপি-২) এর আওতায় সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) বাস্তবায়ন, পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি), পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সেন্টার ফর কমিউনিকেশন প্রোগ্রাম (বিসিসিপি) এর সহায়তায় ইলেকট্রনিক্স গবর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) বিষয়ে সচেতনতা ও যোগাযোগ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। সিপিটিইউ বলছে, সরকারী ক্রয় প্রক্রিয়ায় ক্রয়কারী ও টেন্ডারার সমান গুরুত্বপূর্ণ। যথাসময়ে ও সফলভাবে চুক্তি সম্পাদন করার জন্য উভয় পক্ষের মধ্যে একটি আস্থার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা জরুরী। কারণ চুক্তিতে দু-পক্ষেরই অধিকার ও দায়িত্ব বিদ্যমান। চুক্তির শর্তের সীমানা অক্ষুণœœ রেখে ক্রয়কারী ও টেন্ডারারের মধ্যে সু-সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে পারলে চুক্তির সফল বাস্তবায়ন সহজতর হবে। সে লক্ষ্যে সিপিটিইউ দেশের সকল জেলায় ক্রয়কারী ও টেন্ডারারের জন্য ক্রয় সংলাপ ফোরাম গঠনে সহায়তা করছে। সংশ্লিষ্ট জেলার ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানসমূহ ও টেন্ডারারগণই এ ফোরামের সদস্য। এটি কার্যকর হলে সরকারী ক্রয় কার্যক্রম আরও বেশি গতিশীল হবে। সম্পর্ক উন্নয়নের মধ্যদিয়ে উভয় পক্ষের অধিকার ও দায় পূরণ নিশ্চিত হবে। সামাজিক সচেতনতা ও যোগাযোগ কার্যক্রমের আওতায় সরকারী ক্রয়কারী ও ঠিকাদারদের নিয়ে জেলা পর্যায়ে ক্রয় সংলাপ ফোরাম গঠনের কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৩টি জেলায় গঠন হলেও পর্যায়ক্রমে সব জেলায় এ কমিটি গঠন করা হবে। এখন পর্যন্ত যেসব জেলায় এ ফোরাম গঠন করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে, জামালপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর, বগুড়া, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, রাজশাহী, চাঁপাই, নওগা, জয়পুরহাট, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, চাঁদপুর ও কুমিল্লা। ফোরাম গঠনের বিষয়ে বলা হয়েছে বর্তমানে ই-টেন্ডারিং চলমান চারটি টার্গেট এজেন্সি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর, সড়ক ও জনপথ অধিদফতর, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড, অন্যান্য ক্রয়কারী সংস্থা এবং স্থানীয় টেন্ডারারদের সমন্বয়ে এই গবর্নমেন্ট এন্ড টেন্ডারার ফোরাম গঠিত হচ্ছে। জেলা পর্যায়ে সব ক্রয়কারী সংস্থা ও ঠিকাদাররা এই ফোরামের সদস্য থাকবেন। ফোরাম গঠনের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে এই ফোরামের প্রথম সভাটি বিসিসিপি এর সহযোগিতায় আয়োজিত হবে। সভায় সবার মতামতের ভিত্তিতে ফোরামের জন্য আহব্বায়ক কমিটি গঠিত হবে। প্রাথমিকভাবে ১১ থেকে ১৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি করা হচ্ছে। এর মধ্যে সভাপতি এক জন সংশ্লিষ্ট টার্গেট এজেন্সী থেকে, সহ-সভাপতি মোট দুই জন ক্রয়কারী সংস্থা থেকে এক জন, টেন্ডারারদের মধ্যে এক জন, সদস্য সচিব হবেন ঠিকাদারদের মধ্য থেকে এবং সদস্য হবেন মোট ৭ জন। এর মধ্যে ক্রয়কারী সংস্থা থেকে ৩ জন ও টেন্ডারার থেকে ৪ জন। পরবর্তী সভায় সবার সম্মতিতে কমিটির পরিবর্তন ও সংযোজন করা যাবে। বিসিসিপি ফোরামের সদস্যদের প্রয়োজনীয় সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক উপকরণ এবং সরকারী ক্রয় বিষয়ক তথ্য প্রদান করবে। কমিটির দায়িত্ব সম্পকে বলা হয়েছে, প্রতিটি ফোরাম নিজেদের জন্য একটি কার্য প্রানালী তৈরি করবে। তিন মাস পরপর ফোরামের নির্বাহী কমিটির পক্ষে ফোরামের সদস্যদের নিয়ে দ্বিপাক্ষিক সভা করবেন এবং পরবর্তী সভার তারিখ, স্থান, সময় এবং আলোচনার এজেন্ডা ফোরামের আহব্বায়ক ও সদস্যসচিব আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করবেন। নির্বাহী কমিটির পক্ষে সভাপতি ও সদস্যসচিব মিলিত সিদ্ধান্ত নিয়ে আমন্ত্রণ পত্র তৈরি করবেন এবং সকল সদস্যকে অবহিত করবেন। এজন্ডা অনুযায়ী আলোচনার মাধ্যমে সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় উদ্ভূত বিভিন্ন অস্পষ্টতা নিরসন ও অন্যান্য সমস্যার সমাধান করবেন। ই-জিপি সংক্রান্ত ধারণা আদান-প্রদানের ব্যবস্থা করতে পারেন। সভার এজেন্ডাতে ই-জিপির প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিগণ অন্যান্যদের প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে পারেন। সভার কোন বিশেষ সিদ্ধান্ত বা বিশেষ কোন প্রশ্ন, অস্পষ্টতা বা পরামর্শের প্রয়োজন হলে ফোরামের পক্ষ থেকে নির্বাহী কমিটি তা সিপিটিইউকে জানাতে পারেন। ই-জিপি সংক্রান্ত স্থানীয় পর্যায়ে সাকসেস স্টোরি সিপিটিইউ ও বিসিসিপিকে জানাতে পারেন। প্রতিসভা শেষে সভার মিনিটস এবং ছবি টার্গেট এজেন্সির প্রধান কার্যালয় এবং সিপিটিইউতে প্রেরণ করবেন।
×