ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিজেদের পছন্দের লোক নিয়োগের আবদার

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে কর্মচারী ইউনিয়ন নেতাদের তুলকালাম

প্রকাশিত: ০৫:২২, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে কর্মচারী ইউনিয়ন নেতাদের তুলকালাম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিজেদের পছন্দের লোকদের নিয়োগের আবদার তুলে এবার বোর্ডজুড়ে তুলকালাম কা- ঘটিয়েছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মচারী ইউনিয়নের সেই নেতারা। কর্মচারী নিয়োগে অনিয়মের আপত্তি করা ও গণমাধ্যমে তথ্য দেয়ার অভিযোগ এনে মঙ্গলবার কর্মচারী ইউনিয়নের কয়েক নেতার নেতৃত্বে কর্মচারীদের একটি গ্রুপ সকাল থেকেই বোর্ডে প্রেষণে কর্মরত উর্ধতন কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে। এরপর বোর্ড প্রাঙ্গণে মিছিল, সচিবের কক্ষের দরোজায় লাথি মারা ও উপ-কলেজ পরিদর্শককে লাঞ্ছিত করার ঘটনাও ঘটিয়েছেন। এ নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যসহ অন্য কর্মকর্তারা। তারা বোর্ড চেয়ারম্যানের কাছে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এ ঘটনার বিচার দাবি করেছেন। এর আগে সম্প্রতি দৈনিক জনকণ্ঠসহ কয়েকটি পত্রিকায় ঢাকা বোর্ডে কর্মচারী নেতাদের অবৈধ নিয়োগ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। জানা গেছে, কর্মচারী নেতাদের আত্মীয় স্বজনকে নিয়োগ দেয়ার বিষয় নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন বোর্ডের ১৫১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। তারা বলছেন, এই নিয়োগে টাকা লেনদেন হয়েছে। নিয়োগের পর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে একে জায়েজ করার চেষ্টাও হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেয়া অভিযোগে বলা হয়, কিছুদিন আগে বিভিন্ন পদে ১০ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। এর মধ্যে কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লোকমান মুন্সির আপন তিন ভাই রয়েছেন। তারা হলেন, জুলহাস মুন্সি, ফজলুল হক মুন্সি ও জসিম মুন্সি। সভাপতি হুমায়ূন কবিরেরও তিন জন ভাগ্নে আছেন তালিকায়। এরা হলেন, আসিফ আহমেদ, ওবায়েদুল হক পলাশ ও নজরুল ইসলাম। তালিকায় আছে সহ-সভাপতি মঞ্জুর আলী, জায়েদ হোসেন, মহিউদ্দিন মুহীতের পছন্দের লোকজন। আবেদনটি আমলে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সংশ্লিষ্ট শাখাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। এর পর মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক-১ অধিশাখার উপসচিব মহিবুর রহমান শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানকে নোটিস করেন। এতে নিয়োগ সংক্রান্ত পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি, তথ্য-উপাত্ত জরুরী ভিত্তিতে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়। সংবাদ প্রকাশের পরই প্রথমেই চলমান নিয়োগ বাতিলের উদ্যোগ গ্রহণ করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এরপর বিধি অনুসারে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কর্মচারী নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আবারও নিজেদের লোক নিয়োগ দিতে বোর্ড চেয়ারম্যানসহ কর্মকর্তাদের চাপ এমনকি হুমকি দিতে শুরু করেন নেতারা। বিষয়টি পত্রিকায় প্রকাশের পর কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা বোর্ডে প্রেষণে কর্মরত কর্মকর্তাদের ওপর ক্ষুব্ধ হন। সংবাদপত্রে তথ্য সরবরাহের অভিযোগ তুলে বোর্ড সচিব শাহেদুল খবির চৌধুরী, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. শ্রীকান্ত কুমার চন্দকে অবরুদ্ধ করে রাখেন ও তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। সকাল থেকে কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি হুমায়ুন কবির ও সাধারণ সম্পাদক লোকমান মুন্সীর নেতৃত্বে এক শ্রেণীর কর্মচারী তাদের পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দেয়ার দাবিতে বোর্ড প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করতে থাকেন। কর্মকর্তাদের তারা অবরুদ্ধ করে রাখেন। তারা ‘বোর্ড সচিবের দুই গালে/ জুতা মারো তালে তালে’ সেøাগান দেন। এ সময় গণমাধ্যমের বিরুদ্ধেও বিষোদগার করেন তারা। এক পর্যায়ে ইউনিয়নের নেতা এবং কলেজ পরিদর্শন শাখার অফিস সহকারী মহিউদ্দিন ও মাধ্যমিক পরীক্ষা শাখার উচ্চমান সহকারী মোকসেদ আলীর নেতৃত্বে ৫/৬ জন কর্মচারীর একটি দল বোর্ডের ৫ তলায় সচিব শাহেদুল খবির চৌধুরীর রুমের সামনে জড়ো হন ও দরোজায় লাথি দিতে থাকেন। তারা সচিবের বদলি দাবি করেন। পরে তারা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের রুমের সামনে গিয়ে অশ্লীল গালাগাল করেন। কর্মচারীরা বলেন, এই কর্মকর্তারা অনেক বছর এখানে আছেন। এরাই সাংবাদিকদের তথ্য দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করেন। বোর্ড প্রাঙ্গণে সভাপতি হুমায়ূন কবীরের নেতৃত্বে কর্মচারীরা বিক্ষোভ করছিলেন ও সচিবের বিরুদ্ধে সেøাগান দিচ্ছিলেন। বোর্ডের উপ-কলেজ পরিদর্শক ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সাবেক সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মš§থ রঞ্জন বাড়ৈ এ সময় অফিসে ঢুকছিলেন। সচিব ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সেøাগান শুনে তিনি ইউনিয়নের সভাপতিকে ডেকে জানতে চান, হুমায়ূন এসব কী হচ্ছে? এর জবাবে সভাপতি নিজেই তার দিকে তেড়ে যান। বলেন, কি হইছে তা আপনি জানতে চাওয়ার কে? এ সময় তাদের মধ্যে বাদানুবাদ হয়। কর্মচারীদের কয়েকজন তাকে ধাক্কা দেন এবং টেনে আরেক দিকে নিয়ে যান। মš§থ রঞ্জন বাড়ৈ জনকণ্ঠকে বলছিলেন, আমি অফিসে ঢুকছিলাম। সচিবের বিরুদ্ধে সেøাগান শুনে আমি ইউনিয়নের সভাপতিকে ভদ্রভাবেই বলেছি, হুমায়ূন এসব কী হচ্ছে? কথা থাকলে আলোচনা কর। আমার কথা শুনে সভাপতি ক্ষেপে গিয়ে বলেন, কি হইছে তা আপনি জানতে চাওয়ার কে? এরপর তিনি আমার দিকে তেড়ে আসেন। লাঠি থাকলে পেটাত এমন অবস্থা। এদিকে কর্মকর্তাকে লাঞ্ছনার খবর পেয়ে কর্মচারীদের অপর একটি গ্রুপ সেখানে ছুটে যায়। তারা ইউনিয়নের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সমর্থকদের ধাওয়া দিয়ে বোর্ড প্রাঙ্গণ থেকে বের করে দেয়। মš§থ রঞ্জন বাড়ৈকে লাঞ্ছনার প্রতিবাদে ঢাকা বোর্ডে কর্মরত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ১২ জন কর্মকর্তা একযোগে চেয়ারম্যানের কক্ষে গিয়ে বিচার দাবি করেন। তারা চেয়ারম্যানকে সাফ জানিয়ে দেন, তারা বর্তমান পরিস্থিতিতে নিয়োগের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারী কর্মচারীদের বিচার করতে হবে। চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, উপ-কলেজ পরিদর্শকের ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর ইউনিয়নের নেতাদেরও বলেছি শান্ত থাকতে। তিনি বলেন, কর্মকর্তারা আর নিয়োগের দায়িত্ব পালন করতে ইচ্ছুক নন বলে আমাকে জানিয়েছেন। তবে কর্মকর্তারা এমনকি সাধারণ কর্মচারীরাও চেয়ারম্যানের নমনীয় অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা অভিযোগ তুলেছেন, শীঘ্রই তিনি অবসরে যাবেন, তাই এই সময়ে কর্মচারী নেতাদের সঙ্গে অনেকটা আপোস করেই থাকতে চান।
×