ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব-দ্বীপ প্রকাশনের ৩ জন গ্রেফতার ॥ ৭ দিনের রিমান্ডে

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ব-দ্বীপ প্রকাশনের ৩ জন গ্রেফতার ॥ ৭ দিনের রিমান্ডে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ব-দ্বীপ প্রকাশনের প্রকাশক ও ‘ইসলাম বিতর্ক’ নামের বইয়ের সম্পাদক শামসুজ্জোহা মানিক, মুদ্রাকর ফকির তসলিম উদ্দিন কাজল ও বিপণন কর্মকর্তা শামসুল আলমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। তাদের রাজনৈতিক পরিচয়সহ সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যেই একুশে বইমেলায় স্টলটি বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা বিশেষ কোন উদ্দেশ্যে নিয়ে ইসলাম ও মহানবীকে (সা) নিয়ে কটূক্তি করে লেখা বই প্রকাশ করেছিল কিনা সে বিষয়ে গভীর তদন্ত চলছে। মঙ্গলবার দুপুরে শাহবাগ মডেল থানায় ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার আবদুল বাতেন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করায় সোমবারই বইমেলায় স্টলটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে স্টল থেকে জব্দ করা হয়েছে ছাপাকৃত ৬টি বই। পরে প্রকাশনা সংস্থাটির নীলক্ষেত ও কাঁটাবন এলাকায় ছাপাখানা থেকে আরও ৭৫ কপি বই জব্দ করা হয়। সোমবার রাতেই তথ্যপ্রযুক্তি আইনে শাহবাগ মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বইটি ছাপা ও প্রচারণার অভিযোগে শাহবাগ, কাঁটাবন ও নীলক্ষেত এলাকা থেকে ওই তিন জনকে সোমবার রাতেই গ্রেফতার করা হয়। তাদের তথ্যপ্রযুক্তি আইনে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। বইটি প্রকাশ্যের ক্ষেত্রে গ্রেফতারকৃতদের বিশেষ কোন উদ্দেশ্য ছিল কিনা তা জানার চেষ্টা চলছে। এজন্য গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে ঢাকার সিএমএম আদালতে পাঠানো হয়। শাহবাগ মডেল থানার ওসি আবু বক্কর সিদ্দিক জনকণ্ঠকে জানান, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে প্রকাশক ও সম্পাদক শামসুজ্জোহা মানিককে ৫ দিনের, মুদ্রাকর ফকির তসলিম উদ্দিন কাজলকে ২ দিনের এবং বিপণন কর্মকর্তা শামসুল আলমকে এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তাদের রাজনৈতিক পরিচয়সহ সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। তিনি আরও জানান, বইটির অনলাইন সংস্করণ আছে। বইটিতে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন লেখকের লেখা একত্রিত করে ছাপিয়েছে প্রকাশনা সংস্থাটি। ২০১০ সালের নবেম্বরে বইটি প্রথম প্রকাশ হয়। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে বইটির বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বইটির বিতর্কিত বিষয় নিয়ে নানা আলোচনা চলমান থাকায় পুলিশ বিষয়টি জানতে পারে। বইটি প্রকাশের পেছনে বিশেষ কোন উদ্দেশ্য আছে কিনা সে বিষয়ে গভীর তদন্ত চলছে। এছাড়া গ্রেফতারকৃতদের রাজনৈতিক পরিচয় জানাও জরুরী। নির্মূল কমিটির ক্ষোভ ॥ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে ‘বদ্বীপ প্রকাশন’-এর বই জব্দ এবং স্টল বন্ধ করে লেখক ও প্রকাশকদের গ্রেফতার করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’। গ্রন্থমেলায় মৌলবাদের মতাদর্শ ধারণকৃত লেখকদের বই অবাধে বিক্রি হচ্ছে অভিযোগ এনে সংগঠনের নেতারা বলেন, ‘বাংলা একাডেমির বইমেলায় জামায়াত-হেফাজতের অনুসারী মৌলবাদী কলম সন্ত্রাসীদের লেখা অবাধে বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে ও গণপরিবহনে আদালতে দ-িত গণহত্যাকারী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও তার অনুসারীদের সিডি বাজানো হচ্ছে। পুলিশ কোথাও এসবের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এমন সংবাদ আমরা গণমাধ্যমে দেখিনি।’ বিবেকহীন এমন সিদ্ধান্তে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নেতারা। মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পুলিশ ফেসবুক-এর অভিযোগের ভিত্তিতে একুশের বইমেলায় এই অভিযান চালিয়েছে, যা দেশের প্রচলিত আইন এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংক্রান্ত ৩৯ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন।’ সংগঠনের কয়েক ডজন নেতার স্বাক্ষর করা এই বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘কোন গ্রন্থে যদি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা’র মতো কোন বিষয় থাকে তবে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি আদালতে যেতে পারেন। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হয়েছে কি হয়নিÑবিষয়টি আদালতের বিচার্য বিষয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলা একাডেমির বইমেলার নিয়ম অনুযায়ী ‘ব-দ্বীপ প্রকাশন’ যদি বন্ধ করে দেয়া হয় সেক্ষেত্রে জামায়াত-হেফাজতের অনুসারী মৌলবাদী কলমসন্ত্রাসীদের বই কিভাবে মেলায় বিক্রি হয় এর জবাব বইমেলা কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে। ব-দ্বীপ প্রকাশনের কোন প্রকাশনায় যদি আপত্তিকর ও ক্ষতিকর কোন বিষয়বস্তু থাকে তার বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে। মামলায় অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগে কোন বই বাজেয়াফত বা লেখক-প্রকাশকের গ্রেফতার নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়, যা মুক্তচিন্তার প্রতিপক্ষ ওহাবিবাদী, মওদুদিবাদী মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের উৎসাহিত করবে।’ বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী, বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, লেখক সৈয়দ শামসুল হক, লেখক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, মুক্তিযুদ্ধের অধিনায়ক লে. কর্নেল (অব) আবু ওসমান চৌধুরী, অধ্যাপক অনুপম সেন, মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক কামাল লোহানী, অধ্যাপক অজয় রায়, ভাষাসৈনিক আবুল হোসেন, শিল্পী হাশেম খান, শিল্পী রফিকুন নবী, স্থপতি লেখক রবিউল হুসাইন, লেখক আনোয়ারা সৈয়দ হক, অধ্যাপিকা মাহফুজা খানম, লেখক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীসহ কয়েক ডজন নেতা স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে ব-দ্বীপের ওপর এ আক্রমণের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও নিন্দা জানানো হয়।
×