ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইপিজেড শ্রম আইন অনুমোদনে ১৬ শর্তই পূরণ

যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি ফিরে পাওয়ার সব বাধাই দূর হলো

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি ফিরে পাওয়ার সব বাধাই দূর হলো

এম শাহজাহান ॥ ইপিজেড শ্রম আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া এ্যাকশন প্লানের ১৬টি শর্ত পূরণ করতে সক্ষম হলো বাংলাদেশ। সব শর্ত পূরণ হওয়ায় এবার পণ্য রফতানিতে যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি পুনর্বহাল করবে বলে মনে করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বিশ্ব বাজারে রফতানিকৃত তৈরি পোশাকের দাম বাড়বে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এ শিল্পের উদ্যোক্তারা। বাংলাদেশ এ্যাকশন প্লানের একটি অন্যতম শর্ত ছিল শ্রম আইন সংশোধন এবং ইপিজেডগুলোতে ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ দেয়া। এতদিন বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আপত্তির মুখে ইপিজেডগুলোতে ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ দেয়া হয়নি। কিন্তু ইপিজেড আইন অনুমোদনের মাধ্যমে এবার সেই সুযোগ দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, কারখানায় শতভাগ শ্রম অধিকার বাস্তবায়নে ইপিজেড শ্রম আইন অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এর ফলে জিএসপি পুনর্বহাল, পোশাকের দাম বাড়াবে আন্তর্জাতিক ক্রেতাগোষ্ঠী। ইতোপূর্বে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া শর্তানুযায়ী ২শ’ কল-কারখানার পরিদর্শক নিয়োগ, চট্টগ্রাম ডেভেলপমেন্ট অথরিটি সিডিএ পুনর্গঠনের আওতায় ৩২ জন পরিদর্শকের পদ সৃষ্টি, ফায়ার সার্ভিস এ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স এফএসসিডি পুনর্গঠনের আওতায় ২৬০ জন পরিদর্শক নিয়োগ, শিল্প এলাকায় ৭টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন, সিআইএফ, সিডিএ ও এফএসসিডি নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রস্তাব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট পরিদর্শকের চলমান প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত, সোস্যাল কমপ্লায়েন্স ফোরামের অনুমোদিত চেকলিস্টের আলোকে সিআইএফ এবং এফএসসিডি তাদের কার্যক্রম পরিদর্শন, আইএলওর সহযোগিতায় ওয়েবসাইট ভিত্তিক ডাটাবেইজ তৈরি, সিআইএফ, এফএসসিডি ও ডিওএলে তাদের বিদ্যমান হটলাইনের কার্যকারিতা নিশ্চিত করা, সংশোধিত শ্রম আইনের একক মৌলিক ইংরেজী অনুবাদপ্রাপ্তি নিশ্চিত, রেবেকা গার্মেন্টের চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের পুনর্বহাল, আমিনুল হত্যার অগ্রগতি, বিসিডব্লিউএস এবং সেফের নিবন্ধন ও পুনর্নিবন্ধনের অগ্রগতি, ইপিজেড আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা, বিদ্যমান শ্রম আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করে শ্রমিক সংগঠনের স্বাধীনতা ও দরকষাকষির অধিকার নিশ্চিত করা ও বিদ্যমান শ্রম আইন ইপিজেডে প্রয়োগ করার মতো সব শর্ত পূরণ করেছে সরকার ও মালিকপক্ষ। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া এ্যাকশন প্লানের ১৬টি শর্ত পূরণ করেছে বাংলাদেশ। তাই জিএসপি পুনর্বহালে ইউএসটিআরের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত। তিনি বলেন, জিএসপি স্থগিত হওয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানি বেড়েছে। এছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশেও পোশাক রফতানির প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। বাংলাদেশের পোশাকের গুণগতমান বেড়েছে। এই বাস্তবতায় দ্রুত জিএসপি পুনর্বহাল করা উচিত। তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ রয়েছে। আশা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি পুনর্বহাল করবে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক সংগঠন এএফএল-সিআইও গত বছর ইউএসটিআরে অভিযোগ করে তাদের এ সংক্রান্ত চিঠি প্রদান করে। ওই চিঠিতে সেই সময় উল্লেখ করা হয়-বেপজাভুক্ত ইপিজেডসহ বাংলাদেশের কোন ইপিজেডেই শ্রম আইন কার্যকর হচ্ছে না। এএফএল-সিআইওর আন্তর্জাতিক বিভাগের পরিচালক স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, মজুরি নিয়ে আপত্তি ও বিতর্ক হলেও ইপিজেডে পুলিশ ফোর্স ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ক্ষেত্রে ঘটছে। যে কারণে পুলিশ ও র‌্যাবের গুলিতে নারী শ্রমিক পারভিন আক্তার মৃত্যুবরণ করেছে। চিঠিতে বলা হয়-বাংলাদেশের বিদ্যমান শ্রম আইন রফতানি প্র্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল ইপিজেডগুলোতে প্রযোজ্য নয়। ফলে সেখানে ট্রেড ইউনিয়ন করার কোন সুযোগ নেই। তবে ইপিজেড আইন অনুমোদনের মধ্য দিয়ে এবার সেখানে ট্রেড ইউনিয়নের আদলে সমিতি করার সুযোগ দেয়া হলো। এ প্রসঙ্গে পোশাক রফতানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি মোঃ সিদ্দিকুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, ইপিজেড আইন অনুমোদনের মধ্য দিয়ে ১৬টি শর্ত পূরণ করা হয়েছে। এবার জিএসপি পুনর্বহালসহ পোশাকের সঠিক দাম নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, বিজিএমইএর পক্ষ থেকে ক্রেতাগোষ্ঠীকে শীঘ্রই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানানো হবে। জানা গেছে, সরকারীভাবে প্রতিষ্ঠিত দেশের ৮টি রফতানি প্রক্রিয়া অঞ্চলগুলো (ইপিজেড) বেপজা নিয়ন্ত্রণ করছে। এর পাশাপাশি বেসরকারীভাবে বিদেশী বিনিয়োগে কোরিয়ান ইপিজেড এবং রাঙ্গুনিয়া ইপিজেড নামে আরও দুটি রফতানি প্রক্রিয়া অঞ্চল পরিচালিত হয়ে আসছে। মূলত বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ১৯৮০ সালে সংসদে পাস হয় ‘বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনস অথরিটি এ্যাক্ট’। এই এ্যাক্টে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ইপিজেড প্রতিষ্ঠা, উন্নয়ন ও পরিচালনার কর্তৃত্ব দেয়া হয় বেপজাকে। তখন থেকে দেশে ইপিজেড স্থাপনের মাধ্যমে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণসহ শিল্প প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পালন করছে বেপজা। সরকারী-বেসরকারীসহ দেশে এখন মোট ১০টি ইপিজেড রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ সরকার বেসরকারী খাতে রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য একটি আইনী কাঠামো দাঁড় করায়। এটি ‘বাংলাদেশ প্রাইভেট এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনস এ্যাক্ট, ১৯৯৬ (এ্যাক্ট নম্বর ১৯৯৬-এর ২০) নামে অধিক পরিচিত। এই এ্যাক্টের অধীনে পরিচালিত হয়ে আসছে কোরিয়ান ও রাঙ্গুনিয়া ইপিজেড। সূত্র মতে, শ্রম আইন বাস্তবায়নে বরাবরই ইপিজেডগুলো দক্ষতার পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছে। এখানে কর্মরত শ্রমিকদের, বেতন, ভাতা, ওভারটাইম এবং উৎসব বোনাস নিয়ে কখনোই তেমন কোন সমস্যা দেখা দেয়নি। এমনকি পোশাক রফতানি খাতে নতুন যে বেতন কাঠামো হয়েছে তাও শতভাগ বাস্তবায়ন করা হয়েছে ইপিজেডে। বাংলাদেশ ইপিজেড কর্তৃপক্ষের (বেপজা) আওতায় ইপিজেডের হাত ধরে বাড়ছে রফতানি আয়। ইপিজেডকে কেন্দ্র করে আসছে সরাসরী বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই)। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এসব ইপিজেড অবদান রাখছে বেকারত্ব দূরীকরণে। বেপজার হিসাবে দেশের সরকারী আটটি ইপিজেডে ৪১৯টি কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ২৩৭টি কারখানা বিদেশী মালিকানাধীন। ৬১টি কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যৌথ উদ্যোগে। আর ১২১টি কারখানা দেশীয় উদ্যোক্তাদের। এর বাইরে আরও ১৪৩টি কারখানা চালুর প্রক্রিয়ায় রয়েছে। বেপজা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রায় ৭৫ শতাংশ কারখানায় বিদেশীদের অংশীদারিত্ব থাকায় ইপিজেডে প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে বিশ্বমানের। কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়ানোর বিষয়টিও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ইপিজেডের শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশে পাঠানো হয়।
×