ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অপরের প্লট বিক্রির চেষ্টা

রাজউকে মহিলা প্রতারক পাকড়াও, পুলিশে সোপর্দ

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

রাজউকে মহিলা প্রতারক পাকড়াও, পুলিশে সোপর্দ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ছবি পরিবর্তনের মাধ্যমে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের প্রায় তিন কোটি টাকা মূল্যের একটি প্লট বিক্রির চেষ্টার অভিযোগে হালিমা কাউছার নামে এক মহিলা প্রতারককে পুলিশে দিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। মঙ্গলবার দুপুরে তাকে রাজউক ভবন থেকে আটক করে মতিঝিল থানায় সোপর্দ করা হয়। তিনি রাজউকের সাবেক কর্মচারী কাউছার আহমেদের স্ত্রী। হালিমা কাউছারের দাবি, প্লটটি তিনি নেয়ার চেষ্টা করেননি, রাজউকের পূর্বাচল শাখার কর্মচারী দীপক, ফারুক, মনজু ও অলিউল্লাহ ভুয়া এসব কাগজপত্র তৈরি করে তাকে নাসরীন রহমান সাজিয়ে প্লটটি বিক্রি করার চেষ্টা করেন। হালিমা কাউছার বলেন, আমার স্বামী কাউছার আহমেদ রাজউকে চাকরি করতেন। তিনি ওয়ান ইলেভেনের সময় চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। আমার স্বামী যে কক্ষে বসতেন তার পাশেই বসতেন দীপক, ফারুক, মনজু ও অলিউল্লাহ। স্বামীর সহকর্মী হিসেবে তাদের সঙ্গে আমার পরিচয়। আমার পরিচিত হিসেবে তাদের আমি পাঁচ লাখ টাকা দিই। কিন্তু তারা আমার টাকা ফেরত দেয়নি। আমাকে নাসরীন রহমান সাজিয়ে প্লটটি তারা বিক্রির চেষ্টা করেছে। আমি কিস্তির কোন টাকা দিইনি, তারাই আমার নাম করে কিস্তির টাকা জমা দিয়েছে। তারা এসব জালিয়াতি করেছে। আমি তাদের বিরুদ্ধে রাজউকে লিখিত অভিযোগও করেছি। তারা জালিয়াতি করে এখন আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউকের সদস্য (এস্টেট) মোঃ আব্দুল হাই বলেন, নাসরীন রহমান পূর্বাচল প্রকল্পে সাড়ে সাত কাঠার একটি প্লট পেয়েছেন। তিনি তিন কিস্তির টাকাও জমা করেছেন। হঠাৎ করে হালিমা কাউছার নামে এক মহিলা নিজেকে নাসরীন রহমান দাবি করে প্লটের চতুর্থ কিস্তির ৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা জমা দেন। তিনি প্লটের নথিপত্রে থাকা ছবি পুরাতন হয়েছে দাবি করে পরিবর্তনেরও আবেদন করেন। হালিমা কাউছার নিজেকে নাসরীন রহমান হিসেবে প্রমাণ করতে নাগরিকত্ব সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র ও তিন শ’ টাকার স্ট্যাম্প জমা দেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে প্লটের প্রকৃত মালিক নাসরীন রহমান তার প্লটটি জালিয়াতির মাধ্যমে বিক্রির চেষ্টা করা হচ্ছে অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে পূর্বাচল প্রকল্পের পরিচালক শেখ শাহীনুল ইসলাম দু’জনকে মুখোমুখি করেন। তখনই ধরা পড়ে হালিমা কাউছার জালিয়াতির মাধ্যমে প্লট বিক্রির চেষ্টা করেন। এরপর তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। আমরা ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করব। এ জালিয়াতির সঙ্গে রাজউকের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। নাসরীন রহমানের স্বামী ইমরান ইউনুছ বলেন, রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২২ নম্বর সেক্টরের ১২৩ নম্বর রোডে ১৮ নম্বর প্লটটি ২০০৪ সালে বরাদ্দ পান নাসরীন রহমান। প্লট বরাদ্দের পর তার স্ত্রী প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় কিস্তির টাকা জমা দিয়েছেন। কিছুদিন আগে ইমরান ইউনুছ চতুর্থ কিস্তির টাকা জমা দিতে গিয়ে জানতে পারেন প্লটের কিস্তি জমা দেয়া হয়েছে। কে বা কারা প্লটের কিস্তি দিয়েছেন তা যাচাই করতে গিয়ে দেখেন, রাজউকের সাবেক কর্মচারী কাউছার আহমেদের স্ত্রী হালিমা কাউছার নিজেকে নাসরীন রহমান দাবি করে চতুর্থ কিস্তির ৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা জমা দেন। টাকা জমা দেয়ার পর তিনি প্লট বরাদ্দের নথিতে থাকা নাসরীন রহমানের ফটোর স্থলে নিজের ফটো জমা নেয়ার আবেদন করেছেন। তিনিই নাসরীন রহমান- এমন দাবির সঙ্গে ভুয়া এনআইডি, নাগরিকত্বের সনদ এবং ৩০০ টাকার স্ট্যাম্প জমা দেন। তিনি আরও বলেন, হালিমা কাউছার নিজেকে নাসরীন রহমান প্রমাণ করতে ঢাকার ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার কার্যালয় থেকে দুটি নাগরিকত্ব সনদপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দিয়েছেন। প্লট বিক্রির টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদের হবে, এ কারণে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে তিনি উত্তরার একটি ব্যাংকে নাসরীন রহমান নামে এ্যাকাউন্ট খোলেন। বিষয়টি টের পেয়ে আমরা রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের পরিচালকের দফতরে আবেদন করি। এরপরই তিনি আমার স্ত্রী নাসরীন রহমান ও হালিমা কাউছারকে (কথিত নাসরীন রহমান) মুখোমুখি করেন।
×