ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;নুরউদ্দিন ম-লের জবানবন্দী

সাখাওয়াত নিজ হাতে চাঁদতুল্লা গাজীকে হত্যা করে

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

সাখাওয়াত নিজ হাতে চাঁদতুল্লা গাজীকে হত্যা করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে যশোরের সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা সাখাওয়াত হোসেনসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের তৃতীয় সাক্ষী মোঃ নুর উদ্দিন ম-ল তার জবানবন্দীতে বলেছেন, রাজাকার সাখাওয়াত নিজ হাতে চাঁদতুল্লা গাজীকে গুলি করে হত্যা করে। আমাকেও রাজাকাররা ধরে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। পরে আমি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কিছু করব না এই মুচলেকা দিলে আমাকে ছেড়ে দেয়। সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী তাকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য ২২ ফেব্রুয়ারি দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ প্রদান করেছেন। এ সময় প্রসিকিউটশন পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর জিয়াদ আল মালূম, প্রসিকিউটর রিজিয়া সুলতানা চমন, প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল। আর আসামি পক্ষে ছিলেন সাত্তার পালোয়ান ও আব্দুস শুকুর। প্রসিকিউশনের সাক্ষী ট্রাইব্যুনালে তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম মোঃ নুর উদ্দিন ম-ল। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৭৩ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম-চিংড়া, থানা-কেশবপুর, জেলা-যশোর। ১৯৭১ সালে আমি কৃষি কাজ করতাম এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। আমি দশম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল আনুমানিক ২৯ বছর। বর্তমানে আমি সাগরদাড়ি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে মাস্টার রোলে পিয়ন পোস্টে কাজ করি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আষাঢ় মাসের দিকে আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য সাগরদাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি চাঁদতুল্লা গাজির সঙ্গে ভারতে বনগাঁও এ যাই। সেখানে ইয়থ ক্যাম্পে ১৮ দিন প্রাথমিক ট্রেনিং নেই। ট্রেনিং শেষে ৮নং সেক্টরের অধীনে হাকিমপুরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। এরপর ১৯৭১ সালের ২৫ আশ্বিন আমার মা বাবাকে দেখার জন্য চাঁদতুল্লা গাজীসহ ভারত থেকে বাড়িতে আসি। সাক্ষী আরও বলেন, একাত্তরের ২৮ আশ্বিন সকাল আনুমানিক ৭টার দিকে রাজাকার ক্যাম্পের রাজাকার আসামি মুজিবুর রহমান, আকরাম হোসেন, আসামি আব্দুল খালেক, আসামি লুৎফর, বিল্লান, সাখাওয়াতসহ ১০-১২ জন রাজাকার আমাদের বাড়িতে এসে আমাকে ধরে ফেলে। এরপর পিঠ মোড়া বেঁধে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায়। আমাকে যে ক্যাম্পে আটক রাখা হয়েছিল সেখানে চাঁদতুল্লা গাজীকেও আটক করে রাখা হয়েছিল। রাজাকাররা আমাকে নির্যাতন করে জানতে চায় অস্ত্র কোথায়। সে দিনই বেলা ১টার দিকে চাঁদতুল্লা গাজীর ছোট ছেলে ফজলুর রহমান তার বাবার জন্য খাবার নিয়ে আসলে রাজাকার মশিয়ার খাবার কেড়ে নিয়ে ফেলে দেয়। ১৯৭১ সালের ১ কার্তিক ভোর আনুমানিক ৬টার সময় আসামি সাখাওয়াত হোসেনসহ তার সহযোগী আসামিরা ও রাজাকাররা চাঁদতুল্লা গাজীকে রাজাকার ক্যাম্প থেকে কপোতাক্ষ নদের পাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে রাজাকার সাখাওয়াত নিজ হাতে গুলি করে চাঁদতুল্লাকে হত্যা করে। আমাকেও রাজাকাররা ধরে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। পরে আমি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কিছু করব না এই মুচলেকা দিলে আমাকে ছেড়ে দেয়।
×