ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ৪ মার্চ ২০১৬

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ জয় বাংলা। বাংলার জয়। আরও একবার। এই মার্চে। স্বাধীনতার মাস। শত্রুরাষ্ট্র পাকিস্তান বধ। টাইগাররা এশিয়া কাপ টি টুয়েন্টির ফাইনালে। যে সে আনন্দ নয়। গোটা শহর উদ্বেলিত। আগে থেকেই উত্তেজনা টের পাওয়া যাচ্ছিল। পুরোটা দেখা গেল বুধবার। মিরপুর স্টেডিয়াম থেকে চোখ সরানো যাচ্ছিল না। খুব সৌভাগ্যবানরা মাঠে বসে খেলা দেখেছেন। বাকিরা টেলিভিশন সেটের সামনে। প্রথম বলটি থেকেই শক্তি সামর্থ্যরে বাংলাদেশ। দুর্বার মাশরাফি বাহিনী। ব্যাটে বলের লড়াইয়ে একবারও ক্লান্ত হয়নি। খেই হারায়নি। বরং নিজেদের খেলাটা খেলে গেছেন সবাই। ফলাফল- ৫ উইকেটে জয়! বিপুল বিজয় উদ্যাপন করা হয় রাতেই। বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকা পরিণত হয়েছিল উৎসবের নগরীতে। এখনও সেই রেশ। বৃহস্পতিবার সারাদিন শহরের অলিতে গলিতে এই এক আলোচনা- ক্রিকেট। এখন সামনে ভারত। বড়সরো প্রতিপক্ষ অবশ্যই। কিন্তু কে বড় আর কে ছোট- ভাবার সময় কোথায়? বাংলার বাঘ হা করে আছে। রবিবারের অপেক্ষা কেবল! হ্যাঁ, মাশরাফি ভক্তরা এভাবেই কথা বলছেন! শহরের যেখানেই কান পাতা যায়, এমন বিধ্বংসী উচ্চারণ। আনন্দ হাসিরাশির বাইরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ছবি এখন আলোচনায়। গোটা জাতিকে নতুন করে আবেগে ভাসাচ্ছে। স্থিরচিত্রটির দিকে যতবার চোখ যায়, ঝাপসা হয়ে ওঠে। রাতে মিরপুর স্টেডিয়ামে বসে পুরো খেলা দেখেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। সারা দেশের মানুষের যে আবেগ উত্তেজনা, প্রধানমন্ত্রী নিজের মধ্যে যেন ধারণ করেন। খেলা শেষে তাই শান্ত থাকতে পারেননি। মেয়ে পুতুল পাশেই ছিলেন। জড়িয়ে ধরেছেন। মাঠে উপস্থিত দর্শকের উদ্দেশে হাত নাড়িয়েছেন। এরই এক পর্যায়ে দৃশ্যমান হয়, বিশ্বের ক্ষমতাধর এবং সাহসী নারী প্রধানমন্ত্রীর চোখে জল! চোখ ভিজিয়ে কাঁদছেন তিনি! এক হাতে চশমা খুলে অন্য হাত দিয়ে কান্নার জল মুছছিলেন যখন, ক্যামেরাবন্দী হন। দুর্লভ মুহূর্তটি এর পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। অসংখ্য অগণিত শেয়ার। লাইক। কেউ ছবিটি ‘প্রোফাইল পিক’ করেছেন। কেউ ঠাঁই দিয়েছেন ‘কাভার পিকে।’ এভাবে বার বার নিউজফিডে ঘুরে ফিরে এসেছেন খেলা অন্তপ্রাণ শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার শহরের ক্রিকেট বিষয়ক আলোচনায়ও আলাদা গুরুত্ব পায় ওই ছবি। অনেককেই বলতে শোনা যায়, একটি খেলার মাঝে এত দেশাত্মবোধ থাকতে পারে তা শেখ হাসিনার ছবিটি না দেখলে বোঝা মুশকিল। এর আগে অমর একুশে গ্রন্থমেলা নিয়ে গোটা শহর মেতেছিল। ভাষার মাসের পুরোটাজুড়ে ছিল বই দেখা। বই কেনা। শেষ হলো সোমবার। একাডেমি চত্বর ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশ পর্যন্ত বিস্তৃত মেলায় প্রতিদিনই এসেছেন হাজার হাজার মানুষ। লেখক পাঠক প্রকাশকদের মিলনমেলা চলেছে মাসের শেষ দিন ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ঘুরে বেড়ানো, আড্ডা, হাসিরাশিÑ সবই ছিল বই কেন্দ্রিক। মেলায় নতুন বই এসেছে পাঁচ হাজারের অধিক। শুধু একাডেমির তথ্য কেন্দ্রে জমা পড়েছে ৪ হাজার ৪শ’ ৪৪টি নতুন বই। প্রতিদিনই নতুন আসা বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের আনুষ্ঠানিকতা ছিল। একাডেমি সূত্র জানায়, মেলার নজরুল মঞ্চ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মঞ্চে মোট ৫৩৫টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। মাসব্যাপী মেলায় কোটি কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। এটি সহজ অনুমান। তবে, ঠিক কত টাকার বই বিক্রি হয়েছে সেটা কোন সূত্র জানাতে রাজি হয়নি। একাডেমির দেয়া তথ্য মতে, মেলার সব প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মিলে ২৯তম দিন পর্যন্ত বিক্রি করেছে ৪০ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার বই। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর দেয়া এই তথ্য অবশ্য যাচাই করার কোন সুযোগ নেই। একাডেমি মনে করে, বিক্রির পরিমাণ আরও অনেক বেশি হবে। অবশ্য একাডেমির নিজস্ব বিক্রির হিসাবটি চূড়ান্ত। একাডেমির দেয়া তথ্য মতে, মেলার বিভিন্ন প্যাভিলিয়ন স্টল ও বিক্রয় কেন্দ্র থেকে ১ কোটি ৩৯ লাখ ৬৩ হাজার ৪শ’ ৫৮ টাকার বই বিক্রি হয়েছে। মেলা শেষ হলেও, এই আলোচনাগুলো এখন চলছে। চলছে আরও নানা হিসাব নিকাষ। বসন্ত শুরু হয়েছে আরও আগে। তবে, শহর ঢাকায় ঋতু পরিবর্তনের চিহ্ন সেভাবে দৃশ্যমান হয় না। ধীরে ধীরে চোখে পড়ছে। বৃহস্পতিবার কাওরান বাজার হয়ে আসার সময় একটি গাছের দিকে তাকিয়ে কী যে ভাল লাগল! ব্যস্ত ভিআইপি সড়ক। এর পাশেই মসজিদ। মসজিদের পাশে একটি বটগাছ। এতদিন গাছটি বেঁচেছিল প্রাণহীনের মতো। এত বিবর্ণ ছিল যে, মোটেও নজর কাড়েনি। বসন্ত এই গাছকে দিয়েছে নতুন পত্রপল্লব। খুঁটিয়ে দেখা গেল, সবকটি পাতা নতুন। রোদ পরে ঝিকমিক করছিল। এর আগে গত মঙ্গলবার মিরপুর বেড়িবাঁধে গিয়ে একবার থামতে হলো। কী সুন্দর স্বর্ণলতা! বিশাল এলাকা ওরা নিজেদের করে নিয়েছে। গ্রামে দেখা যায় বটে, এই শহরে এমন ছবি কম চোখে পরে। বসন্ত এই ছবি এঁকে দিয়ে যাচ্ছে। একটু খেয়াল করুন, আরও অনেক ছবি প্রকৃতিজুড়ে। বেশ লাগে দেখতে।
×