ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নির্মূল হোক এইডস

প্রকাশিত: ০৪:১২, ২০ মার্চ ২০১৬

নির্মূল হোক এইডস

এইচআইভি এইডস সম্পর্কে আশার বাণী শোনা গেছে ঢাকা ঘোষণায়। ২০৩০ সালের মধ্যে নির্মূল করা সম্ভব হবে প্রাণঘাতী এই ভয়াবহ ব্যাধি। বাংলাদেশ সরকার ও পার্টনারস ইন পপুলেশনের (পিপিডি) যৌথভাবে আয়োজিত এইচআইভি এইডস বিষয়ক তিন দিনব্যাপী এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন শেষ হয় সোমবার। এতে ৫৬টি দেশের প্রায় আড়াই হাজার প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। চিকিৎসক, গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা এইডস বিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ে চার শতাধিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। মূলত এটি ছিল ইন্টারন্যাশনাল কংগ্রেস অন এইডস ইন এশিয়া এ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক বা আইকাপের দ্বাদশ সম্মেলন। সেখানেই সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয় ঢাকা ঘোষণা। এর আগে বিশ্ব এইডস সম্মেলনে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী এইডস নির্মূলের যে প্রত্যয় ঘোষণা করা হয়েছিল, তাতে বাদ দেয়া হয়েছিল এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলকে। অথচ এই অঞ্চলের ৬৬টি দেশে পৃথিবীর ৭০ শতাংশ জনসংখ্যা বসবাস করে থাকে। সুতরাং সঙ্গত কারণেই এত বিপুল সংখ্যক জনগণকে বাদ দিয়ে এইডস নির্মূল করা সম্ভব নয়। এই প্রেক্ষপটে ঢাকা ঘোষণাটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহ। বাস্তবতা হলো, এইডস নির্মূলের চ্যালেঞ্জে সাফল্য লাভ করতে হলে সবাইকে একযোগে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। কয়েক বছর আগেও এইচআইভি এইডস ছিল একটি অজ্ঞাতপ্রায় ব্যাধি। বলা হয়ে থাকে, আফ্রিকার নীলরঙের এক বানর থেকে দুরারোগ্য এই ব্যাধিটির উৎপত্তি। ভাইরাসজনিত এই রোগ অতীব সংক্রামক এবং প্রধানত যৌন সংসর্গসহ নানা উপায়ে খুব দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। তবে বিশেষ করে আফ্রিকা, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ার কিয়দংশে এর প্রকোপ বেশি। প্রায় অবাধ যৌন সংসর্গ এবং অমিতাচার জীবনযাপন এই ব্যাধিটি ছড়িয়ে পড়ার জন্য দায়ী অনেকাংশে। এই রোগে একবার সংক্রমিত হলে মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা সহজেই ভেঙ্গে পড়ে। প্রচলিত কোন ওষুধ বা এ্যান্টিবায়োটিক এই রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর হয় না বললেই চলে। ফলে আক্রান্তের মৃত্যু অবধারিত। তদুপরি সংশ্লিষ্ট পরিবারটিরও একঘরে হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। রোগের ভয়াবহতা, সংক্রমণের হার এবং প্রতিকারের উপায় জানা না থাকায় খুব দ্রুতই এইচআইভি এইডস হন্তারক ব্যাধির তালিকায় টপ চার্টে উঠে যায়। তবে আশার কথা এই যে, উন্নত বিশ্বের গবেষণাগারে কোটি কোটি ডলার ব্যয়ে নিরন্তর গবেষণার মাধ্যমে এইডস প্রতিরোধের ভ্যাকসিন বা টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে। আক্রান্তদের জন্য কিছু কার্যকর এ্যান্টিবায়োটিকও তৈরি হচ্ছে বর্তমানে। এ বিষয়ে দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই যে, রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার চেয়ে প্রতিরোধ সর্বদাই উত্তম পন্থা। বাংলাদেশের পারিবারিক ও দাম্পত্য জীবন যথেষ্ট সুশৃঙ্খল। এখানে এইডস সংক্রমণের সম্ভাবনা খুব কম। তবু বিশ্বায়নের যুগে বিভিন্ন দেশে কর্মরত লাখ লাখ বাংলাদেশী শ্রমজীবী ও শিক্ষার্থীদের দু’চারজনের মাধ্যমে এ দেশে এইডসের সংক্রমণের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। সরকার তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অবশ্য যথেষ্ট সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। সীমিত সংখ্যক আক্রান্তের যথাযথ চিকিৎসাও চলছে। তবু আত্মপ্রসাদের কিছু নেই। সে অবস্থায় এইডসের বিরুদ্ধে নিরন্তর যুদ্ধ এবং জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবী থেকে এইডস নির্মূল হোক, এটাই সবার প্রত্যাশা।
×