ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগের আহ্বান

পাকিস্তানী ভাবধারা ও অপরাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসুন

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২০ মার্চ ২০১৬

পাকিস্তানী ভাবধারা ও অপরাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসুন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দলীয় কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানী ভাবধারা ও অপরাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে বিএনপি নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাকে নিশ্চিহ্ন করতে মতপার্থক্যের উর্ধে উঠে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, বিএনপিকে অতীতের ভুল রাজনীতি শুধরে আসার জন্যই সুন্দরভাবে কাউন্সিল করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। তবে তারা এ সুযোগের অপব্যবহার করলে কঠোরহস্তে তা দমন করা হবে। তবে তারা প্রশ্ন রাখেন- যারা বিকৃত-উন্মাদ রাজনীতির ধারক, একজন (খালেদা জিয়া) দেশে বসে এবং অন্যজন (তারেক রহমান) বিদেশে বসে; তাদের সম্মিলিত শক্তি দিয়ে বাংলার মানুষের কী হবে? তারা দেশকে কী দেবেন? শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-পরিষদ আয়োজিত ‘সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস মোকাবেলায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ’ শীর্ষক এক সেমিনারে অংশ নিয়ে তারা এ প্রশ্ন তোলেন। সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে দাওয়াত পাননি দাবি করে বলেন, দাওয়াত পাইনি বলে বিএনপির কাউন্সিলে যেতে পারিনি। প্রচার ও প্রকাশনা উপ-পরিষদের চেয়ারম্যান এবং প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের সভাপতিত্বে সেমিনারে অনুষ্ঠানে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশীদ। এতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ছাড়াও বক্তব্য রাখেনÑ সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির, বিএমএ মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ এম ইকবাল আর্সলান, ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। সেমিনারের শুরুতে বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলনের নামে আগুন সন্ত্রাসে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। সেমিনারে সৈয়দ আশরাফ সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় সব অসাম্প্রদায়িক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, অনেকেই আওয়ামী লীগ ও সরকারকে ডিফেন্ড করে। মনে হয় যেন এক ঢিলে দুই শত্রু মারার চেষ্টা করেন। কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এখানে কাউকে ছোট করা, রাজনৈতিকভাবে ঘায়েল করাÑ সেটি সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার অন্তরায় হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকার জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস মোকাবেলায় শতভাগ আন্তরিকতা ও জিরো টলারেন্স দেখিয়েছে। সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় যা যা পদক্ষেপ নেয়া দরকার ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে তা নিয়েছেন, ভবিষ্যতে আরও নেবেন। বর্তমান সরকার সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধেও অত্যন্ত সতর্ক ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি বলেন, আজ মধ্যপ্রাচ্যে এ অবস্থা কেন? এটা এক ধরনের সাম্প্রদায়িকতা। এর মূল উদ্যোক্তা সৌদি আরব। সৌদি আরব সুন্নীদের প্রেট্টোনাইজ না করলে ইরাকে যুদ্ধ হয় না, সিরিয়াতে এ অবস্থার সৃষ্টি হয় না। আর বাংলাদেশে শুধু ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িক তারাই না, তাদেরও পৃষ্ঠপোষক আছে। এরা চায় বাংলাদেশেও শিয়া-সুন্নী বা মুসলমান বা হিন্দুদের মধ্যে একটা বিভাজন হোক। এটা আমরা কোনমতেই গ্রহণ করতে পারি না। তিনি বলেন, তাদের সঙ্কীর্ণ ধর্মীয়গোষ্ঠীর কারণে সারাবিশ্ব আজ আতঙ্কিত। কেউ আজকে নিরাপদ নাই। তাই আমরা যে সন্ত্রাস মোকাবেলা করছি, সারাবিশ্বকে সেটিই মোকাবেলা করতে হবে। তবে আমরা চাইÑ সমগ্র অসাম্প্রদায়িক শক্তি আমাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হোন, শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করুন। তাহলে আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জয়লাভ করবই ইনশাআল্লাহ। কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, রাজনীতি মানুষের জন্য কিন্তু মানুষ ও সভ্যতা ধ্বংস করে বিএনপি কী পাবে? ইতোমধ্যে প্রমাণ হয়েছে বিএনপি নেত্রী ও তার কুপুত্র ব্যর্থ। এ দু’জনের সম্মিলনে যে পার্টি চলছে, একজন চেয়ারম্যান আরেকজন কো-চেয়ারম্যান। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। এরা মানুষকে কী দেবে? বিএনপি নেত্রী ও তার পুত্রকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, বিকৃত-উন্মাদ রাজনীতির ধারক একজন দেশে বসে, অন্যজন বিদেশে। তাদের সম্মিলিত শক্তি দ্বারা বাংলার মানুষের কী হবে? তারা দেশকে কী দেবেন? বিএনপির সম্মেলনে আগত কাউন্সিলরদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, তাদের মধ্যে সবাই অমানুষ, সেটা মনে করি না। আসলে ডাক্তার ভুল করলে একটা রোগী মারা যায়। আর রাজনৈতিক নেতা ভুল করলে হাজার নেতা মারা যায়। হিটলার এর বড় প্রমাণ। একই সঙ্গে লাদেন, আইএস এবং অন্যরা। এ অবস্থায় বিএনপির ওইখানে যারা আছেন, তাদের কাছে প্রশ্নÑ সম্মেলনে এ নেতৃত্বের হাত থেকে উনারা কী পাবেন? বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান চক্রান্ত করার জন্য লন্ডন থেকে কয়েকবার পাকিস্তান এসেছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেন, খালেদা জিয়া লেডি লাদেন। আর তার ছেলে (তারেক রহমান) দাউদ ইব্রাহিমের মতো একজন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীর সঙ্গে উঠাবসা করতে পারে। আমাদের কাছে তথ্য আছে তিনি কয়েকবার লন্ডন থেকে পাকিস্তান এসেছেন। তার কাজই হলো পাকিস্তানী ভাবধারা বাস্তবায়ন করা। কাজেই এদের কাছ থেকে কিছু আশা করা সম্ভব নয়। তবে কাউন্সিলের মাধ্যমে বিএনপি পাকিস্তানী ভাবধারার রাজনীতি থেকে সুস্থ রাজনৈতিক ধারায় ফিরে আসবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। কিন্তু তা না হলে আমাদের আবারও অবশ্যই দৃঢ় ও শক্তভাবে দমন করতে হবে। শাহরিয়ার কবির বলেন, ’৭৫-এর পর প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জামায়াতীদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এখনও প্রশাসনকে পুরোপুরি জামায়াতমুক্ত করা যায়নি। আর তৃণমূলের নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াতীরা কৌশলে আওয়ামী লীগের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে সাম্প্রদায়িকতা ও সহিংসতা চালাচ্ছে। এদের খুঁজে বের করে শাস্তি দিতে হবে। ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস প্রতিরোধ আইন প্রণয়নের আহ্বান জানিয়ে বলেন, এটি একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভব। সন্ত্রাস-নৃশংসতার শিকার শুধু ভিকটিমরাই তা নয়, আমাদের গোটা সমাজ ব্যবস্থার ওপরেই হয়েছে। তাই সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের প্রশ্নে জিরো টলারেন্স নিয়েই চলতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সন্ত্রাসের এখন বহুমাত্রিকতা দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক সন্ত্রাস এবং পেট্রোলবোমা ও আগুন বোমা সন্ত্রাসের পাশাপাশি সাইবার সন্ত্রাসও শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা সাইবার সন্ত্রাস। সরকারকে অনুরোধ করব, এটি আন্তর্জাতিক কোন ষড়যন্ত্রের অংশ কি-না, তা তদন্ত করে খুঁজে বের করুন।
×