ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

গানে আর কথামালায় দেবব্রত বিশ্বাসের জন্মবার্ষিকী উদ্্যাপন

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২০ মার্চ ২০১৬

গানে আর কথামালায় দেবব্রত বিশ্বাসের জন্মবার্ষিকী উদ্্যাপন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘সঙ্গীতশিল্পী দেবব্রত বিশ্বাসের ১০৪তম জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আমাকে সভাপতিত্ব করতে হবে এটা আমি গলধঃকরণ করতে পারিনি। এখানে সভাপতির কোন বক্তব্য নেই। প্রতি মুহূর্তে রবীন্দ্রসঙ্গীতে আমার আত্মা ধৈত হচ্ছে, তাঁর গান সেই কারণে শুনি। আমি এখনকার বাংলা গান কম শুনি। প্রায় শুনি না বললেই চলে, শুনতে পারি না, সে এপার বাংলার হোক আর ওপার বাংলার হোক। যারা গাইছে, তাদের কেউ কেউ ভাল গাইছে। দেবব্রত বিশ্বাস আমার পছন্দের একজন শিল্পী ছিলেন। তবে তাঁর সঙ্গীতজীবনের প্রতি অনেক অন্যায় করা হয়েছে। তাঁর রবীন্দ্রসঙ্গীতের সাথে এটা বাজানো যাবে না, ওটা বাজবে না, এভাবে গাইতে হবে, ওভাবে গাইতে হবে, এই সকল বাধা-নিষেধ আরোপ করা হয়েছিল। কিন্তু কারও কথা তিনি শোনেননি। তাঁর কণ্ঠ যদি রুদ্ধ হতো, তাহলে আমরা ভাবতাম কী হারালাম। প্রতিদিন রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনি সেই কানে, তার মধ্যে শিল্পী দেবব্রত বিশ্বাস উর্ধে। বার বার তাঁর গানের প্রতি নত হই’- সঙ্গীতশিল্পী দেবব্রত বিশ্বাসের ১০৪তম জন্মবর্ষিকীর অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণে এ কথা বলেন কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন সেমিনার হলে শনিবার বিকেলে নলেজ ট্রাস্ট আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে গান আর কথামালায় ভিন্ন এক আবহ তৈরি হয়। অনুষ্ঠানে দেবব্রত বিশ্বাস স্মারক বক্তৃতা করেন গোলাম মুরশিদ। শুরুতে দেবব্রত বিশ্বাসের জীবনালেখ্য পর্দায় দেখানো হয়। পরে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন নলেজ ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ ও দেবব্রত বিশ্বাস স্মরণ কমিটির সচিব বরুণ কান্তি চট্টোপাধ্যায়। সভাপতির বক্তব্যের পর স্মারক বক্তৃতায় গোলাম মুরশিদ বলেন, আমি আমার বক্তব্যের শিরোনাম রেখেছি ‘সৃষ্টিশীল শিল্পী দেবব্রত’। প্রখ্যাত এই শিল্পী নিরলস চর্চার মধ্য দিয়ে গায়ক হয়ে উঠেছিলেন। নিরন্তর গান নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেন। তিনি সুরের সঙ্গে কথার সমন্বয় ঘটানোর পরীক্ষায় নিজেকে ব্যাপৃত রাখতেন। তাঁর সবচেয়ে বড় গুণ ছিল শ্রোতাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন। গানের সুর ও তাল বজায় রেখে অভিনয় করতেন ও গানের ব্যাখ্যা দিতেন। তিনি গানের স্বরলিপি ভঙ্গ করেছেন বলা হয়, কিন্তু তিনি সব গানেই সমান স্বাধীনতা বজায় রাখতেন। এর পর শুরু হয় রবীন্দ্রসঙ্গীতের আসর। সঙ্গীত পরিবেশন করেনÑ দেবব্রত বিশ্বাসের ছাত্র ভারতের শিল্পী স্বপন গুপ্ত, বাংলাদেশের শিল্পী সাদি মহম্মদ, লাইসা আহমদ লিসা ও রেখা চক্রবর্তী। সমগ্র অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নলেজ ট্রাস্টের সদস্য সচিব বিধান চন্দ্র পাল। আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া স্মরণ ॥ ঢাকার স্থাপত্যবিষয়ক গ্রন্থ প্রণয়ন কমিটির আয়োজনে শনিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় প্রতœতত্ত্ববিদ আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া স্মরণানুষ্ঠান। বরেণ্য এই প্রতœতত্ত্ববিদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়েই শুরু হয় স্মরণানুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা। এর পর ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’ ও ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’ পর পর এই দুটি রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী ইশরাত জাহান কাঁকন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়ার জীবন ও কর্মের ওপর স্মৃতিচারণ করেনÑ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম খান, নাজমা খান মজলিশ, ঢাকার স্থাপত্যবিষয়ক গ্রন্থ প্রণয়ন কমিটির সম্পাদকম-লীর সদস্য মাওলানা নুরুদ্দিন ফতেহপুরী, সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু, ফটোসাংবাদিক পাভেল রহমান, মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসুদ, গবেষক সিলভানা কারোল্লা, ক্রীড়া সংগঠক কাজী আনিসুর রহমান, যাকারিয়াপুত্র মারুফ শমসের যাকারিয়া ও কন্যা মাসুমা খাতুন। স্মরণানুষ্ঠানের বক্তারা বলেন, আবুল কালাম মোহাম্মদ যাাকরিয়ার মতো সৎ, নির্লোভ, সদালাপী, বিনয়ী ও পরোপকারী মানুষ এই সমাজে দ্বিতীয় আরেকজন খুঁজে পাওয়া দুরূহ। পরিণত বয়সে তিনি মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পণ করলেও তার চলে যাওয়াতে ক্ষতি হয়েছে এ দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের। এই সময়টাতে তার প্রয়োজনীয়তা ছিল অনেক বেশি। তারা আরও বলেন, যাকারিয়ার মতো নিজেদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে সবাই যদি এভাবে এগিয়ে আসত তাহলে এ দেশ অনেক বেশি সমৃদ্ধ হতো। পিতার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে যাকারিয়াপুত্র মারুফ শমসের যাকারিয়া বলেন, বৃক্ষের যেমন ছায়া থাকে বাবা আমাদের জন্য ছিলেন তেমনই ছায়া। এ ধরনের মানুষগুলো এত ব্যস্ত থাকার কারণে পরিবারকে সময় দিতে পারেন না, কিন্তু আমার বাবা ছিলেন সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। বাবার কাছ থেকেই শিখেছি জীবনকে কিভাবে নিয়মের মধ্যে, শৃঙ্খলার মধ্যে আর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে হয়। এ দেশের বেশিরভাগ জেলার অধিকাংশ এলাকার বাড়ি আমার বাবার চেনা। ইতিহাসের সত্যটা তিনি তুলে ধরেছেন। তিনি সব সময় যুক্তিতে বিশ্বাসী ছিলেন, কোন গোঁড়ামিতে বিশ্বাস করতেন না। সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বেঁচে থাকলে ২০১৭ সালে তিনি শতবর্ষে পদার্পণ করতেন, কিন্তু এর আগেই তিনি চলে গেলেন। তার চলে যাওয়াটা পরিণত বয়সের। তিনি দীর্ঘজীবন পেলেও এই দেশ ও এই দেশের মানুষের জন্য তার প্রয়োজনীয়তা ছিল অনেক বেশি। এতটা পরিণত বয়সেও শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে তিনি ছিলেন তরুণের চেয়েও তরুণ। প্রতœতত্ত্ববিদের পাশাপাশি তিনি একজন ভাল ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়া সংগঠকও ছিলেন। কোনকিছু জানতে এবং জানতে তার কৌতূহল ছিল অফুরন্ত। নিজেকে তিনি নানাভাবে প্রকাশ করেছেন। আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া আমাদের জন্য স্মরণীয় ও অনুসরণীয়। তার স্মৃতি এবং কর্ম বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের সকলের। শুরু হলো ‘১৯৭১ ইমার্জেন্স অব এ নেশন’ প্রদর্শনী ॥ অগ্নিঝরা মার্চেই বাঙালীর স্বাধীনতা ও স্বাধীনতা আন্দোলনের বীজ বপিত হয়। ১৯৭১-এর মার্চেই বাঙালীর মুক্তির আন্দোলনের সূচনা হয়। দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধ ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাসহ নানা কারণে ইতিহাসের বিরাট একটা অংশজুড়ে আছে মার্চ। মহান স্বাধীনতার এই মাসকে কেন্দ্র করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে শুরু হলো ‘১৯৭১ ইমার্জেন্স অব এ নেশন’ শীর্ষক প্রদর্শনী। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, অপ্রকাশিত দুর্লভ ৯৩টি আলোকচিত্র, ২০ মিনিটের দুর্লভ প্রামাণ্যচিত্র ইত্যাদি দিয়ে সাজানো হয়েছে এই প্রদর্শনী। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে শনিবার বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালায় আট দিনের এই প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। উদ্বোধনী আয়োজনে বক্তৃতা করেনÑ প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মোঃ শহীদুল হক, প্রদর্শনীর কিউরেটর অমিতাভ দেউরি, মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার বজলুল হক, আরএমএম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী প্রমুখ। উদ্বোধন শেষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিতদের উপচেপড়া ভিড় নামে প্রদর্শনীস্থলে। স্বাধীনতার স্মৃতিবিজড়িত দুর্লভ আলোকচিত্রগুলো গভীর মনোযোগের সঙ্গে দেখতে গিয়ে অনেক দর্শনার্থীই এ সময় আবেগ সংবরণ করতে না পেরে চোখের জলের নদীতে কষ্টের বোঝাকে হালকা করার চেষ্টা করেন। হানাদারবাহিনীর নির্মমতা দাগ কেটে যায় প্রদর্শনীস্থলে আগত নতুন প্রজন্মের দর্শনার্থীদের মাঝে, যেন পাশের বাড়ির প্রতিবেশী কিংবা পরম আত্মীয়ই পাকি বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আলোকচিত্রের বীভৎসতায় ফুটে উঠেছে একাত্তরের আগের খ-িত বাংলাদেশের চিত্র। ২৬ মার্চ শেষ হবে আট দিনের এই প্রদর্শনী। অধ্যাপক মমতাজউদ্দীন আহমদের বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান ॥ নাট্যকার অধ্যাপক মমতাজউদ্দীন আহমদের পাঁচটি বই (জীবনকথা, নাটক ও উপন্যাস) প্রকাশ করেছে বিশ্বসাহিত্য ভবন। বইগুলোর প্রকাশনা ও এর ওপর আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় শিল্পকলা একাডেমির কনফারেন্সরুমে শনিবার সন্ধ্যায়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বইগুলোর প্রকাশক মোহাম্মদ তোফাজ্জ্বল হোসেন। উপস্থিত বক্তারা মমতাজউদ্দীনের বইয়ের ওপর বিশেষ আলোচনা করেন। ছয়জন পেলেন লেখিকা সংঘ সম্মাননা ॥ বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ সম্মাননা পেলেন দেশের ছয় বিশিষ্টজন। এরা হলেনÑ জুবাইদা গুলশান আরা, ড. নিয়াজ জামান, ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, সুলতানা রিজিয়া, আরমা দত্ত ও শিরিন বানু মিতিল। এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শনিবার জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। আয়োজক সংস্থার সভাপতি দিলারা মেসবাহ’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইত্তেফাকের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও পাক্ষিক অনন্যার সম্পাদক তাসমিমা হোসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক। বাংলা মা গ্রুপের আয়োজনে বৈশাখী মেলা শুরু হচ্ছে ১১ এপ্রিল ॥ ‘গ্রীন ঢাকা ক্লিন ঢাকা’ সেøাগানে ১১ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে বৈশাখী মেলা। রাজধানীর ধানম-ির কলাবাগান মাঠে সাত দিনব্যাপী এ মেলার আয়োজন করেছে বাংলা মা গ্রুপ। মেলার প্রস্তুতি নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে উপস্থিত ছিলেনÑ বাংলা মা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুপুর ঘোষ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সঞ্জয় ঘোষ, প্রকল্প পরিচালক শেখ মাহ্ফুজ, উপদেষ্টা আহমেদ কামরুল মোরশেদ, ভাস্কর রাশা প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মেলায় ৬৪ স্টলে থাকবে দেশের ৬৪ জেলার লোকজ ঐতিহ্য। থাকবে কবিগান, পটগান, পুঁথিপাঠ, কাওয়ালী, নাচ, যাদু, কৌতুকসহ নানা আয়োজন। মেলার উদ্বোধনী দিনে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের পাঁচ শিল্পী ও পাঁচজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা জানানো হবে। ১২ এপ্রিল থাকবে আদিবাসী সম্প্রদায়ের বৈশাখী ও বিজু উৎসব। মেলা চলবে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত। মেলা মঞ্চে প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে শুরু হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সংবাদ সম্মেলনে আয়োজকরা বলেন, সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা এই বাংলাদেশ আমাদের গর্ব। মেলায় আমাদের ইতিহাস ও ঐহিত্যকে তুলে ধরতে চাই। সংবাদ সম্মেলন শেষে ঘোড়ার গাড়ি ও ব্যান্ড প্রমোটার দিয়ে মেলার প্রচার শুরু হয়। পঞ্চগড়ে দু’দিনব্যাপী ভিতরগড় উৎসব শুরু ॥ স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড় থেকে জানান, পঞ্চগড় সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের ভিতরগড় দুর্গ নগরীতে প্রথমবারের মতো দুদিনের ‘ভিতরগড় উৎসব’ শুরু হয়েছে। শনিবার দুর্গ নগরী এলাকায় মহারাজার দীঘির পাড় সংলগ্ন এলাকায় ‘ভিতরগড় দিবস’ পালন উপলক্ষে এ উৎসব চলছে। দুপুরে সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও বেলুন উড়িয়ে ভিতরগড় দিবসসহ উৎসবের উদ্বোধন করেন। পরে তিনি প্রতœতাত্ত্বিক চিত্র প্রদর্শনীসহ নানা স্টল ও দীঘির পাড়ে প্রতœতাত্ত্বিক সাইট ঘুরে দেখেন। পরে সেখানে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ভিতরগড় প্রমোশনাল সোসাইটি এসব কর্মসূচীর আয়োজন করেছে। আলোচনা সভায় আসাদুজ্জামান নুর বলেন, ভিতরগড় দুর্গ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো খনন ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হবে। ওইসব জায়গায় সাধারণ মানুষকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণও দেয়া হবে। তিনি বলেন, স্থানীয় মানুষের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়েই প্রতœতাত্ত্বিক উৎখননের কাজ করা হবে। জবরদস্তি করে কোন কাজ করা হবে না। কারণ রাষ্ট্র সবার। তিনি আরও বলেন, সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়েই ভিতরগড়ের প্রাচীন প্রতœতাত্ত্বিক ইতিহাস বিশ্বের সামনে তুলে ধরা হবে। এটি বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পাবে। একদিন এ প্রাচীন দুর্গ নগরী আলোকিত হবে। সভায় দুর্গ নগরীর প্রতœতাত্ত্বিক গবেষক ড. শাহনাজ হুসনে জাহান লীনা বলেন, পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় এমন সর্ববৃহৎ দুর্গ নগরী আর একটিও নাই। এটি ৬ থেকে ১৩ শতক পর্যন্ত একটি স্বাধীন রাজ্য ছিল। ছিল বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগ। দুর্গ নগরীটি চারটি বেস্টনী প্রাচীর দিয়ে সুরক্ষিত ছিল। ভেতরের দুইটি প্রাচীর সুদৃশ্য ইটের ও অন্য দুইটি মাটির তৈরি। তিনি দুর্গ নগরী রক্ষায় সুপরিকল্পিতভাবে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। উৎসবের আয়োজক ভিতরগড় প্রমোশনাল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট সোহেল এ চৌধুরী ও মহাসচিব হাবিবুল্লাহ এন করিম প্রতিবছরের মার্চ মাসের প্রথম শনিবার ‘ভিতরগড় দিবস’ পালনের ঘোষণা দেন। সভায় সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন ও নাজমুল হক প্রধান, সংস্কৃতি সচিব আক্তারি মমতাজ, জেলা প্রশাসক অমল কৃষ্ণ ম-ল, পুলিশ সুপার গিয়াস উদ্দিন আহ্মদ, উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত সম্রাট ও ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান নুরু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের বাংলাদেশের (ইউল্যাব) অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুসনে জাহান লীনা ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ভিতরগড়ে প্রতœতাত্ত্বিক খনন কাজ শুরু করেন। বর্তমানে প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের তত্ত্বাধানে উৎখনন কাজ চলছে। এদিকে উৎসব উপলক্ষে প্রতœতাত্ত্বিক স্থাপনার চিত্র প্রদর্শনী, সত্যপীরের গান, লাঠি খেলা, নাগরদোলাসহ গ্রামীণ ঐতিহ্যের নানা আয়োজন করা হয়েছে।
×