ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে শেখ হাসিনা ;###;কাউন্সিল পিছিয়ে ১০ জুলাই

হাসিনাবিহীন নির্বাচনের নামে উনি হত্যার ষড়যন্ত্র করছেন কিনা কে জানে

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২১ মার্চ ২০১৬

হাসিনাবিহীন নির্বাচনের নামে উনি হত্যার ষড়যন্ত্র করছেন কিনা কে জানে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ‘হাসিনাবিহীন নির্বাচন’-এর নামে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া আরেকটি ২১ আগস্টের মতো তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছেন কী না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, হাসিনাবিহীন নির্বাচনের কথা বলে উনি (খালেদা জিয়া) আরও ষড়যন্ত্রের ঘোট পাকাচ্ছেন কী না? এছাড়া তাঁর সামনে আর কোন পথ নেই। উনি তো ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই বোঝেন না। আরেকটি ২১ আগস্টের মতো আবারও গ্রেনেড হামলা আমাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছেন কী না কে জানে। তবে রাখে আল্লাহ মারে কে। শকুনের দোয়ায় কখনও গরু মরে না। আল্লাহ যতদিন জীবন রেখেছেন, ততদিন দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য কাজ করে যাব। কোন ষড়যন্ত্রই আমাকে এ ব্যাপারে রূখতে পারবে না। রবিবার রাতে তাঁর সরকারী বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সভাপতির সূচনা বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শনিবার বিএনপির সম্মেলনে দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যেরও জবাব দেন। ‘ঢাকার বাইরে আন্দোলন সফল হয়েছে’- খালেদা জিয়ার এমন দাবির জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকার বাইরে আন্দোলনের নামে অনেক মানুষকে হত্যা করতে পেরেছেন, এটাই কী তাঁর বড় তৃপ্তি? ওই সময় ১৫-১৬টি জেলায় বিএনপি-জামায়াত জোট তা-ব চালিয়েছে। শত শত মানুষকে পুড়িয়ে মেরে এখন উনি তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন! আসলে এরা মানুষ নয়, মানুষ নামের অমানুষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের শুরুতেই প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুুর রহমানের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর স্মরণে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়। সভায় আগামী ২৮ মার্চ নির্ধারিত আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন পিছিয়ে আগামী ১০ জুলাই নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া আগামী ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে জন্ম শতবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনে দলের পক্ষ একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়। সিদ্ধান্ত হয়, এখন থেকেই বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে রাষ্ট্র ও দলগতভাবে বঙ্গবন্ধুর স্মরণে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করা হবে। এছাড়া জাতীয় সম্মেলন করতে বিভিন্ন উপ-কমিটিও গঠন করা হয়। সূচনা বক্তব্যে বিএনপির সম্মেলনে খালেদা জিয়ার ২০৩০ সালনাগাদ ভিশন ঘোষণা এবং মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার অঙ্গীকারের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন অনেকেই আমাদের নীতি ও ভিশন অনুসরণ করছে। তিনি বলেন, নির্বাচনে না এসে নির্বাচন বান্চালের নামে বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বিচারে দেশের মানুষকে হত্যা করেছে, দেশের সম্পদ বিনষ্ট করেছে। পরে আন্দোলনের নামে আবারও শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। ওই সময়ের বীভৎস্য দৃশ্য কল্পনাও করা যায় না। একজন জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা অতীতে কখনও দেশের মানুষ দেখেনি। এরা হত্যা, খুন, জঙ্গীবাদ ছাড়া আর কিছু বোঝে না। হাসিনাবিহীন নির্বাচন প্রসঙ্গে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আগের কিছু ঘটনা জাতির সামনে তুলে ধরেন। ওই হামলার আগেও বিএনপি নেত্রীসহ তাঁর দলের নেতারা কী ইঙ্গিত দিয়েছিলেন? ২১ আগস্ট ঘটনার আগে বিএনপি কয়েকজন নেতা প্রকাশ্য হুমকি দিলেন, ১৫ আগস্ট বাপ যে পথে গেছে আমাকেও সেই পথে যেতে হবে! এরপর বিএনপি নেত্রী (খালেদা জিয়া) বললেন, আমি প্রধানমন্ত্রী কেন কোনদিন বিরোধী দলের নেতাও হতে পারব না। আমার অস্তিত্ব থাকবে না এটা জেনেই উনি একথা বলেছিলেন। তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী এখন অন্য কোন পথ নেই। তাই হাসিনাবিহীন নির্বাচনের কথা বলে এখন উনি আবারও ঘোট পাকাচ্ছেন। আবারও আমাকে হত্যার মতো কোন ষড়যন্ত্র করছেন কি না কে জানে। কিন্তু আমি এসবে পরোয়া করি না। আল্লাহ যতদিন বেঁচে রাখবেন, ততদিন দেশের জনগণের জন্য কাজ করে যাব। আর দেশের জনগণের দোয়াও আমার সঙ্গে আছে। তাই শকুদের দোয়ায় কখনও গরু মরবে না। দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলেই কেবল দেশের উন্নয়ন হয়। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসলে দেশের উন্নয়ন করতে পারে না কেন? আমরা গত ৭ বছরে দেশের যে উন্নয়ন করেছি, গত ২১ বছরেও তারা পারেনি কেন? এসব বিষয়গুলো একটু বিচার করুন। সভার শুরুতে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংগঠনের চরম দুর্দিনে বিশেষ করে ওয়ান ইলেভেনের সময় শক্তহাতে হাল ধরেছিলেন জিল্লুর রহমান। উনি দলের হাল না ধরলে দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসত কি না সন্দেহ। পরিবেশবান্ধব ভবন নির্মাণ করুন ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জমির স্বল্পতা ও ভবিষ্যত জনসংখ্যার কথা মাথায় রেখে পরিবেশবান্ধব বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য স্থতিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের (আইএবি) নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ আহ্বান জানান। খবর বাসস’র। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্থাপত্য হলো একটি সভ্যতার মাপকাঠি। প্রাচীন সভ্যতাকে চেনা বা জানার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে স্থাপত্য শিল্প। আজকে আমরা যা কিছু নির্মাণ করছি, কয়েক শ’ বছর পর যদি এগুলো টিকে থাকে তাহলে এগুলো আমাদের সময়কে ধারণ করবে।’ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা যা কিছু নির্মাণ করি না কেন, সেগুলোকে যেমন একদিকে হতে হবে স্থায়িত্বশীল, পরিবেশবান্ধব অন্যদিকে তেমনি দৃষ্টি নন্দন। নান্দনিক বলেই মানুষ এখনও পুরনো রাজবাড়ি, মসজিদ, মন্দির দেখতে ছুটে যায়। গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। আর্কিটেক্ট রিজিওনাল কাউন্সিল এশিয়ার সভাপতি সাথিরুত নুই টান্ডাহ্যান্ড, আইএবি সেন্টারের সভাপতি ড. আবু সায়ীদ এম আহমেদ, আইএবির সাধারণ সম্পাদক কাজী এম আরিফ, কাজী গোলাম নাসির অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। তিনি বলেন, ‘বাইরের দেশের কনসালটেন্টদের চেয়ে আমাদের দেশের কনসালটেন্টরা দেশের আবহাওয়া সম্পর্কে ভাল জানেন বা ভাল বোঝেন। তাই তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নেয়াটাই ভাল।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের একটা মানুষও কুঁড়ে ঘরে বাস করতে পারবে না। একটা টিনের ঘর হলেও দেব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজধানীর জলাশয়গুলো সামরিক সরকারের শাসনামলে অবৈধভাবে দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করায় রাজধানীতে বর্তমানে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা যেমন দুর্বল তেমনি জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। তিনি বলেন, ‘পুকুর বা জলাশয়ের সঙ্গেই যেন তাদের সব শত্রুতা।’ তিনি পুরাতন স্থাপত্যকলাকে দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ উল্লেখ করে এগুলো রক্ষণাবেক্ষণে এগিয়ে আসার জন্যও স্থাপত্যবিদদের প্রতি আহ্বান জানান। ব্রিটিশ যুগে তৈরি লাল দালানগুলো বাংলাদেশের ঐতিহ্য বা সংস্কৃতিকে ধারণ করে না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রয়োজন না থাকলে এসব ভেঙ্গে ফেলা হবে।’
×