ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চুক্তি স্বাক্ষর আজ

শাহজালালের নিরাপত্তার দায়িত্ব পেল ব্রিটিশ কোম্পানি রেড লাইন

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২১ মার্চ ২০১৬

শাহজালালের নিরাপত্তার দায়িত্ব পেল ব্রিটিশ কোম্পানি রেড লাইন

আজাদ সুলায়মান ॥ অবশেষে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তা উন্নয়নের দায়িত্ব পেয়েছে ব্রিটিশ কোম্পানি রেডলাইন এভিয়েশন সিকিউরিটি লিমিটেড। রবিবার সরকারী ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির এক বৈঠকে কোম্পানিটিকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়। যুক্তরাজ্য ঢাকা থেকে কার্গো ফ্লাইট নিষিদ্ধের পর ওই দেশের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতেই রেডলাইন এভিয়েশন সিকিউরিটি লিমিটেডকে এ কাজ দেয়া হয়। আজ (সোমবার) এ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করবে সিভিল এভিয়েশন। কাল মঙ্গলবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পালন শুরু করবে প্রতিষ্ঠানটি। ৭৩ কোটি ২৫ লাখ ৭৯ হাজার টাকা ব্যয়ে রেডলাইনকে এ কাজ দেয়া হয়। চূড়ান্ত অনুমোদনের পর বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, শাহজালাল বিমানবন্দরে এখন থেকে আর কোন সঙ্কট থাকবে না। শীঘ্রই বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার হয়ে ফের যুক্তরাজ্যে রফতানি শুরু করা যাবে। সোমবার থেকেই কার্যক্রম শুরু হবে। অনেক লোক এখানে কাজ করবে। ৩৯ জন তাদের দেশ থেকে আসবে। ব্রিটিশ কোম্পানিকে নিয়োগের মাধ্যমে শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো সঙ্কট কেটে যাবে। তিনি বলেন, যে সঙ্কট দেখা দিয়েছিল তা নিরসন হলো। আমরা মনে করি, শীঘ্রই বিধিনিষেধ প্রত্যাহার হবে এবং রফতানি আবার আমরা শুরু করতে পারব। এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ব্রিটিশ কোম্পানি পলিসি লেভেলে কিছু পরামর্শ দেবে, অন্য কাজের সুপারভাইজও করবে। কাল চুক্তি হবে। চুক্তির পরপরই কোম্পানিটি কাজ করবে। তিনি বলেন, যে সঙ্কট দেখা দিয়েছিল তা নিরসন হলো। আমরা মনে করি, শীঘ্রই বিধিনিষেধ প্রত্যাহার হবে এবং রফতানি আবার আমরা শুরু করতে পারব। এ চুক্তির পর যুক্তরাজ্য কার্গো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে কিনাÑ প্রশ্ন করা হলে রাশেদ খান মেনন বলেন, আমরা আশা করছি খুব শীঘ্রই যুক্তরাজ্য এটা প্রত্যাহার করবে। তবে যুক্তরাজ্য আশ্বস্ত করেছে ৩১ মার্চ থেকে যাত্রীবাহী ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়ার আশঙ্কা কেটে গেছে। ব্রিটিশ এ কোম্পানিকে দুই বছরে ৭৩ কোটি ২৫ লাখ ৭৯ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সোমবার চুক্তি করে পরদিন থেকেই কাজ শুরু হবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে অসন্তোষ থেকে গত ৮ মার্চ ঢাকা থেকে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে দেয় যুক্তরাজ্য। বাণিজ্যিক ক্ষতির মুখে পড়ে এ সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হয় সরকার। এরপর যুক্তরাজ্যের পরামর্শ নিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নের সিদ্ধান্ত হয়। ব্রিটিশ এ কোম্পানিকে নিয়োগ দিতেই রবিবার অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এবং সরকারী ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক ডাকা হয়। রেডলাইনের নিয়োগ প্রস্তাব প্রথমে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দেয়। পরে সরকারী ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি তা চূড়ান্ত অনুমোদন করে। তবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত উভয় কমিটির সভাপতি হলেও রবিবারের বৈঠকে তিনি উপস্থিত ছিলেন না। অর্থমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এসব সভায় সভাপতিত্ব করলেও রবিবারের বৈঠকে তিনিও ছিলেন না। তাই বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল এ মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। এর আগে মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের আগে সকালে সরাসরি কার্গোতে পণ্য পরিবহনে যুক্তরাজ্য আরোপিত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে গঠিত স্টিয়ারিং কমিটির দ্বিতীয় সভা হয় বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ে। এতে মন্ত্রী মেনন সভাপতিত্ব করেন। ওই বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় বিমানবন্দরের পুরো নিরাপত্তা রেডলাইন দেখবে কিনা- জানতে চাইলে বলেন, ‘না, না, না। সিকিউরিটি দেখবে আমাদের লোকজন। তারা সুপারভাইজরি কাজ করবে। কনসালটেন্সি দেবে, জনবলকে ট্রেইন করবে। এদিকে সিভিল এভিয়েশন সূত্র জানায়, আরএসসি একটি প্রশিক্ষণভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। তাদের সরঞ্জাম ও প্রযুক্তিগত দুর্বলতা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি মূলত অফিস ও বাসায় নিরাপত্তা সহযোগিতা প্রদান করে। এ কোম্পানির আর্থিক ব্যয়ের প্রস্তাবও অনেক বেশি। অন্যদিকে ওয়েস্টমিনিস্টারের প্রশিক্ষণ সক্ষমতাসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও প্রযুক্তিগত সব ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া হিথরোসহ বিশ্বব্যাপী ৮০টি বিমানবন্দরে নিরাপত্তা সহযোগিতার অভিজ্ঞতা রয়েছে এটি। নিরাপত্তা উন্নয়নে দুই বছরের জন্য ওয়েস্টমিনিস্টার চেয়েছে ৫০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আরএসসি চেয়েছে ৭৫ কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে বেবিচকের উর্ধতন এক কর্মকর্তা বলেন, সক্ষমতা ও আর্থিক বিবেচনায় ওয়েস্টমিনিস্টারকেই বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেয়া উচিত ছিল। কিন্তু রেডলাইনকে কাজ দিতে একটি পক্ষ থেকে চাপ ছিল। এ কারণে দুটি প্রতিষ্ঠানকেই তালিকায় রেখে একটিকে অনুমোদনের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়। এদিকে সিভিল এভিয়েশন সূত্র জানায়, সমঝোতা স্মারক সইয়ের পর রেডলাইন তার জনবল ঢাকায় নিয়ে আসবে। তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হবে শাহজালাল বিমানবন্দরের পাশে কাওলা এলাকার একটি আবাসিক স্থাপনায়। উল্লেখ্য, গত ৮ মার্চ ঢাকা থেকে যুক্তরাজ্যে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে দেয় যুক্তরাজ্য।
×