ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপিতে বাড়ছে পদের সংখ্যা, সম্ভাব্য পদ প্রার্থী যারা

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২১ মার্চ ২০১৬

বিএনপিতে বাড়ছে পদের সংখ্যা, সম্ভাব্য পদ প্রার্থী যারা

শরীফুল ইসলাম ॥ বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলে খালেদা জিয়া ঘোষিত ‘ভিশন-২০৩০’ ও ক্ষমতায় গেলে দ্বিকক্ষ সংসদ করাসহ দেশে নতুন ধারার রাজনীতি ও সরকার প্রতিষ্ঠা করার আশ্বাস নিয়ে সারাদেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে নানা জল্পনা-কল্পনা। হঠাৎ করে কেন খালেদা জিয়া এমন কৌশল নিলেন তা নিয়েও বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন অতীতের ভুলভ্রান্তি থেকে দৃষ্টি সরিয়ে পরবর্তী নির্বাচনে ক্ষমতায় যাওয়ার কৌশল হিসেবেই খালেদা জিয়া দেশের মানুষকে আশার আলো দেখাতে চেয়েছেন। এদিকে উৎসবমুখর পরিবেশে জাঁকজমক জাতীয় কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে ঝিমিয়ে পড়া বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা কিছুটা উজ্জীবিত হয়েছে। তবে এ কাউন্সিলে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া তার নিজের ও ছেলে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পদ অনুমোদন করিয়ে নিলেও মহাসচিবসহ জাতীয় নির্বাহী কমিটির আর কোন পদে কাউকে নির্বাচিত না করায় এবং কতদিন পর কমিটি হবে এমন ঘোষণা না দেয়ায় দলের পদপ্রত্যাশী নেতাদের মধ্যে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। নতুন জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠনের দায়িত্ব খালেদা জিয়া এককভাবে নিজ হাতে নেয়ায় গুরুত্বপূর্ণ পদ প্রত্যাশী কোন কোন নেতার মধ্যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। তবে দলে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত নেতারা কিছুটা উৎফুল্ল রয়েছেন বলে জানা গেছে। জানা যায়, বিএনপির থিঙ্কট্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিত কিছু বুদ্ধিজীবীর পরামর্শে খালেদা জিয়া জনগণের মধ্যে ইতিবাচক রাজনীতির আশার সঞ্চার করতে ‘ভিশন-২০৩০’ এর আওতায় একটি একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এরই আওতায় তিনি ক্ষমতায় গেলে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠার কথা বলেন। যা বহু আগে থেকেই জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের নেতারা বলে আসছেন। এদিকে খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠার কথা বলায় এ নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। অভিজ্ঞ মহলের মতে দেশে বিরাজমান সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রধানমন্ত্রীর যে ক্ষমতা রয়েছে তা খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালের মতোই। তিনি ৫ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে কখনও এ নিয়ে কথা বলেননি। এমনকি ২০০১ সালে দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়েও তিনি প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনার কথা বলেননি। হঠাৎ করে এখন কেন তিনি এ কথা বলছেন তা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। জানা যায়, বিএনপির থিঙ্কট্যাঙ্কে থাকা জাসদীয় ভাবধারার কোন কোন বুদ্ধিজীবীর পরামর্শে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় গেলে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ করার ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করা বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও খালেদা জিয়াকে এ পরামর্শ দিয়েছেন। আর যুক্তরাজ্যে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ থাকায় তারেক রহমান সেখানে দীর্ঘদিন অবস্থান করে এর সুফল সম্পর্কে ধারণা নিয়েছেন। জাতীয় কাউন্সিলে ভাইস চেয়ারম্যান পদের সংখ্যা ১৭ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ করা হয়েছে। ভাইস চেয়ারম্যান পদে নতুন যারা আসতে পারেন বলে আলোচনায় আছেন তারা হলেন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মিজানুর রহমান মিনু, রুহুল কবির রিজভী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ডাঃ এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, এ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, আবদুল হালিম, ফজলুর রহমান পটল, মোসাদ্দেক আলী ফালু, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, এ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, মেজর জেনারেল (অব) মাহমুদুল হাসান, অধ্যাপক এমএ মান্নান, বরকতউল্লাহ বুলু, অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম, প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক, মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান, সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার, নিতাই রায় চৌধুরী প্রমুখ। নতুন করে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পেতে পারেন বর্তমান স্থায়ী কমিটির সদস্য এম শামসুল ইসলাম, সারোয়ারী রহমান, বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান বিচারপতি টিএইচ খান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সিনহা, স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক আবদুল হাই, পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক মনিরুল হক চৌধুরী, দলের নেতা ব্যারিস্টার আমিনুল হক, আখতার হামিদ সিদ্দিকী, একেএম মোশাররফ হোসেন প্রমুখ। কাউন্সিলের পর যুগ্ম মহাসচিব পদ পেতে যারা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে শোনা যাচ্ছে তারা হলেন সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, খায়রুল কবির খোকন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এহসানুল হক মিলন, নাজিমউদ্দিন আলম, শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, যুববিষয়ক সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খন্দকার, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, সহ-প্রচার এমরান সালেহ প্রিন্স, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি প্রমুখ। যারা সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পেতে যারা লবিং-তদবির করছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, কৃষক দল নেতা তকদির হোসেন জসিম স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক হাবিব উন নবী খান সোহেল, সমাজকল্যাণ সম্পাদক আবুল খায়ের ভূইয়া, ব্যারিস্টার নাসিরউদ্দিন অসীম, সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহমিনা রুশদী লুনা, আবদুস সালাম আজাদ। এ ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে যারা লবিং করছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন ওয়াদুদ ভুইয়া, রফিকুল ইসলাম হিলালী, রেহানা আক্তার রানু, নীলুফার চৌধুরী মনি, শাম্মী আক্তার, শাহজাহান মিয়া সম্রাট, আসিফা আশরাফি পাপিয়া, সানাউল্লাহ মিয়া, হেলেন জেরিন খান, শামা ওবায়েদ, সুলতানা রাজিয়া শাওন, রফিক শিকদার প্রমুখ। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান বলেন, জাতীয় কাউন্সিলে চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ‘ভিশন-২০৩০’ ও ক্ষমতায় গেলে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ করার যে ঘোষণা দিয়েছেন তা দেশের রাজনীতির জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ। এর ফলে দেশের মানুষের মনে বিএনপি সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব বৃদ্ধি পাবে। আর কমিটি গঠনের দায়িত্ব খালেদা জিয়াকে দেয়া হয়েছে। তিনি নিশ্চয়ই একটি ভাল কমিটি উপহার দেবেন। দলের কাউন্সিলর সুলতানা রাজিয়া শাওন বলেন, বিএনপি এভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে জাতীয় কাউন্সিল করতে পারবে তা অনেকেই মনে করেনি। তবে কাউন্সিলের পর সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়েছে। বিশেষ করে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ‘ভিশন-২০৩০’ ঘোষণা করায় দলের নেতাকর্মী এবং দেশবাসীর মনে আশার সঞ্চার হয়েছে। এর সুফল বিএনপি পরবর্তী নির্বাচনে পাবে।
×