ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অগ্নিঝরা মার্চ

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২১ মার্চ ২০১৬

অগ্নিঝরা  মার্চ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ২১ মার্চ, ১৯৭১। বিক্ষুব্ধ-উত্তপ্ত গোটা দেশ। বঙ্গবন্ধুর অঙ্গুলি হেলনে চলছে গোটা দেশ। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের কোন মূল্যই নেই এ দেশে। এটি বুঝতে বাকি থাকে না ইয়াহিয়া খানদের। এদিকে ইয়াহিয়ার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পর বিদ্রোহে ফুঁসে উঠে বাঙালী জাতি। উত্তাল-অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠে সারাদেশ। ঢাকা শহরের মোড়ে মোড়ে স্বাধীনতাকামী বাঙালীদের মিছিল, সমাবেশ। দলে দলে সব ছুটছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দিকে। বাঙালী বুঝতে পারে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পাকিস্তানী প্রেসিডেন্টের বৈঠক ছিল প্রহসন মাত্র। পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে মানুষ সশস্ত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে। একাত্তরের এই দিন সকালেই বঙ্গবন্ধু প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদকে নিয়ে পঞ্চম দফা বৈঠক করেন। চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে ন্যাপ প্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বিশাল এক জনসভায় পরিষ্কার ঘোষণা দেনÑ এসব আলোচনা করে কোন ফল আসবে না। এ দেশের আজ কেউ আর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে মানে না। অন্যদিকে এদিন সকালেই পাকিস্তানের পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো হঠাৎ করেই ঢাকায় আসেন। রাজনৈতিক নেতা হওয়া সত্ত্বেও সেদিন তার অভ্যর্থনার জন্য এয়ারপোর্টে কয়েকজন আমলা ছাড়া আর কেউ উপস্থিত ছিলেন না। ভুট্টোর এ দেশে আসার প্রতিবাদে ঢাকা মহানগরীর রাজপথে সবাই নেমে আসেন। মিছিল-মিটিংয়ের মাধ্যমে ভুট্টোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠে মুক্তিপাগল বীর বাঙালী। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের আমন্ত্রণে ভুট্টো এ দেশে আসেন। দেশবাসী বুঝতে পারে এর পেছনে নিশ্চয়ই কোন ষড়যন্ত্র আছে। তারা নতুনভাবে প্রস্তুতি নিতে থাকে। সবকিছুর পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর ডাকা অসহযোগ আন্দোলন চলতেই থাকে। দেশে একদিকে আলোচনা, অসহযোগ আন্দোলন চলছেÑ অন্যদিকে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী তাদের ঘাঁটিগুলো আরও শক্তিশালী করে তুলতে থাকে। প্রতিদিনই পাকিস্তান থেকে অস্ত্র-গোলাবারুদ, সৈন্য আসতে থাকে। আলোচনার আড়ালে তারা এ দেশের নিরীহ মানুষের ওপর হিংস্র জন্তুর মতো ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য সেনা সদস্যদের প্রস্তুত করতে থাকে। বাংলা নামের ভূখ- তখন তপ্ত। পেশাজীবী গ্রুপগুলো সভা, সমাবেশ, মিছিলে মুখর। সবার কণ্ঠে একটি মাত্র ধ্বনি, একক একটি উচ্চারণ- স্বাধীনতা। জয়দেবপুরে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী গুলি চালিয়েছে নিরীহ জনগণের ওপর। তার তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে টঙ্গী, নারায়ণগঞ্জে। মিরপুর, চট্টগ্রাম, পার্বতীপুর, সৈয়দপুরে বাঙালী-বিহারী দাঙ্গায় রক্তপাত হয়েছে। বাঙালীরা ক্ষুব্ধ, জঙ্গী। প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছে জাতির সত্তা ও চৈতন্য। এই প্রেক্ষাপটে এগিয়ে চলছিল রণপ্রস্তুতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে ছাত্র ইউনিয়ন, গণবাহিনীর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় কুচকাওয়াজ। মোটকথা, জাতি সেই উত্তাল সময়ে ছিল স্বাধীনতার জন্য উন্মুখ, যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। শুধু অপেক্ষা একটি চূড়ান্ত নির্দেশের। গোপনে বীর বাঙালীরাও সংগ্রহ করতে থাকে অস্ত্র, গোলাবারুদ। অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যদের কাছ থেকে গোপনে ট্রেনিংও নিতে থাকে দেশমাতৃকাকে স্বাধীন করতে আত্মোৎসর্গ করতে প্রস্তুত ছাত্র-যুবারা।
×