ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তালতলীতে যৌতুকের বলি তিন সন্তানের জননী

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ২২ মার্চ ২০১৬

তালতলীতে যৌতুকের বলি তিন সন্তানের জননী

নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী, বরগুনা, ২১ মার্চ ॥ তালতলী উপজেলার চন্দনতলা গ্রামে রবিবার রাতে যৌতুকলোভী স্বামী আবদুস ছালাম আকনের নির্যাতনে ৩ সন্তানের জননী খাদিজা বেগমের মৃত্যু হয়েছে। জানা গেছে, গত ২০ বছর পূর্বে তালতলী উপজেলার চন্দনতলা গ্রামের গাঁজা ব্যবসায়ী আবদুস ছালাম আকনের (৪৫) সাথে গেন্ডামারা গ্রামের আবুল হাসেম হাওলাদারের কন্যা খাদিজার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য আবদুস ছালাম স্ত্রীকে নির্যাতন করে আসছিল। খাদিজার দরিদ্র বাবা ছালামের যৌতুকের অবদার বিভিন্ন সময় মিটিয়ে আসছে। গত ৮ মার্চ স্ত্রী খাদিজাকে ৫০ হাজার টাকার জন্য বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু দরিদ্র বাবা জামাতার দাবি মেটাতে পারেনি। এ ঘটনায় ৯ মার্চ দুপুরে ছালাম স্ত্রী খাদিজাকে বেধড়ক মারধর করে। এতে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। খবর পেয়ে খাদিজার বাবার বাড়ির লোকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে তালতলী হাসপাতালে পরে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে রবিবার তাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতালেই খাদিজার মৃত্যু হয়। খাদিজার বাবা হাসেম হাওলাদার জানান, বিয়ের পর থেকেই ছালাম আমার মেয়েকে যৌতুকের জন্য মারধর করত। টাকার প্রয়োজন হলেই আমার বাড়িতে পাঠিয়ে দিত। টাকা দিতে না পারলে অমানসিক নির্যাতন করত। সৈয়দপুরে যৌতুকের নির্যাতনে গৃহবধূ হাসপাতালে স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী থেকে জানান, সৈয়দপুর উপজেলা শহরের নতুন বাবুপাড়া হাজী কলোনি মহল্লায় যৌতুকের জন্য নির্যাতিত গৃহবধূকে উদ্ধার করে পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। স্বামী, ভাসুর, ননদসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের হাতে চরম নির্যাতনের শিকার হয়ে সৈয়দপুর ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন গৃহবধূ ফাহমিদা মল্লিক (২০)। সোমবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই গৃহবধূ সাংবাদিকদের জানান, সৈয়দপুর শহরের নতুন বাবুপাড়া হাজী কলোনির মৃত শেখ আমানতের ছেলে মাসুদ রানা মুকুলের সঙ্গে প্রায় চার বছর আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তার। তিনি সৈয়দপুর শহরের মুন্সিপাড়ার মৃত আসগার মল্লিকের মেয়ে। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে তার স্বামী প্রায় আড়াই লাখ টাকা নেয়। সংসার করার ফাঁকে তার স্বামীসহ স্বামীর লোকজন আরও ২ লাখ টাকা নিয়ে আসার জন্য চাপ দেয় তাকে। আর এজন্য তার ওপর কারণে-অকারণে চালানো হয় শারীরিক-অত্যাচার নির্যাতন। অসহায় বড়ভাই ঋণগ্রহণ করে বোনের স্বামীর হাতে বাধ্য হয়ে আরও ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা তুলে দেন। কিন্তু এতেও যৌতুকলোভী মুকুলের মন ভরে না। সে আরও ২ লাখ টাকা দাবি করে নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে গত বছর ৮ জানুয়ারি স্ত্রীকে বাড়ি থেকে বের করে দিলে গৃহবধূ আশ্রয় নেয় বাবার বাড়িতে। মীমাংসায় দুই লাখ টাকা ছাড়া স্ত্রীকে বাড়িতে তুলবে না ঘোষণায় গত বছরের ১৯ অক্টোবর ওই গৃহবধূ তার স্বামী মাসুদ রানা মুকুল (৩৪), ভাসুর মাসুদ আখতার বকুল (৩৬), ননদ লতা বেগম (৪০) ও ননদের এক মেয়ে জেসমিন আবেদীন রুমীসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। চলতি ১৬ মার্চ ছিল মামলার ধার্য দিন। ওই দিন স্ত্রীকে পূর্ণমর্যাদা দিয়ে ঘরসংসার করবে মর্মে আদালতে একটি লিখিত অঙ্গীকারনামা দেয় স্বামী মুকুল এবং আদালতের কাঠগড়ায় স্ত্রীকে গ্রহণ করে। ওই দিন আদালত চত্বর থেকে বের হয়ে স্ত্রী ফাহমিদা মল্লিককে অটোরিক্সায় নিয়ে বাড়ি উদ্দেশে রওনা দেন স্বামী মুকুল। কিন্তু নীলফামারী থেকে সৈয়দপুর আসার পথিমধ্যে স্ত্রীকে অটোরিক্সায় বসিয়ে রেখে সুকৌশলে সেখান থেকে সটকে পড়েন মুকুল। বাধ্য হয়ে ফের বাবার বাড়িতে ফিরে আসেন ফাহমিদা। এরপর গত ১৯ মার্চ সন্ধ্যায় গৃহবধূ ফাহমিদা স্বামীর নতুন বাড়িতে গিয়ে সরাসরি নিজ ঘরে ঢুকেন। তাকে দেখে স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা চড়াও হয়। এ সময় তাকে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি মারতে থাকেন। এর একপর্যায়ে চুলের মুঠি ধরে ঘর থেকে বাইরে বের করে আনেন। এরপর শরীরে আগুন দিয়ে পুঁড়িয়ে মারার চেষ্টা চালায়। পরে পুলিশ ওই গৃহবধূকে মারাত্মক আহত অবস্থায় উদ্ধার করে।
×