ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মন্ত্রিসভায় জাতীয় শিল্পনীতি ২০১৬ অনুমোদিত

দশ লাখ ডলার বিনিয়োগ করলে নাগরিকত্ব দেয়া হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২২ মার্চ ২০১৬

দশ লাখ ডলার বিনিয়োগ করলে নাগরিকত্ব দেয়া হবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দেশে দ্রুত শিল্পায়ন এবং বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ‘জাতীয় শিল্পনীতি ২০১৬’-এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। শিল্পনীতির অন্যতম দিক হলো দশ লাখ ডলার বিনিয়োগ করলে বা বিশ লাখ ডলার নিয়ে এলে নাগরিকত্ব দেয়া হবে। আগের নীতিমালায় ছিল পাঁচ লাখ ডলার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্থানান্তর করার পরিমাণ ছিল দশ লাখ। এছাড়া বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা তহবিল (সংশোধনী) আইন ২০১৬ নীতিগতভাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, বিদ্যমান জাতীয় শিল্পনীতি ২০১০-এর আধুনিকীকরণ ও এ ধরাবাহিকতা বজায় রেখে এই প্রস্তাবিত নীতি প্রণয়ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা তহবিল (সংশোধনী) আইন ২০১৬’ও নীতিগতভাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়া মন্ত্রিসভায় ‘সেনানিবাস আইন ২০১৬’র খসড়া উপস্থাপন করা হয়েছে। কিছু সংযোজন ও বিয়োজনসহ ‘দ্য ক্যান্টনমেন্ট এ্যাক্ট ১৯২৪’ অনুবাদ করে তা মন্ত্রিসভায় পেশ করা হলেও আইনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আবারও উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে। বৈঠকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়েয় প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে এ বছর ২২ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্পেনের বার্সিলোনায় মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের অংশগ্রহণেরও প্রশংসা করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ছয়টি খাতকে প্রাধান্য দিয়ে জাতীয় শিল্পনীতি ২০১৬-এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। এছাড়া আগামী পাঁচ বছরের রফতানি প্রবৃদ্ধি বাড়ানো, বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের মতো বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে নতুন এ শিল্পনীতিতে। সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয়া ছয়টি খাত হলো- এ্যাগ্রিকালচারাল এ্যান্ড ফুড প্রসেসিং, গার্মেন্টস, আইসিটি এ্যান্ড সফটওয়্যার, ফার্মাসিউটিক্যালস, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য। সৃষ্টিশীল শিল্প খাতকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে নতুন শিল্পনীতিতে। এক্ষেত্রে সবেচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে- ইঞ্জিনিয়ারিং, চিত্রাঙ্কন, ডিজাইন, ফ্যাশন ডিজাইন, ফ্লিম এ্যান্ড ভিডিও, লেজার সফটওয়্যার, কম্পিউটার এ্যান্ড মিডিয়া প্রোগ্রামার্স। নতুন এসব শিল্প খাতে সহযোগিতা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক, রাজস্ব বোর্ড, বিনিয়োগ বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহকে নির্দেশনা প্রদান করা হবে। বিশেষ করে নতুন বিনিয়োগে রেয়াতি সুবিধা, নগদ সহায়তা, ট্যাক্স সুবিধা প্রদানসহ বিভিন্ন সহযোগিতা প্রদানের ঘোষণা থাকছে শিল্পনীতিতে। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, নতুন শিল্পনীতিতে সৃষ্টিশীল শিল্প খাতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এর ফলে নতুন নতুন শিল্প খাত দেশে গড়ে উঠবে। এছাড়া শিল্পনীতিতে স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী ভিশন (লক্ষ্য) হচ্ছে বেসরকারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়ন। এতে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে মাঝারি শিল্পকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো, ক্রমান্বয়ে বড় শিল্পের বিকাশ ঘটানো এবং জনগণের কর্মসংস্থান। ইতোমধ্যে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে শিল্পনীতির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। শিল্প মন্ত্রণালয় বলছে, উন্নয়নশীল দেশে দ্রুত ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সামাজিক অগ্রগতির একটি অপরিহার্য পূর্বশর্ত হচ্ছে শিল্পায়ন। অর্থনীতির আধুনিকায়ন ও কাঠামোগত রূপান্তর, অর্থনৈতিক ভিত্তির বৈচিত্র্যায়ন, ক্রমবর্ধমান উৎপাদনশীলতা অর্জন, বাহ্যিক ব্যয় সঙ্কোচন, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, ত্বরিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জনগণের আয় ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, শিল্প উন্নয়ন সর্বজনস্বীকৃত। এজন্য শিল্পায়নকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে বর্তমান সরকার বিবেচনা করছে।
×