ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

লুই কানের মূল নক্সা শনাক্ত

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২২ মার্চ ২০১৬

লুই কানের মূল নক্সা শনাক্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যুক্তরাষ্ট্রে সংরক্ষিত জাতীয় সংসদের মূল নক্সা শনাক্ত করেছে বাংলাদেশ স্থাপত্য অধিদফতরের প্রতিনিধি দল। বিখ্যাত স্থপতি লুই আই কানের মূল নক্সা অনুয়ায়ী জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে তা সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সরকার। নক্সাটি যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটির আর্কিটেকচারাল আর্কাইভে সংরক্ষিত আছে। সোমবার বাংলানিউজের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন মূল নক্সা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, সংসদ এলাকার সব নক্সা পেতে আরও দুই তিন মাস সময় লাগতে পারে। এর আগে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের স্থাপত্য অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী স্থপতি কাজী গোলাম নাসিরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্র যান। সেখান থেকে তারাই নিশ্চিত করেন মূল নক্সার বিষয়টি। এরপর মন্ত্রী গণমাধ্যমকে অবহিত করেন। স্থাপত্য অধিদফতরের প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া ইউনির্ভাসিটির স্থাপত্য বিভাগ বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের কাছে শেরেবাংলা নগরের সকল নক্সার তালিকা দিয়েছে। এতে দেখা গেছে, ৮ হাজারের বেশি নক্সা রয়েছে। এখান থেকে যেটা প্রয়োজন সেটাও আনা যেতে পারে। আবার সরকার চাইলে সবগুলো নক্সাই আনতে পারে। লুই আই কানের এসব নক্সা সংগ্রহ করতে নক্সাপ্রতি খরচ হবে ৫০ ইউএস ডলার। ১৯৬১ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের আমলে বর্তমান সংসদ ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সে সময় স্থপতি মাজহারুল ইসলামকে এ ভবনের স্থপতি নিয়োগ করা হয়। তার প্রস্তাবেই লুই আই কান এ প্রকল্পের প্রধান স্থপতি হিসেবে নিয়োগ পান। দীর্ঘ সময় পর ১৯৮২ সালের ২৮ জানুয়ারি এ ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি লুই আই কানের মূল নক্সা সংগ্রহের নির্দেশ দেন সংসদ সচিবালয়কে। সর্বশেষ গত বছরের ১৩ অক্টোবর একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী লুই আই কানের মূল নক্সা আনার নির্দেশ দেন। বাংলাদেশ সচিবালয় সেগুনবাগিচা থেকে আগারগাঁও এ স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরুর ক্ষেত্রে মূল নক্সাটি পাওয়া জরুরী হয়ে পড়েছে। সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, ১৯৭৪ সালে লুই আই কান যখন মূল নক্সাটি করেন, তখন ২৭টি মন্ত্রণালয়ের জন্য এ পরিকল্পনা করেন। ১৯৭৪ সালে শেরেবাংলা নগরে ৪২ একর জায়গায় জাতীয় সচিবালয় নির্মাণের জন্য সরকার ও মার্কিন কোম্পানি ডেভিড উইসডম এ্যান্ড এ্যাসোসিয়েটসের সঙ্গে চুক্তি হয়। পরে এর কোন অগ্রগতি হয়নি। ওই এলাকায় ১০ একর জমিতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। নক্সার ব্যত্যয় ঘটিয়ে সাবেক দুই রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সংসদ ভবন এলাকার ভেতরেই গড়ে তোলেন মাজার ও কবরস্থান। এর মধ্যে সংসদ ভবনের উত্তরে চন্দ্রিমা উদ্যানের মাঝখানে ৭৪ একর জায়গা জুড়ে নিয়ে গড়ে তোলা হয় জিয়ার মাজার কমপ্লেক্স। আর জিয়া ও এরশাদের শাসনামল মিলিয়ে সংসদ ভবনের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে মানিক মিয়া এ্যাভিনিউয়ের পশ্চিম প্রান্ত লাগোয়া স্থানে পাঁচ বিঘারও বেশি জায়গাজুড়ে স্বাধীনতা বিরোধী খান এ সবুরসহ সাতজনকে সমাধিস্থ করা হয়। লুই আই কানের নক্সা ক্ষত-বিক্ষত করার প্রক্রিয়া সেখানেই থেমে থাকেনি। ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার। ওই সরকারের গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। লুই আই কানের নক্সা উপেক্ষা করে আসাদ গেটের উল্টো দিকে সংসদ ভবনের জায়গায় একটি পেট্রোলপাম্প স্থাপনের জন্য তিনি তার ছোট ভাই মির্জা খোকনকে জায়গা বরাদ্দ দেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মাঝামাঝি সময়ে আরও এক দফা ক্ষত-বিক্ষত করা হয় লুই আই কানের মূল নক্সা। ওই সময় সংসদ ভবনের মূল ভবনের পাশেই খোলা সবুজ চত্বরে স্পীকার ও ডেপুটি স্পীকারের বাসভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্ট (আইএবি) এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) যৌথভাবে সংসদ সচিবালয় ও গণপূর্ত অধিদফতরের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করে। রায় আইএবি এবং বাপার পক্ষে গেলেও নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়নি। আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করেই নির্মাণ করা হয় স্পীকার এবং ডেপুটি স্পীকারের বাসভবন। এদিকে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করেন রাষ্ট্রপক্ষ। এ মামলার শুনানিতে গত বছরের ৪ নবেম্বর স্থপতি লুই আই কানের তৈরি জাতীয় সংসদ কমপ্লেক্সের মূল নক্সা তিনমাসের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ।
×