ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ডাউন সিনড্রোম ও তার করণীয়

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ২২ মার্চ ২০১৬

ডাউন সিনড্রোম ও তার করণীয়

২১ মার্চ ছিলো ডাউন সিনড্রোম দিবস। ২০০৬ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী এ দিনটি পালিত হয়ে আসছে। এ বছরই বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সরকারীভাবে ডাউন সিনড্রোম দিবস পালিত হতে যাচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে- ‘আমার বন্ধু, আমার সমাজ’ পরিবেশ সবার একীভূত আজকের শিশু ভালবেসে- আনবে সুফল সবার শেষে। ডাউন সিনড্রোম একটি শিশুর বংশানুগতিক সমস্যা, যা ২১তম ক্রোমোজোম জোড়ায় একটি অতিরিক্ত ক্রোমোজোমের উপস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এবং যার মধ্যে মৃদু থেকে গুরুতর মাত্রার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা, দুর্বল পেশিক্ষমতা, খর্বাকৃতি ও মঙ্গোলয়েড মুখাকৃতির বিশেষ বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। তাই বলা যেতে পারে ডাউন সিনড্রোম কোন রোগ নয় বরং এটি শরীরের একটি জেনেটিক পার্থক্য এবং ক্রোমোজোমের একটি বিশেষ অবস্থা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি ৮শ’ শিশুর মধ্যে একজন ডাউন সিনড্রোম শিশু জন্মগ্রহণ করে থাকে। সারা পৃথিবীতে প্রায় ৭ মিলিয়ন ডাউন সিনড্রোম লোক রয়েছে। আর বাংলাদেশে প্রতিবছর পাঁচ হাজার বা প্রতিদিন প্রায় ১৫টি ডাউন শিশুর জন্ম হয়। বর্তমানে দেশে ২ লাখ ডাউন সিনড্রোম ব্যক্তি বসবাস করছে বলে ধারণা করা হয়। ব্রিটিশ চিকিৎসক জন ল্যাঙ্গডন ডাউন ১৮৬৬ সালে এ শিশুদের চিহ্নিত করেন বলে তার নামানুসারে ‘ডাউন সিনড্রোম’ কথাটি প্রচলিত হয়। প্রতি ৫শ’ থেকে ৭শ’ শিশুর মধ্যে একটি শিশু ডাউন সিনড্রোম বা ডাউন শিশু হিসেবে জন্মগ্রহণ করতে পারে। আমাদের বংশগতির ধারক ও বাহক হলো জিন। আর জিনের অবস্থান ডিএনএ-তে। ডিএনএ-এর সমন্বয়ে ক্রোমোজোম তৈরি হয়। আমাদের শারীরিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্য, যেমনÑ আচার-আচরণ, বুদ্ধিমত্তা, চেহারা, উচ্চতা, গায়ের রং সবকিছুই এ ডিএনএ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। অন্যদিকে মানব শরীরে এ ডিএনএ বা ক্রোমোজোমের অসামঞ্জস্য দেখা দিলে নানা রকম শারীরিক ও মানসিক ত্রুটি দেখা দেয়, যাদের আমরা সাধারণভাবে জন্মগত ত্রুটি বা জেনেটিক ত্রুটি বলে থাকি। ডাউন সিনড্রোম বা ডাউন শিশু সে রকম একটি জেনেটিক ত্রুটিযুক্ত মানব শিশু, যার শরীরের প্রতিটি কোষে ২১ নম্বর ক্রোমোজোমটির সঙ্গে আংশিক বা পূর্ণভাবে আর একটি ক্রোমোজোম সন্নিবেশিত থাকে। ২১তম ক্রোমোজোম তিনটি থাকে বলে ২১/৩ বা একুশে মার্চ বিশ্ব ডাউন সিনড্রোম দিবস পালিত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, যত বেশি বয়সে মা হবেন, সন্তানের ডাউন সিনড্রোম নিয়ে জন্মের আশঙ্কা তত বেশি। ২৫ বছর বয়সী প্রতি ১ হাজার ২শ’ গর্ভবতী মায়ের মধ্যে একজন, ৩০ বছর বয়সী প্রতি ৯শ’ জনের মধ্যে একজন, আর ৪০ বছর বয়সী প্রতি এক শ’ মায়ের মধ্যে একজনের ডাউন শিশু হতে পারে। চিকিৎসকরা বলছেন, অসচেতনতার কারণেই দেশে ডাউন শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। তবে আশার কথা, গর্ভবতী নারীর শরীর পরীক্ষা করে, এখন দেশেই ডাউন শিশু শনাক্ত করা সম্ভব। ডাউন শিশুরা সাধারণত প্রতিবন্ধী শিশু হিসেবে বেঁচে থাকে। তারা অন্য শিশুদের তুলনায়, শারীরিক ও মানসিকভাবে দেরিতে বেড়ে ওঠে। বসতে, দাঁড়াতে, হাঁটতে বা কথা বলতে শেখে দেরিতে। আবার কেউ কেউ এ রকম এক বা একাধিক কাজ কখনোই শেখে না। অনেক সময় ডাউন সিনড্রোমের সঙ্গে হার্টের সমস্যা, থাইরয়েডের সমস্যা থাকতে পারে। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসার মাধ্যমে এ সমস্ত সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিভিন্ন পরিচর্যা ও চিকিৎসার মাধ্যমে শারীরিক সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। উপযুক্ত পরিবেশ ও বিশেষ শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে বড় করতে পারলে ডাউন শিশুরা কর্মক্ষম হয়ে অর্থবহ জীবনযাপন করতে পারে। যেহেতু মায়ের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডাউন শিশু হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে, তাই চিকিৎসা বিজ্ঞানে অধিক বয়সে, বিশেষ করে পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব বয়সে মা হওয়াকে নিরুৎসাহিত করা হয়। মায়ের আগের বাচ্চাটি যদি ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত থাকে তবে পরবর্তীতে বাচ্চা নেয়ার ক্ষেত্রেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। ডাঃ গোপেন কুমার কু-ু সহযোগী অধ্যাপক শিশু নিউরোলজি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়
×