ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইউপি নির্বাচন

বিচ্ছিন্ন সহিংসতায় বাউফল ও নেত্রকোনায় দুই আওয়ামী লীগ কর্মী নিহত

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৩ মার্চ ২০১৬

বিচ্ছিন্ন সহিংসতায় বাউফল ও নেত্রকোনায় দুই আওয়ামী লীগ কর্মী নিহত

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ প্রথম দফার ৭১২টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে মঙ্গলবার বিভিন্নস্থানে দিনভর বিচ্ছিন্ন সহিংস ঘটনা ঘটেছে। হামলা-পাল্টা হামলা, সশস্ত্র সংঘর্ষ, গুলি, বোমা বিস্ফোরণ, ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্স ছিনতাই, কেন্দ্র দখল, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারকে মারধর, প্রকাশ্যে ভোট প্রদান এবং অগ্নিসংযোগ ছাড়াও সাতক্ষীরায় ২ জন গুলিবিদ্ধ, বাউফলে নৌকা মার্কার এক সমর্থকের মৃত্যু এবং কোন কোন কেন্দ্রে নির্বাচন বর্জনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে এই নির্বাচন। সহিংসতার কারণে সাতক্ষীরার ৫টি উপজেলার ১৩টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। এ ঘটনায় ৫ আনসার আহত হয়েছে। তালা উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের ভাগবাহ ভোট কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে ভোট জালিয়াতির সময় পুলিশের গুলিতে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস ও তার ছোট ভাই রুহুল আমিন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। মঙ্গলবার ভোর রাতে এ ঘটনা ঘটে। তাদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বগুড়ার শিবগঞ্জের পিরব ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর কার্যালয়ে বিএনপি সমর্থকরা হামলা চালিয়ে প্রাইভেটকার ভাংচুর করেছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ ও শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছোড়ে। বাউফলে ব্যালটভর্তি বাক্স পুকুরে তিন কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করেছে। নৌকা মার্কাসহ ৭ চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছে। নির্বাচনী সংহিসতায় সোমবার আহত নৌকা মার্কার সমর্থকের মৃত্যু হয়েছে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতার। সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়নের হরিশ্চন্দ্রকাটি কেন্দ্রে ভোট কারচুপিতে বাধা দেয়ায় চার আনসার সদস্যকে পিটিয়ে আহত করেছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। আহত আনসার সদস্যরা হলেন, মিরাজ, কামরুল, ফরিদা ও নারগিস। ভোট কারচুপি, নির্বাচনে অনিয়মসহ সহিংসতার কারণে সাতক্ষীরা জেলার ৫টি উপজেলার ১৩টি ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। কেন্দ্রগুলো হলো, তালা উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের ভাগবাহ, অভয়তলা ও দাঁতপুর, সদর উপজেলার আলীপুর, মাহমুদপুর, ভাড়াখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, আমিনিয়া দাখিল মাদ্রাসা, কলারোয়া উপজেলার কুশোডাঙ্গা ইউনিয়নের কলাটুপি, দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া ইউনিয়নের খেজুরবাড়িয়া, শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী ইউনিয়নের মেহেদী নগর, মাহজানপুর ও পূর্বখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। জেলার পাঁচটি উপজেলার স্ব স্ব নির্বাহী অফিসার এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। বগুড়া ॥ বিএনপি সমর্থিত ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মিছিল করে পিরব বাজার এলাকায় এসে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়াকে কেন্দ্র করে সেখানে উত্তেজনা দেখা দেয়। এ সময় নিশি নামে এক ব্যক্তি প্রহৃত হয় বলে পুলিশ জানায়। এক পর্যায়ে বিএনপি প্রার্থীর সমর্থকরা আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকদের ধাওয়া করে। রাত ৮টার দিকে বিএনপি প্রার্থীর সমর্থকরা আওয়ামী লীগ সমর্থিত ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল করিমকে তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় ককটেলও বিস্ফোরণ করা হয় বলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী অভিযোগ করেছেন। হামলাকারীরা আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রাইভেটকার ভাংচুর করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ ও শটগানের ফাঁকা গুলি ছোড়ে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ আশুগঞ্জ ও বাঞ্ছারামপুরে ইউপি নির্বাচন চলাকালে সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। এদিকে কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারকে মারধর, প্রকাশ্যে ভোট প্রদান, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্য দিয়ে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। বাঞ্ছারামপুরে উপজেলার সলিমাবাদ ইউনিয়নে সাতবিলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল সোয়া ১১টায় জাল ভোট দেয়া নিয়ে দুই ইউপি সদস্যের সমর্থকরা দেশীয় অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে ব্যালট পেপার, ৪টি ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এ সময় তাদের হামলায় পোলিং অফিসার হেলাল উদ্দিন আহাম্মদসহ ৫ জন আহত হয়। প্রায় ১ ঘণ্টা ভোট গ্রহণ স্থগিত ছিল। বাউফল ॥ কনকদিয়া ইউনিয়নের নারায়ণপাশা সরকারী প্রাইমারী স্কুল কেন্দ্রে দুপুর ১২টায় ১৫-২০ জনের সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ৫টি ব্যালটভর্তি বাক্স ছিনিয়ে নিয়ে ভাংচুর করে পুকুরে ফেলে দেয় এবং ব্যালট পেপার ছিঁড়ে ফেলে। এ ছাড়াও সন্ত্রাসীরা সূর্যমনি ইউনিয়নের নিউ মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও নওমালা ইউনিয়নের নগরের হাট হাইস্কুল কেন্দ্রে হামলা চালালে ওই তিন কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। অপর দিকে ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের নৌকা মার্কার প্রার্থী আমির আলী, বগা ইউনিয়ে ধানের শীষের চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুর গনি সিকদার, ঘোড়া মার্কার চেয়ারম্যান প্রার্থী এএসএম ইউসুফ, কনকদিয়া ইউনিয়নে হাত পাখা মার্কার চেয়ারম্যান প্রার্থী, কালিশুরী ইউনিয়নে ধানের শীষ মার্কার চেয়ারম্যান আবদুর জব্বার রায়হান, কেশবপুর ইউনিয়নে আনারস মার্কার চেয়ারম্যান প্রার্থী তসলিম তালুকদার, কালাইয়া ইউনিয়নে ধানের শীষ মার্কার চেয়ারম্যান প্রার্থী নুর হোসেন খান নির্বাচন বর্জন করেছেন। দৌলতপুর ॥ কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী আশরাফুল ইসলামের দোকানে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও পানির পাম্প মোটরসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার আল্লারদর্গা বাজারে লুটপাটের এ ঘটনা ঘটে। লুটপাটের মালামালের মূল্য প্রায় ৩ লক্ষ টাকা বলে জানা গেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ প্রিসাইডিং অফিসার মোঃ ফজলুল হক কেন্দ্রে হামলার সত্যতা স্বীকার করেন। একই ইউনিয়নের হোসেনপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জাল ভোট দেয়াকে কেন্দ্র ইউপি সদস্য প্রার্থীর মধ্যে দু’পক্ষের সংঘর্ষে কমপক্ষে ৫ জন আহত হয়। গুরুতর আহত মহিউদ্দিন (২৩) কে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তেজখালী ইউনিয়নের হাসননগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ২ ইউপি সদস্য প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষে ৩ জন টেঁটাবিদ্ধসহ ৫ জন আহত হয়। টেঁটাবিদ্ধ শাহ আলম (৫০), মোহাম্মদ আলী (৪৫) ও রতন মিয়া (৪২) কে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। ফরদাবাদ ইউনিয়নে গাওরালতুলি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই ইউপি সদস্য প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষে ৬ জন আহত হয়। বাঞ্ছারামপুরে ইউপি নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনে স্থানীয় বিষ্ণুরামপুর বাজারে বিএনপির মনোনীত ৬ চেয়ারম্যান প্রার্থী সাংবাদিক সম্মেলনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। ভোলা ॥ জেলার ৭ উপজেলার ৪২টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালতের নির্দেশে ৬টি ইউনিয়নে নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় মঙ্গলবার ৩৬টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলার প্রায় কেন্দ্রেই কম বেশি হামলা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, কয়েকটি কেন্দ্রে গুলি, ককটেল বিস্ফোরণ, ব্যালট ও বাক্স ছিনতাইসহ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে তিন নারীসহ ৮ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এছাড়াও তিন পুলিশ সদস্যসহ দুই শতাধিক নারী-পুরুষ আহত হয়েছেন। গুরুতরদের ভোলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া, ভোলায় সংঘর্ষ, গুলি, ককটেল বিস্ফোরণ ব্যালটবাক্স ছিনতাই এবং ৭ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। এ ঘটনায় ৩ পুলিশসহ আহত হয়েছে দুই শতাধিক।
×