ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

বহুমাত্রিক পরিবেশনায় উজ্জ্বল সপ্তাহব্যাপী স্বাধীনতা উৎসব

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৩ মার্চ ২০১৬

বহুমাত্রিক পরিবেশনায় উজ্জ্বল সপ্তাহব্যাপী স্বাধীনতা উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কুড়ি বছর আগের কথা। আটজন দেশপ্রেমিক মধ্যবয়সী মানুষ মিলিত হলেন একাত্তরের স্মৃতিকে ধরে রাখার তাগিদে। সঙ্গে কিছু নিবেদিত প্রাণ কর্মীকে নিয়ে গড়ে তুললেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। সেগুন বাগিচার ছোট্ট ভবনটি হয়ে উঠল একাত্তরের স্মৃতির স্মারক। সারাদেশের মানুষের ভালবাসায় প্রতিষ্ঠানটি পার করেছে প্রতিষ্ঠার বিশ বছর। আর সেই আঙ্গিনা থেকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এখন আগারগাঁওয়ের নিজস্ব বিশাল ভবনে যাওয়ার অপেক্ষায়। এরই মাঝে শেষবারের মতো সেগুন বাগিচার ভবনে মঙ্গলবার শুরু হলো প্রতিষ্ঠানটির ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও সপ্তাহব্যাপী স্বাধীনতা উৎসব। সপ্তাহব্যাপী উৎসবের উদ্বোধনী দিনে ছিল কবিতা আবৃত্তি, স্মারক বক্তৃতা, আলোচনা, নাচ-গান ও নাটক। একাত্তরের চেতনাস্নাত বহুমাত্রিক পরিবেশনায় সূচনা দিনেই উজ্জ্বল হয়ে ওঠে এ উৎসব। উপস্থাপিত হয় বাঙালীর স্বাধীনতা সংগ্রামের আত্মত্যাগ ও বীরত্বগাথা। এ ছাড়া উৎসবের অংশ হিসেবে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের বইমেলা। এক ছাদের নিচে মুক্তিযুদ্ধের হাজার বই ঠাঁই পেয়েছে এ মেলায়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাদুঘরের ট্রাস্টি ডাঃ সারওয়ার আলী। প্রতিষ্ঠানটির শুরুর কথা উল্লেখ করে বলেন, সবারই সাধ থাকে। তবে সাধ আর সাধ্যের মধ্যে পার্থক্য থাকে। ২০ বছর আগে আমরা আটজন ট্রাস্টি ও নিবেদিত কর্মীর মিলিত শ্রমে গড়ে উঠেছিল এই জাদুঘর। আমাদের আকাক্সক্ষা ছিল বাঙালীর মহত্তম কর্ম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা। পাশাপাশি বিশ্বের গণহত্যার মানচিত্রে একাত্তরের গণহত্যার প্রকৃত তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা। সেই লক্ষ্যে আমরা সফল হয়েছি। এখন আমাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ১৮ হাজার স্মারক দলিল রয়েছে। ভ্রাম্যমাণ জাদুঘরের মাধ্যমে সারাদেশের ১০ লাখ ছাত্রছাত্রী সঠিক বিবরণসহ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে পেরেছে। আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে বাংলাদেশের গণহত্যা বিশ্বের কাছে উঠে এসেছে। এখন আমরা নিজস্ব ভবনে জাদুঘর তৈরি করছি। যার মালিকানা সম্পূর্ণটুকুই জনগণের। জনগণের অংশীদারিত্বেই এই নির্মিত হচ্ছে এই জাদুঘর। জাদুঘরের ট্রাস্টি ও সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন তারিক আলীর বার্ষিক প্রতিবেদনের পর ‘কালান্তরের ঘূর্ণিপাকে’ শীর্ষক প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী স্মারক বক্তৃতা দেন প্রাবন্ধিক আবুল মোমেন। তিনি বলেন, কালে কালে ধর্ম নানা গোঁড়ামি ও সঙ্কীর্ণতার ফাঁদে অধর্ম হয়ে উঠছে, বিজ্ঞান-প্রযুক্তির চমকপ্রদ সাফল্যের নিচে চাপা পড়ে মানুষের ভোগ ও বস্তুগত জয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে, শিল্পকলা বিচ্ছিন্নতার কবলে পড়ছে। নতুন দর্শন চাই, অন্তত নতুন দার্শনিক ব্যাখ্যাÑ যা হবে এই বর্তমান ও তাকে ঘিরে যে সঙ্কটের কালো মেঘ ঘনায়মান তাকে উড়িয়ে দেয়ার মতো জোরালো হাতিয়ার। আর তারই সহায়তায় কালান্তরের নতুন বাঙালী তৈরি হবে নতুন প্রজন্ম থেকে। বিকেলের আলোচনা শেষে সন্ধ্যায় শুরু হয় নাচ, গান, নাটক ও কবিতায় সজ্জিত সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। মুদ্রার সঙ্গে অভিব্যক্তির মেলবন্ধনে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে স্পন্দন। ‘জয় সত্যের জয়’, ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি’ ও ‘স্বাধীন স্বাধীন দিকে দিকে’ গানের সুরে নাচ করে এই দলটি। এরপর উজ্জ্বল আকাশের গ্রন্থনা ও নির্দেশনায় ঢাকা স্বরকল্পন পরিবেশন করে ‘এখনও একাত্তর’ শীর্ষক আবৃত্তি প্রযোজনা। দক্ষিণখান আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রথমেই ‘একটি গল্প শোনাবো আজ’ গানের সুরে নৃত্য পরিবেশন করে। এরপর সব কণ্ঠ এক হয়ে গেয়ে শোনায় একাত্তরের চেতনাদায়ী গান ‘আমরা করবো জয়’ ও ‘রক্তের দামে কিনেছি মোরা।’ এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফসানা মিমি ‘আরে ওগো শাশুড়ি মা’ গানের সুরে নৃত্য পরিবেশন করে। আজ বুধবার সপ্তাহব্যাপী এ উৎসবের দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠান শুরু হবে বিকেল পাঁচটায়। এই দিনের আয়োজনে থাকবে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিচারণাসহ দলীয় আবৃত্তি, একক সঙ্গীত ও পথনাটকের পরিবেশনা। এর বাইরে ২৮ মার্চ পর্যন্ত চলমান উৎসবে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলবে মুক্তিযুদ্ধের বইমেলা।
×