ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

একাত্তরের গণহত্যায় ক্ষমা চেয়েছেন পাকিস্তানের তরুণ প্রজন্ম

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৫ মার্চ ২০১৬

একাত্তরের গণহত্যায় ক্ষমা চেয়েছেন পাকিস্তানের তরুণ প্রজন্ম

তৌহিদুর রহমান ॥ ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের তরুণ প্রজন্ম এখন লজ্জিত। সে সময়ে পাকিস্তানী বাহিনীর নৃশংস খুন, ধর্ষণ, অপহরণ ইত্যাদি ঘটনায় অনুশোচনা করে বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন তারা। একই সঙ্গে বাংলাদেশের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার জন্য পাকিস্তান সরকারের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তানের তরুণরা। বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চেয়ে একটি পিটিশনে সই অব্যাহত রেখেছেন তারা। পিটিশনে অনেক তরুণ বলেছেন, সে সময় জামায়াতে ইসলামীর সহযোগিতায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনী বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছে। ‘পাকিস্তানী হিসেবে বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাই’ শীর্ষক পিটিশনে ইতোমধ্যেই পাকিস্তানের পাঁচ শতাধিক তরুণ সই করেছেন। সেখানে ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন তারা। একই সঙ্গে পাকিস্তান সরকারকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তানের তরুণরা। পিটিশনের পাশাপাশি সামাজিক গণমাধ্যম ফেসবুকেও পাকিস্তানী হিসেবে বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাই শিরোনামে একটি পেজ খোলা হয়েছে। সেখানেও ক্ষমা চেয়ে সই অব্যাহত রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের গণহত্যার জন্য দেশটিকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে সামাজিক আন্দোলন শুরু করেছেন পাকিস্তানের তরুণ প্রজন্ম। এই কার্যক্রমের উদ্যোক্তা পাকিস্তানী তরুণ ইমাদুদ্দিন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে যে গণহত্যা হয়েছে, তার দায় পাকিস্তানী তরুণরা নিতে পারেন না। এতদিন পরে এখন এ বিষয়ে কথা বলার সময় এসেছে। আমাদের প্রত্যাশা পাকিস্তান সরকার এ বিষয়ে বাংলাদেশের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইবে। পাকিস্তানের ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত আমাদের উদ্যোগ অব্যাহত রাখব। এ বিষয়ে পাকিস্তানের তরুণ প্রজন্মের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন বলেও তিনি জানান। বৃহস্পতিবার ‘পাকিস্তানী হিসেবে বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাই’ শীর্ষক অনলাইন পিটিশন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পাকিস্তানের ৫১৬ জন তরুণ-তরুণী সেখানে সই করেছেন। বাংলাদেশের গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের কেন ক্ষমা চাওয়া উচিত, সেই যুক্তিও তুলে ধরেছেন তারা। পিটিশনে কেন সই করেছেন সে বিষয়ে তারা ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। পিটিশনে সই করে আমিমা সাঈদী বলেছেন, ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামের সহযোগিতায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনী গণহত্যা চালিয়েছিল। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর গণহত্যা নিয়ে বিভিন্ন ডকুমেন্টারি দেখেছি। এসব দেখে অবাক হয়েছি। একজন পাকিস্তানী হিসেবে আমি লজ্জিত। পাকিস্তানের প্রতিটি মানুষের ওই গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেন। পাকিস্তানী তরুণী সাদিয়া বুখারী লিখেছেন, ১৯৭১ সালে যেসব মেয়ে ধর্ষিত হয়েছে। যেসব মা যাদের সন্তান হারিয়েছে, যেসব স্ত্রী তার স্বামী হারিয়েছে, একজন পাকিস্তানী হিসেবে আমি তাদের কাছে ক্ষমা চাই। আলিশবা নাঈম লিখেছেন, আমি বিশ্বাস করি ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য প্রতিটি পাকিস্তানীর ক্ষমা চাওয়া উচিত। আমরা যদি ক্ষমা চাই তাহলে দুই দেশের মধ্যে যে দূরত্ব রয়েছে, সেটা ঘুচবে। দুই দেশ আরও একযোগে কাজ করতে পারবে। তানভীর খান লিখেছেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী যে গণহত্যা চালিয়েছে, সেটা লজ্জাজনক। আমি আশা করব বাংলাদেশীরা এ জন্য আমাদের ক্ষমা করবেন। আমার আশা বাংলাদেশ শান্তি ও সমৃদ্ধির সঙ্গে আগামীতে আরও এগিয়ে যাবে। জাইন সাদুল্লাহ লিখেছেন, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। তবে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার তাদের সংখ্যা গরিষ্ঠতা অস্বীকার করে। এজন্য ইয়াহিয়া খান ও জুলফিকার আলী ভুট্টোই দায়ী ছিল। আলী আব্বাস বাংলাদেশের মানুষের উদ্দেশ্যে লিখেছেন, দয়া করে আমাদের ক্ষমা করুন। ইয়াসমিন ইদ্রিস লিখেছেন, বাংলাদেশে গণহত্যার জন্য আমাদের অনেক আগেই ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল। তবে দেরিতে হলেও আমরা ক্ষমা চাইছি। এটা শুভ লক্ষণ। ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামীর সহযোগিতায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনী হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। এ জন্য আমি অনুতপ্ত। আমি বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাইছি। পিটিশনে জোহরা আমির লিখেছেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানী বাহিনী যে গণহত্যা চালিয়েছে, সেটা অগ্রহণযোগ্য ও মানবতাবিরোধী। আমাদের এ জন্য অবশ্যই ক্ষমা চাইতে হবে। একজন পাকিস্তানী হিসেবে আমি বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা চাই। হাসান নিজামী বলেন, পাকিস্তানের অবশ্যই ক্ষমা চাইতে হবে আর ক্ষমা চাওয়ার জন্য এটাই উৎকৃষ্ট সময়। ক্ষমা চাওয়ার মধ্য দিয়ে দুই দেশ সামনের দিকে আরও অগ্রসর হতে পারে। ওমাইদ মালিক লিখেছেন, পাপকে কখনই চেপে রাখা যায় না। পাকিস্তানও তার অতীতের পাপ চেপে রাখতে পারবে না। ১৯৭১ সালে যারা গণহত্যা চালিয়েছিল, তাদেরও বিচারের আওতায় আনা উচিত। সেই সময়ের গণহত্যার জন্য প্রতিটি পাকিস্তানীর ক্ষমা চাওয়া উচিত বলেও তিনি মনে করেন।
×