ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৫ মার্চ ২০১৬

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ মার্চ এখন। স্বাধীনতার মাস। বিপুল তাৎপর্যের। এ মাসেই স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। উত্তাল মার্চের ২৫ তারিখ পাকিস্তানের বর্বর বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ঢাকার নিরীহ-নির্দোষ মানুষের ওপর। বর্বর হত্যাকা- চালিয়েছিল। সেই থেকে ২৫ মার্চ কালরাত্রী। এখনও ক্ষত লেগে আছে শহর ঢাকার বুকে। বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর আজ শুক্রবার সে দিবসটির কথা স্মরণ করবে। নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে প্রকাশ করবে প্রিয়জন হারানোর বেদনা। একই সঙ্গে চলছে স্বাধীনতা দিবসের প্রস্তুতি। মাত্র একদিন পর কাল শনিবার ২৬ মার্চ। এরই মাঝে স্বাধীনতা দিবসের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকার আকাশে উড়ছে লাল সবুজের পতাকা। স্বাধীন বাংলা বেতারের গানগুলো বাজছে। ভেসে আসছে অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের কালজয়ী সেই ভাষণ। উৎসব অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উদ্বোধন করা হয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানমালা। ২৬ মার্চ শনিবার পর্যন্ত গোটা শহরেই থাকবে বহুবিধ আয়োজন। সব আয়োজন থেকেই কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করা হবে জাতির শ্রেষ্ঠসন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের। দেশের জন্য প্রাণ দেয়া শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করা হবে। সেই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার শপথ নেবে বাঙালী। স্বাধীনতার মাস যেহেতু, আনন্দের। এ আনন্দকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে পারত বাংলাদেশের ক্রিকেট। বুধবার সে বার্তাই পাওয়া যাচ্ছিল ভারতের ব্যাঙ্গালুরু থেকে। টি-টুয়েন্টি ওয়ার্ল্ড কাপে এদিন বাংলাদেশ মুখোমুখি হয়েছিল ভারতের। বিরাট কোহলি, রায়না, ধাওয়ান, ধনীদের মোটামুটি নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছিল ১১ বাঙালী। ব্যাট হাতেও দারুণ করছিল টাইগাররা। দেখতে দেখতে ম্যাচ হাতের মুঠোয় চলে আসে। সে কী আনন্দঘন সময়! যে কোন মুহূর্তে বিজয় আসবেÑ রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা করেছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ মানুষ। কিন্তু হায়, হলোটা কী! এখনও ভেবে কূল পাচ্ছে না কেউ। হেসে-খেলে জেতার ম্যাচ ১ রানের হার! মুশফিক-মাহমুদুল্লাহরা দর্শকদের বোকা বানিয়ে তবেই মাঠ ছাড়লেন। সেই থেকে সারাদেশের মতো রাজধানী ঢাকায়ও ক্রিকেট একমাত্র আলোচনা। আলোচনা? না। আক্ষেপ। হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচ এভাবে ফসকে যায়? যেতে পারে? বার বার এসব কথা হচ্ছে। তিন বলে যখন দুই রান দরকার তখন কেন চার-ছয় মারতে যাওয়ার বিলাসিতা? কেন যাচ্ছেতাইভাবে আউট হয়ে এলেন মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহর মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান? কেন ক্রিকেটভক্তদের এমন বেদনার সাগরে ভাসতে হচ্ছে? ঢাকাজুড়ে সে আলোচনা। কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে। বেদনার এই স্মৃতি বহুকাল মনে রাখবে বাঙালীÑ এ কথা বলাই বাহুল্য। এবার তনুর কথাটি। তনু বলা হচ্ছে বটে। ওটা ডাক নাম। মূল নাম তার সোহাগী! বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রাইভেট পড়িয়ে যার চলতে হয়, যার প্রাইভেট পড়ানো শেষে নিরাপদে নিজগৃহে ফেরার নিশ্চয়তা থাকে না, প্রেম পায় না যে মেয়ে, যার জন্য ওতপেতে থাকে ধর্ষক, যে নির্মম মৃত্যুর শিকার, যে কালভার্টের নিচে মরে পড়ে থাকেÑ সে মেয়েটির নাম কিনা সোহাগী! হ্যাঁ, কুমিল্লায় ধর্ষণ ও হত্যার শিকার মেয়েটির জন্য, বোনটির জন্য, বন্ধু ও সংস্কৃতি কর্মীটির জন্য এখন শোক করছে সারাদেশের মানুষ। ভিক্টোরিয়া সরকারী কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুকে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল এখন রাজধানী শহর ঢাকা। বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহরে এসে আচড়ে পড়ছে প্রতিবাদের ঢেউ। বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। এতে যোগ দিয়ে বিক্ষুব্ধ সংস্কৃতি কর্মীরা তনু হত্যার বিচারের দাবি জানান। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ, জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফসহ অনেকেই এ সময় উপস্থিত ছিলেন। সকলেই তীব্র ভাষায় ঘটনার প্রতিবাদ জানান। দোষীদের গ্রেফতারে সরকারের সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগের দাবি জানানো হয় সমাবেশ থেকে। একই দাবিতে তখন মুখর শাহবাগ। এখানেও আয়োজন করা হয় প্রতিবাদ সমাবেশের। এতে যোগ দেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। সকলেই ছিলেন বিক্ষুব্ধ। বৃহস্পতিবার তনু হত্যার বিচারের দাবি আরও জোরালো হয়। কুমিল্লা উত্তাল ছিল সারাদিন। ঢাকাও ছিল পাশে। এদিন বিকেলে রাজু ভাস্কর্যের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়ান সাধারণ বিভিন্ন সংগঠনের নারীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে তনু ধর্ষণ ও হত্যার বিচার দাবি করেন। বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যানারে ধারাবাহিক কর্মসূচীও ঘোষণা করা হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, কখন সেই নরপিশাচদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
×