ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অবহেলার শিকার দক্ষ ট্রেন চালকরা চালকরা

প্রকাশিত: ০২:১৬, ২৫ মার্চ ২০১৬

অবহেলার শিকার দক্ষ ট্রেন চালকরা চালকরা

স্টাফ রিপোর্টার, ঈশ্বরদী ॥ দেশে রেলওয়ের দু’অঞ্চলে প্রায় দেড় লক্ষাধিক কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে । এছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হলেও রেল সম্পদ ও যাত্রীদের যানমাল রক্ষাকারী দায়িত্বশীল ট্রেন চালকদের (এলএমদের)চরমভাবে অবহেলা করা হচ্ছে । চলন্ত যাত্রীবাহী ট্রেনকে রক্ষা করলেও তাদেরকে পুরস্কৃত করা হচ্ছেনা । ফলে দক্ষ ও দায়িত্বশীল চালকদের মধ্যে ক্রমান্বয়ে অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে । রেলওয়ের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র ও গণমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে এসব তথ্য জানাগেছে। সূত্রমতে,দেশে রেলওয়ের দু’বিভাগে ব্রডগেজ ও মিটার গেইজ ইঞ্জিনে অন্ততঃ চল্লিশেরও অধিক দক্ষ ও দায়িত্বশীল চালক দীর্ঘদিন থেকে নানা প্রকার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন । শুধুমাত্র তাদের দক্ষতার কারনে মাঝে মধ্যেই যাত্রীবাহী ট্রেন দূর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে এবং অসংখ্য যাত্রীরাও পঙ্গুত্ব বরণ এমনকি প্রাণে রক্ষা পাচ্ছেন । রেল বিভাগের প্রধান সেবক হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত দক্ষ চালকরা (এলএএমরা) দূর্ঘটনামুক্তভাবে ট্রেন চালানো এবং দ্রুতগামী চলন্ত ট্রেনকে দূর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করলেও অবহেলা করে তাদেরকে পুরস্কৃত করা হচ্ছেনা । দু’অঞ্চলের অনঅনুমোদিত অসংখ্য লেভেলক্রসিং গেট রয়েছে । এসব গেটে গেটেম্যান নেই । গেটম্যানও নিয়োগ করাও হচ্ছেনা । উন্নয়ন ও জনসংখ্যাবৃদ্ধির সাথে সাথে অনঅনুমোদিত গেটের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে । এমনকি অনুমোদিত লেভেলক্রসিংগেটেও দক্ষ গেটম্যান নিয়োগ দেওয়া হচ্ছেনা । যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই অযোগ্যতার অভিযোগ রয়েছে । আবার অনেককেই রাজনৈতিক চাপে নিয়োগ দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে । ফলে লেভেলক্রসিংগেটসহ দিনদিন রেলরুটের বিভিন্নস্থানে দূর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আরো বেশী দূর্ঘটনা ঘটারও আশংকা বৃদ্ধি পাচ্ছে । এসব নানা প্রকার সমস্যার মধ্যেও চালকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন । যে কোন ছোট খাটো সমস্যার সৃষ্টি হলেই কর্তৃপক্ষ চালকদের শাস্তি দিয়ে থাকেন । কোন কোন ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণও আদায় করা হয়ে থাকে । অথচ ভালো কাজের জন্য কোন পুরস্কার বা উৎসাহ প্রনোদনার ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছেনা । গত ৫ মার্চ সকালে আন্তঃনগর সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি রাজশাহী থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছাড়ার পর ৭০/৭২ কিঃ মিটার গতিতে চলতে থাকে । ১৩০ মেঃ টন ওজনের যন্ত্রদানব ইঞ্জিনটি ১২ টি যাত্রীবাহী কোচ নিয়ে চলতে থাকে । ট্রেনটি যখন ই/৪৫ নম্বর লেভেল ক্রসিং গেটের ১০০ মিটার দুরে ঠিক তখন গতানুগতিক গেটসিগন্যাল অকার্যকর থাকে । গেটম্যান লাঠিতে জড়ানো লালফ্লাগ বোগলে রেখে সবুজ ফ্লাগ হাতে নিয়ে ট্রেন অগ্রসরের সিগন্যাল দিতে থাকেন । এঅবস্থায় ট্রেন অগ্রসর হতে থাকে । এমন সময় খোলাগেটের উভয় পাশ থেকে দু’টি যাত্রীবাহী বাসকে গেট পার হতে দেখে দক্ষ ও দায়িত্বশীল চালক এমার্জেন্সী ব্রেক ধরে ট্রেনটিকে থামিয়ে দিলে ট্রেন ও বাস দু’টি দূর্ঘটনা মুক্ত হয় । অনেকেই প্রানে রক্ষা পায় এবং অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ থেকে রক্ষা পায় । এমনকি রেল সম্পদও রক্ষা পায় । এঘটনার পর গণমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন মিডিয়ায় ট্রেনচালকের পক্ষে প্রশংসার ঝড় ওঠে । কর্তৃপক্ষও বিষয়টি সঠিক বলে তদন্তে প্রমান পায় । দোষী ও অযোগ্য গেটম্যানের শাস্তি দেওয়া হয়েছে কিনা তা জানা না গেলেও চালককে এখন পর্যন্ত উৎসাহ প্রনোদোনা বা পুরস্কৃত করা হয়নি ।
×