ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এমন হার!

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২৬ মার্চ ২০১৬

এমন হার!

খেলায় হার-জিত থাকে। তবু নিজের দলের হার মানতে চায় না কেউ। খেলাচ্ছলে কত কথাই বলে লোকে, প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতেও ছাড়ে না। কিন্তু খেলা শুরু হলে খেলার আনন্দ ছাপিয়ে, উত্তেজনা উজিয়ে কখনও কখনও দর্শকরা সিরিয়াস হয়ে ওঠে। তখন খেলা যেন আর সামান্য খেলা থাকে না। হয়ে ওঠে মান-সম্মানের ব্যাপার। ক্ষণে হাসি, ক্ষণে কান্না, ফের গভীর গম্ভীর হয়ে যাওয়াÑ হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে উৎকণ্ঠা ও উপভোগের আনন্দÑ সব ম্যাচেই এমন অভিজ্ঞতা হয় না। আবার শেষতম বলেও জয়-পরাজয় নির্ধারণ হয় না। সর্ববিচারে বুধবারে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাংলাদেশ-ভারতের ম্যাচটি তাই দারুণ ব্যতিক্রম। বাংলাদেশ ক্রিকেটে দারুণ উন্নতি করেছে। বিশ্বের বাঘা বাঘা খেলোয়াড় আর ক্রীড়াবিশ্লেষকরা বাংলাদেশের উন্নতিতে বিস্ময়মিশ্রিত ভাললাগার কথা প্রকাশ করছেন। বাংলাদেশ দলও হাওয়ায় ভাসছে। যদিও কখনও কখনও তারা বাস্তবের মাটিতে নেমে আসতে বাধ্য হচ্ছে। কখনও কখনও টাইগাররা অনুধাবনে সক্ষম হচ্ছে তাদের সত্যিকারের শক্তি কতটুকু, তাদের অভিজ্ঞতার সীমানা কতদূর বিস্তৃত। নিজেদের দিকে ফিরে তাকানোর এবং একইসঙ্গে নিজেদের উন্নয়নের মোক্ষম সুযোগটি এভাবেই এলো বুধবার রাতে। শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি টাইগারদের নিজেদের শক্তিমত্তার জায়গাটি যেমন তুলে ধরেছে, তেমনি দুর্বলতার দিকগুলোও খোলাসা করে দিয়েছে। তবে ভারতের সঙ্গে তারা হেরে গেলেও এই হার ছিল জয়ের খুব কাছাকাছি, বলা যায় স্বল্পতম দূরত্বের। মাত্র ১ রানের জয় পেয়েছে ভারত। আর এই জয় বের করার জন্য কী ঘামটাই না তাদের ঝরেছে। মনেই হয়নি যে ভারত হলো টি-টোয়েন্টির নাম্বার ওয়ান টিম। আর তাদের প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ এমন একটি দল যারা টি-টোয়েন্টিতে তাদের কখনোই হারাতে পারেনি! ভারতের রান সংগ্রহও ছিল সেদিন প্রতিপক্ষ বাংলাদেশের বিপক্ষে সবচেয়ে কম। বুধবার রাতে বাংলাদেশ দলের হার মেনে নিতে কষ্ট হয়েছে দেশবাসীর। কারণ এই ম্যাচটিতে জিততে জিততেই হেরে গিয়েছে টাইগাররা। তারা দুর্দান্ত বল করেছে। ভারতের বিশ্বসেরা সব ব্যাটসম্যান একের পর এক ফিরে গেছে সাজঘরে। আমাদের তরুণ তুর্কী আল আমিনের সামনে হ্যাটট্রিকের হাতছানিও ছিল। অপরদিকে ব্যাট হাতে নেমে তামিম-সাকিবরাও দারুণ ব্যাট করেছে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি তাদের। তীরে এসে ডুবেছে তরী। এটা রীতিমতো অবিশ্বাস্য, অপ্রত্যাশিত। জয় তখন হাতের মুঠোয়। তিন বলে প্রয়োজন মাত্র দুই রান। অথচ মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ দু’জনই টানা দুটি ফুলটস বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে লেগে ক্যাচ! সে সময় ধারাভাষ্য দিতে থাকা সুনীল গাভাস্কারের মতে যেটি ‘গ্ল্যামারাস শট খেলতে গিয়ে আত্মহত্যা’। শেষ তিন বল নিয়ে ভারতীয় অধিনায়কের বিশেষ পরিকল্পনার কথা মিডিয়ায় এসেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য সেসময় ক্রিজে অবস্থানকারী আমাদের দুই সেরা ব্যাটসম্যান তাদের সুনামের প্রতি সুবিচার করেননি। রানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য তিন বলে যে ধরনের শট খেলার কথা, তারা সেভাবে খেলেননি। অথচ ভারতীয় অধিনায়ক ওই ওভারটিতে মুহুর্মুহু মিটিং করেছেন বোলারের সঙ্গে। এখানেই অভিজ্ঞতার এগিয়ে থাকা। বাংলাদেশ হেরেছে বটে, কিন্তু অর্জন করেছে বিশেষ বিরল অভিজ্ঞতা। এ থেকে যদি তারা শিক্ষা নেয় ও কাজে লাগায় তবে দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের সমর্থনও তারা পাবে, পাবে অকৃত্রিম ভালবাসা।
×