ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পদ্মা সেতু নিয়ে তৈরি হচ্ছে অফিসিয়াল ডকুমেন্টারি

প্রকাশিত: ০৪:২০, ২৬ মার্চ ২০১৬

পদ্মা সেতু নিয়ে তৈরি হচ্ছে অফিসিয়াল ডকুমেন্টারি

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ ॥ পদ্মা সেতুর নির্মাণযজ্ঞের গতি ছড়িয়ে পড়ছে চারিদিকে। চলমান কাজের পাশাপাশি আসন্ন বর্ষাকে মোকাবেলা করে সেতুর নির্মাণ গতি ধরে রাখতে দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞরা হরদম ব্যস্ত রয়েছেন। পদ্মা সেতুর নির্মাণযজ্ঞ বর্ষায়ও স্বাভাবিক থাকবে। নিয়মিত সভায় সেতুর কাজ নিয়ে খুটিনাটি আলোচনায় এসব বিষয় উঠে আসে। সব সমস্যা ছাপিয়ে এ কর্মকে এগিয়ে নিতে এবং বর্ষা মোকাবেলার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। তাই নদী শাসনের কাজের গতি আরও বাড়ানো হচ্ছে। ইতোমধ্যেই পদ্মার পানি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। মূল বর্ষার আগেই নদী শাসনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এদিকে পদ্মা সেতু প্রকল্পের অফিসিয়াল ডকুমেন্টারি হচ্ছে। পুরো ডকুমেন্টারিটির জন্য ইমপ্রেস টেলিফিল্মকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পাঁচ বছরের জন্য ডকুমেন্টারি তৈরি করতে ইমপ্রেস টেলিফিল্মের সঙ্গে প্রায় ছয় কোটি টাকার চুক্তি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু হলেও কাল রবিবার থেকে মাঠপর্যায়ে এ কাজ শুরু হবে। ছয় মাস অন্তর এটি আপডেট করা হবে। আর প্রকল্প শেষ হওয়ার পর পুরো সেতুর ডকুমেন্টারি সম্পন্ন করা হবে। বিশ্বের অন্যান্য বড় প্রকল্প নিয়ে যেভাবে ডকুমেন্টারি তৈরি করা হয় এবং ডিসকভারির মতো চ্যানেলগুলোতে যেভাবে প্রচার করা হয়, এটি সেভাবেই করা হচ্ছে। বাঙালী জাতির সাফল্যগাথা এ প্রকল্পকে ইতিহাসে সঠিকভাবে ধরে রাখার জন্যই এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর পাঁচটি প্যাকেজের কাজই এগিয়ে চলেছে। মাওয়া প্রান্তের মতো জাজিরা প্রান্তেও এখন চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। পদ্মাজুড়ে কর্মযজ্ঞ ছাড়াও তীরের কাজও চলছে সমান তালে। আর নদী শাসনের কাজ চলছে আরও ব্যাপকভাবে। কাওড়াকান্দি ফেরিঘাট কাঁঠালবাড়ি ঘাটে সরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে। তাই কাঁঠালবাড়ি ঘাট থেকে খুলনা সড়কে যোগাযোগের সুবিধার্থে নবনির্মিত পদ্মা সেতুর ৮ কিলোমিটার এ্যাপ্রোচ রোড খুলে দেয়ার উপযোগী করার কাজও এগিয়ে চলছে। সেতুটির ৩৭, ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলারে পাইল স্থাপনের কাজ পুরোদমে চলছে। এ পয়েন্টগুলোতে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। ৩৯ নম্বর পিলারে পাইল ড্রাইভ করার সব চূড়ান্ত প্রায়। ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট তাদের কাজ করে যাচ্ছে। যুক্তরাজ্যের হাই পয়েন্ট রেন্ডেল নামের প্রতিষ্ঠানটি কাজে যোগ দেয়ার পর নির্মাণ কাজের ব্যবস্থাপনায় আরও উন্নতি হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এদিকে করলী চরে সাপ্লিমেন্টারি কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড স্থাপনের কাজ আরও এগিয়েছে। মাওয়ার পাশের কুমারভোগের মূল কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরত্বের এ ইয়ার্ড দ্রুত সম্পন্ন করা হচ্ছে নানা কারণে। এখান থেকেই আসন্ন বর্ষায় মূল সেতুর কাজ পরিচালিত হবে জাজিরা প্রান্তে। সেতু সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিশ্বের বিশাল এবং প্রমত্তা নদীগুলোর একটি পদ্মা। এই নদীর দু’তীরের সেতুবন্ধন তৈরি করতে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগিয়ে চলছে পদ্মা সেতুর কাজ। পদ্মার যে স্থানে সেতুটি নির্মিত হবে সেখানে নদী প্রায় ছয় কিলোমিটার প্রশস্ত। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ছয় দশমিক পনের কিলোমিটার। এটি হবে দক্ষিণ এশিয়ার কোন নদীর ওপর নির্মিত দীর্ঘতম সেতু। পদ্মা সেতু শুধু সড়ক সেতু নয়। একই সঙ্গে এই সেতুর ওপর দিয়ে যাবে ট্রেন। এছাড়াও যাবে গ্যাসপাইপ লাইন এবং বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন। দুই তলা ব্রিজের ওপর দিয়ে যাবে গাড়ি, আর সেতুর নিচের লেভেলে থাকবে ট্রেন লাইন। পদ্মা এক অস্থির নদী। দুই তীরে ভাঙ্গাগড়া চলে প্রতিবছর। বর্ষাকালে পদ্মা নদীতে স্রোতের বেগ এত বেশি থাকে যে, সেতুর নক্সা করার সময় প্রকৌশলীদের কাছে এটি এক বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। একদিকে গঙ্গা, আরেকদিকে ব্রহ্মপুত্রÑ দক্ষিণ এশিয়ার এই দুটি বিশাল এবং দীর্ঘ নদীর অববাহিকার পানি এই পদ্মা দিয়েই বঙ্গোপসাগরে নামছে। পদ্মায় প্রতি সেকেন্ডে প্রবাহিত হচ্ছে এক লাখ ৪০ হাজার ঘনমিটার পানি। উজান থেকে নেমে আসা এই স্রোতের ধাক্কা সামলাতে হবে সেতুটিকে। তাই নদীর দুই তীরে নদীশাসনে প্রচুর অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পলি বহন করে এই দুই নদী। বলা যেতে পারে এই দুই নদীর পলি জমেই গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের অনেকখানি অঞ্চল। এই সেতুর নক্সা করার ক্ষেত্রে এই নদীবাহিত পলির বিষয়টিকে বিবেচনায় নিতে হয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মিত হচ্ছে এমন এক অঞ্চলে যেখানে ভূমিক¤েপর ঝুঁকিও আছে। এ নিয়ে সেতুর নক্সা তৈরির আগে বিস্তর সমীক্ষা করা হয়েছে। সেতুর নক্সাটিকে এজন্য ভূমিক¤প সহনীয় করতে হয়েছে। নদী শাসনের জন্য তৈরি করা হচ্ছে কংক্রিটের ব্লক। পদ্মা সেতুর ভিত্তির জন্য পাইলিংয়ের কাজ করতে হবে নদীর অনেক গভীরে। বিশ্বে কোন নদীর এতটা গভীরে গিয়ে সেতুর জন্য পাইলিংয়ের নজির খুব কম। স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি শুক্রবার পদ্মা সেতু এলাকা ঘুরে জানান, বাঙালীর সাফল্যগাথাকে ছড়িয়ে দিতে পদ্মা সেতুকেন্দ্রিক পরিকল্পিত নানা উদ্যোগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পরিকল্পিতভাবেই সেতুটির কাজ এগিয়ে চলেছে। সব কিছু মিলিয়ে দিন যত যাচ্ছে সম্ভাবনাও তত বেশি ঝিলিক দিচ্ছে। মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল হাসান বাদল জানান, রেলের জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দেশের সর্ববৃহৎ এ প্রকল্পে কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে।
×