ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শেষ খেলায় এমন হার চায়নি কেউ

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৭ মার্চ ২০১৬

শেষ খেলায়  এমন হার  চায়নি  কেউ

মিথুন আশরাফ, কলকাতা থেকে ॥ একের পর এক ম্যাচে হার হয়েছে। ভারতের বিপক্ষে জয়ের এত কাছে গিয়েও নিশ্চিত জয় হাতছাড়া হয়েছে। কষ্ট পেয়েছে ক্রিকেটপ্রেমীরা। মনক্ষুণœও হয়েছে। হতাশাতেও ডুবেছে। এরপরও দলকে সমর্থন দিয়ে গেছে। কারণ, বাংলাদেশ যে ভাল খেলেছে। কত আশা ছিল। স্বপ্ন ছিল। শেষ বেলায় এসে নিউজিল্যান্ডকে হারাতে না পারলেও ভাল খেলার ধারাবাহিকতা রাখবে বাংলাদেশ দল। কিন্তু এ কি হলো! একেবারে লজ্জা নিয়ে মাঠ ছাড়ল মাশরাফিরা। টি২০ ক্রিকেটে নিজেদের ইতিহাসের সর্বনি¤œ ৭০ রানেই অলআউট হয়ে গেল। নিউজিল্যান্ডের কাছে ৭৫ রানের হারও হলো। যে হারটি টি২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হারও হয়ে থাকল। এমনভাবে খেললেন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা যেন তাদের মধ্যে তাড়াহুড়া কাজ করল। কোনভাবে ম্যাচটি শেষ করতে পারলেই বাঁচেন। ব্যাটসম্যানদের জন্য কত সুন্দর বাগান তৈরি করে দিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। একাই ৫ উইকেট তুলে নিয়ে নিউজিল্যান্ডকে ১৪৫ রানের বেশি করতে দিলেন না। অথচ সেই বাগান ব্যাটসম্যানদের ছন্নছাড়া ব্যাটিংয়ে তছনছ হয়ে গেল। ১৫.৪ ওভারে ৭০ রান করতেই অলআউট হয়ে গেল বাংলাদেশ। শুভাগত হোম (১৬), সাব্বির রহমান (১২) ও মোহাম্মদ মিঠুন (১১) শুধু দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারলেন। দলে এত ব্যাটসম্যান থাকতেও সবাই আসা-যাওয়ার মিছিলেই সামিল হলেন। ব্যাট হাতে নামলেন। আর সাজঘরে ফিরলেন। কি সব শট খেললেন। তাতেও লজ্জা মিশে থাকল। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের আগে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেছিলেন, ‘আমাদের হারানোর কিছু নেই।’ কিন্তু শনিবার যখন ম্যাচ শেষ হলো, তখনতো সবই হারালেন মাশরাফি ও তার দল। দলের প্রতি যে শ্রদ্ধা, ভালবাসা ছিল। সবও কি দিনটিতে হারালেন না! নিউজিল্যান্ড যখন ১৪৫ রান করল, তখন সবার ভেতর একটা আশা জাগল। বাংলাদেশ জিতেও যেতে পারে। বাংলাদেশ পেসাররা একচেটিয়া যে নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের চাপে রেখেছেন, তাতে করে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের অন্তত লড়াই করার কথা। কিন্তু লড়াই দূরে থাক, ধারেকাছেও দলকে নিয়ে যেতে পারল না ব্যাটসম্যানরা। কি যে ব্যাটিং করল। শুরু থেকেই মারমুখী হয়ে ব্যাটিং করতে থাকল। ৪ রানে যখন তামিম ইকবাল (৩) রানআউট হয়ে গেলেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই একটু উইকেট আঁকড়ে খেলা দরকার ছিল। কিন্তু না, ২৯ রানে গিয়ে অফ স্ট্যাম্পের বলটিকে যে কিভাবে খেলতে চাইলেন মোহাম্মদ মিঠুন (১১); মনে হলো ‘পাড়া মহল্লা’র কোন ব্যাটসম্যান ব্যাটিং করছে। হয় না এমন, পাড়া-মহল্লায় কিছু এলোপাতাড়ি শট খেলা ব্যাটসম্যান থাকে, তাদের বলা হয় ‘লাগলে ছক্কা, না লাগলে ফক্কা’। সেই রকমই যেন মিঠুনের বেলাতে শনিবার প্রযোজ্য হলো। শুধু মিঠুন কেন সাকিব আল হাসান (২), সাব্বির রহমান (১২), সৌম্য সরকার (৬), মুশফিকুর রহীম (০) ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদওতো (৫) একই রকম কাজ করলেন। দলের সেরা ব্যাটসম্যান তারা। অথচ মাত্র ১৯ রানের মধ্যে ৫ উইকেটের পতন ঘটে গেল। মনে হলো, সেধে সেধে আউট হয়ে আসলেন। ৪৮ রানে যখন ৭ উইকেট হারাল বাংলাদেশ, তখনই বোঝা গেল; লজ্জার একটি দিনের দেখা মিলতে যাচ্ছে। সেই দিনটিই আসল। বাকি তিন উইকেটে ২২ রান যোগ করতে পারল বাংলাদেশ। তাও সম্ভব হল ভারতের বিপক্ষে ১ রান যিনি নিতে পারেননি; সেই শুভাগত হোমের জন্য। একদিকে মাশরাফি (৩), মুস্তাফিজ (৬) ও আল আমিন (০) আউট হতে থেকেছেন; আরেকদিকে যতটুকু সময় পেয়েছেন, রান করে গেছে শুভাগত। তাতে দল ৭০ রানে পৌঁছাতে পারল। সেই রান বাংলাদেশকে লজ্জা থেকে মুক্তি দিতে পারল না। শেষবেলায় এসে ভাল কিছুর আশায় থাকল সবাই। কিন্তু মিলল কি টানা চার ম্যাচে হারের সঙ্গে লজ্জাও! নিউজিল্যান্ড যখন ব্যাটিং করছিল, তখন কলকাতার ইডেন গার্ডেনে অবশেষে ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ গর্জন শোনা গেল। প্রতিপক্ষ যে কোন এশিয়ার দল নয়। না ভারত, না পাকিস্তান, না শ্রীলঙ্কা। তাহলে নিশ্চিত বাংলাদেশের বিপক্ষেই থাকত কলকাতাবাসী। অবাক করা হলেও যেমনটি পাকিস্তানের বিপক্ষে দেখা গিয়েছিল। এবার প্রতিপক্ষ দল ছিল নিউজিল্যান্ড। তাই বাংলাদেশের পক্ষেই ছিলেন কলকাতাবাসীও। কিন্তু সেই সমর্থন নিউজিল্যান্ডের ইনিংস পর্যন্তই দেখা গেছে। বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হতেই যে ব্যাটসম্যানদের একের পর এক উইকেট যাওয়াতে মাঠ থেকেই বের হয়ে যেতে থাকেন দর্শকরা। নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে বাংলাদেশ পেসাররা কিউই ব্যাটসম্যানদের দুর্দান্তভাবে চেপে ধরেন। ১৫ ওভারে গিয়ে ৯৯ রান করে নিউজিল্যান্ড। আবার ৩টি উইকেটও যায়। উইকেট হয়তো তখন খুব বেশি নিতে পারেনি বাংলাদেশ বোলাররা, তবে রানও হতে দেয়নি। এমনই অবস্থা হয় নিউজিল্যান্ডের, মারমুখী হয়ে খেলা ছাড়া আর কোন গতিই নেই। তা করতে গিয়ে টপাটপ উইকেট পড়তে থাকে। শুরুতে উইলিয়ামসন ৪২, কলিন মুনরো ৩৫ ও রস টেইলর যে ২৮ রান করেন, তাদের তিনজনের এ ব্যাটিংই শেষ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের ভরসা হয়ে থাকে। শেষে যে এক ব্যাটসম্যানও দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেননি। পারবেন কিভাবে? শুরুতে ২টি উইকেট নেয়া মুস্তাফিজ যে শেষে আরও বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন। ৩ উইকেট তুলে নেয়ার পর শেষ ওভারে বল করতে এসে চতুর্থ ও পঞ্চম বলে টান দুই উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিকের আশাই পূরণ করেন। টি২০ বিশ্বকাপে এক ম্যাচে উইকেট শিকারীদের তালিকায় সবার ওপরে থাকা মুস্তাফিজ কি ঝলকই না দেখান। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবার খেলতে নেমেই টি২০ ক্যারিয়ারে সেরা বোলিং করে বসেন। ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে ৫ উইকেট তুলে নেন। তার সঙ্গে আল আমিনের (২/২৭) দুর্দান্ত বোলিং যুক্ত হয়ে নিউজিল্যান্ডকে কম রানে বেঁধে রাখা যায়। কিন্তু এ রানও যে বাংলাদেশের জন্য পাহাড়সমান, তা তখন কেউই বুঝেনি। যেখানে জয়ের স্বপ্ন দেখা হয়, সেখানে কিনা উল্টো লজ্জা মিলল। এত ভাল খেলতে থাকা একটি দল কিছুই না হারানোর ম্যাচে এসে সব হারিয়ে বসল! ভাল খেললে মুস্তাফিজের অসাধারণ বোলিংটি নিয়েই কত আলোচনা হতো। দলের প্রশংসাতেও সবাই পঞ্চমুখ হতো। অথচ এখন লজ্জা নিয়ে মাঠ ছাড়ায় সেটি সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে স্থান করে নিল। হায়রে বাংলাদেশ দল, কখন যে কি করে, তা বোঝাই যেন দায় হয়ে দাঁড়াল!
×