ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পর্যবেক্ষণে সন্দেহভাজনরা

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৭ মার্চ ২০১৬

পর্যবেক্ষণে সন্দেহভাজনরা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় সন্দেভাজনদের নজরদারিতে রেখেছেন তদন্তকারীরা। কার্যালয়ের ভেতর বা বাইরে তারা কী করছেন, তা দেখা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন ভবনের অষ্টম ও নবম তলায় সাদা পোশাকের গোয়েন্দারা সবসময় ঘুরঘুর করছেন। সন্দেহভাজনরা যাতে দেশের বাইরে যেতে না পারেন, সেজন্য বিমানবন্দর ও সীমান্তে বার্তা পাঠানো হয়েছে। সন্দেহভাজনরা ব্যাংকের ডিলিং রুম ও আইটি শাখায় কর্মরত বলে জানিয়েছেন তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নিউইয়র্ক থেকে রিজার্ভের অর্থ চুরির বিষয়ে জানানো হলেও ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন ব্যাংকেরই কিছু অসাধু কর্মকর্তা। তদন্তের শুরুর দিন থেকেই সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তিদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিআইডি। বেশ কয়েকজনকে ডেকে মালিবাগের কার্যালয়ে আনা হয়। কাউকে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেয়া হলেও অনেককেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা কিংবা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ সময় সন্দেহভাজন এসব কর্মকর্তাকে বাসা থেকে খাবার এনে খাওয়ানো হয়। তাদের কম্পিউটার থেকে পাওয়া যেসব তথ্যে গরমিল পাওয়া যাচ্ছে, সে ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কিন্তু তারা তেমন কোন তথ্য দিচ্ছেন না। তারা প্রতিদিন কখন অফিসে আসছেন, অফিসে কোন ধরনের কাজ করছেন, কার সঙ্গে কী কথা বলেছেন, মোবাইল বা টেলিফোনে কী ধরনের আলাপ করছেন, সেসব অতি গোপনে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। অফিস শেষে বাসায় যাচ্ছেন নাকি অন্য কোন কাজ করছেন, কোথায় যাচ্ছেন তাও গোপনে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের মোবাইলের কললিস্টও দেখা হচ্ছে। সন্দেহভাজনরা দেশের বাইরে না যান, গেলেও যেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে যান, সে ব্যাপারেও তাদের বলা হয়েছে। এ রকম ১০/১২ জন সন্দেহভাজনের মধ্যে কয়েক জন যেন কোনভাবেই দেশের বাইরে না যান, সেজন্য কঠোরভাবে বলা হয়েছে। এদের ব্যাপারে ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তবে তারা কারা, এ ব্যাপারে এখন পুরোপুরি নিশ্চিত না হওয়ায় নির্দিষ্ট করে কিছুই বলা যাচ্ছে না। অবশ্য তাদের কম্পিউটার থেকে যেসব তথ্য নেয়া হয়েছে, তা সিআইডির বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের দিয়ে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এরপরই নিশ্চিত হওয়া যাবে তারা কোন ধরনের অপরাধ করেছেন। এ ব্যাপারে মালিবাগের সিআইডি কার্যালয়ে কথা হয় মামলার তদারককারী কর্মকর্তা এবং পুলিশের ডিআইজি শাহ আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এ দেশে বা ব্যাংকের ভেতরে তদন্তের জন্য যা কিছু দরকার তার সবকিছু গুছিয়ে আনা হয়েছে। একই সঙ্গে নেপথ্যে কী ঘটেছিল তা অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ঘটনায় বিদেশীদের সংশ্লিষ্টতা আছে। এ কারণে মামলার তদন্তে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই মিডিয়া ডেকে সব কিছু বলা হবে।’ ঘটনার শুরু থেকে তদন্ত করছে সিআইডির এমন একটি সূত্র জানায়, তদন্তের স্বার্থে ব্যাংক থেকে সবকিছু পাওয়া গেলেও তদন্তে ব্যাঘাত ঘটছে। কেননা এ ঘটনায় আরও তিনটি দেশের অপরাধী জড়িত। অপরাধীদের কাছ থেকে এবং ব্যাংক থেকে তথ্য পেতে বার বার তাগাদা দেয়া হলেও ওসব দেশ থেকে কোন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে মন্ত্রণালয় বা সরকারের পক্ষ থেকেও ওসব দেশে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আরও তথ্য না আসলে যেমন তদন্ত পুরোপুরি শেষ করা যাবে না, তেমনি তদন্তের পূর্ণতাও আসবে না। এখন ওসব দেশ থেকে তথ্য পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন তদন্তকারীরা। আবার ওসব দেশে কিছু আইনী বাধ্যবাধকতাও আছে। এ কারণে ব্যাংক বা ওই দেশগুলো তথ্য দিতেও গড়িমসি করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, ঘটনার দিন ব্যাংকের সিস্টেমের মধ্যে একটা ম্যালওয়্যার ঢুকেছিল। কীভাবে ঢুকেছিল, কোত্থেকে ঢুকেছে, কেমন করে ঢুকেছে- এর জন্য আন্তর্জাতিক ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা তদন্ত করছেন। এখানে যে সুইফট সিস্টেমের কথা বলা হচ্ছে, সেটা অত্যন্ত নিরাপদ একটা ব্যবস্থা। এখানে ম্যালওয়্যার কীভাবে ঢুকল, সেটা দেখছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। ভেতরের কেউ জড়িত ছিলেন এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ফিলিপিন্সের পত্রিকা ইনকোয়ারারের প্রতিবেদনে জানানো হয়, নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে গচ্ছিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হাতিয়ে নিতে চেয়েছিল হ্যাকাররা। এ প্রচেষ্টায় দুই ধাপে প্রায় ১০১ মিলিয়ন ডলার লোপাট করলেও ৮৭০ মিলিয়ন ডলার পাচারে ব্যর্থ হয় তারা। এতে আরও জানানো হয়, সুইফট মেসেজিং সিস্টেমে জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চুরি করা অর্থ ফিলিপিন্সে ও শ্রীলঙ্কার ব্যাংকে স্থানান্তরিত হয়। এর মধ্যে ফিলিপিন্সের রিজাল ব্যাংকের এ্যাকাউন্টে নেয়া ৮ কোটি ডলার, যা ক্যাসিনোর মাধ্যমে হংকংয়ে পাচার করা হয়েছে। এ ঘটনা প্রায় এক মাস ধামাচাপা দিয়ে রাখে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। যে কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর আতিউর রহমান পদত্যাগ করেন। প্রয়োজনে তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।
×