ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কিউই লজ্জায় পরাজয়ের বৃত্ত পূরণ

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ২৭ মার্চ ২০১৬

কিউই লজ্জায় পরাজয়ের বৃত্ত পূরণ

স্পোর্টস রিপোর্টার, কলকাতা থেকে ॥ ‘মুস্তাফিজ দুর্দান্ত বোলিং করবেন। আবার ব্যাটিংটাও করে দেবেন!’ ৫ উইকেট নেয়ার পর যখন মুস্তাফিজ ব্যাট হাতে নেমেই ছক্কা হাঁকালেন, তখন ভারতের সাংবাদিকরা এমনই বলতে শুরু করলেন। তাতেই বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা কি খারাপ ব্যাটিংটাই না করলেন। খারাপ ব্যাটিং মানে, এতো রীতিমত লজ্জা! টি২০তে নিজেদের ইতিহাসের সর্বনিম্ন ৭০ রানে গুটিয়ে গেল বাংলাদেশ। হারও হল ৭৫ রানের বড় ব্যবধানেই। তাতে করে লজ্জাতেই বিশ্বকাপ শেষ করল বাংলাদেশ। এতদিন বিশ্বকাপে টানা তিন ম্যাচে হার হলেও ভাল খেলায় সাধুবাদ মিলছিল। কিন্তু এবারতো নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে দেশবাসীকে লজ্জাই উপহার দিলেন মাশরাফিরা! নাসির হোসেনের জন্য হতাশারই বিশ্বকাপ গেল। বাংলাদেশ একের পর এক ম্যাচ হারল। নাসির একাদশেও থাকতে পারলেন না। কিছুই করতে পারলেন না। শেষ পর্যন্ত যখন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হার হল, সেখানেও নাসির একাদশের বাইরেই থাকলেন। বোলিং এ্যাকশন অবৈধ হয়ে সাময়িক নিষিদ্ধ হওয়ায় বিশ্বকাপটি তাসকিন আহমেদ, আরাফাত সানির জন্য বিভীষিকাময় হয়ে উঠল। আর নাসিরের জন্য হয়ে উঠল যেন কষ্টকর, দুঃখময়। শেষবেলায় এসে দলের জন্যতো বিশ্বকাপটা কালো অন্ধকারেই ঢেকে গেল। ঠিক যেমনটি ইডেন গার্ডেনের একটি ফ্লাড লাইট ১৩ মিনিট বন্ধ থাকায় স্টেডিয়াম অন্ধকার হয়ে উঠল। শেষে এসে কিউইদের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে এতটাই খারাপ খেলল বাংলাদেশ, তাতেতো আসলে লজ্জার ছিটেও লাগল। ব্যাটসম্যানরা শুধু আসা-যাওয়ার মিছিলেই যেন সামিল হলেন। মনে হল ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দেশে যাওয়ার কি তাড়া! কোনরকমে ম্যাচটা শেষ করতে পারলেই বাঁচেন। ১৯৮৭ সালের পর নিউজিল্যান্ড কখনই কোন ফরমেটেই কলকাতার ইডেন গার্ডেনে খেলেনি। এরআগে যে তিনটি ম্যাচ খেলেছে, সেটি ১৯৫৫, ১৯৬৫ ও ১৯৮৭ সালে। সেখানে বাংলাদেশ এ মাসের ১৬ তারিখেই খেলেছে। নিউজিল্যান্ড ইডেন গার্ডেনে কখনই হারেনি। আর বাংলাদেশ ১৯৯০ ও এবার টি২০ বিশ্বকাপে খেলে দুটি ম্যাচেই হেরেছে। বর্তমান দলের ক্রিকেটাররা জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ইডেন গার্ডেনে দ্বিতীয়বার খেলল। বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে হারের পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও হারল। সেই হারে আবার লজ্জাও যুক্ত হয়ে থাকল। ২০১০ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচেই সর্বনিম্ন ৭৮ রানে অলআউট হয়েছিল বাংলাদেশ। মাত্র ৬ ওভারেই খেলা শেষ করে দিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। এবার অল্প রান করে গুটিয়ে গেল বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ সেই নিউজিল্যান্ডই। আবার ম্যাচটি টি২০ বিশ্বকাপেরও! টস জিতে নিউজিল্যান্ড আগে ব্যাট নেয়। ওপেনার মার্টিন গাপটিলকে বিশ্রামে রাখে নিউজিল্যান্ড। তাকে ছাড়াই খেলতে নেমে জিতে। ভারতের বিপক্ষে যে একাদশ ছিল, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও একই একাদশ খেলানো হয়। নাসির হোসেন শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপে খেলার সুযোগই পেলেন না। তবে স্কোরবোর্ডে যখন ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৪৫ রান জমা করল নিউজিল্যান্ড, তখন মনে আশা জাগল। বাংলাদেশ জিতেও যেতে পারে। মুস্তাফিজুর রহমান কি দুর্দান্ত বোলিংই না করলেন। ভারতের মাটিতে টি২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৫ উইকেট নিলেন। সেরা বোলার হয়েই থাকলেন। তার এ বোলিংয়ে নিউজিল্যান্ডও খুব বেশি রান স্কোরবোর্ডে জমা করতে পারল না। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা এ কি করলেন! একজন ব্যাটসম্যানও ২০ রান করতে পারলেন না! শুভাগত হোমের ব্যাট থেকে আসল সর্বোচ্চ অপরাজিত ১৬ রান! ৩ উইকেট করে নিয়ে মিডিয়াম পেসার গ্র্যান্ট ইলিয়ট ও স্পিনার ইস সোধিই ডুবিয়ে দিলেন। বাংলাদেশ ১৫.৪ ওভারে ৭০ রান করতেই অলআউট হয়ে গেল। লজ্জা আর লজ্জাই যুক্ত হল। কি দুর্দান্ত সাফল্য কেন উইলিয়ামসনের। ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম অবসর নেয়ার পর টি২০তে নেতৃত্ব পেলেন। টি২০ বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দিয়ে টানা চার ম্যাচে টস জিতলেন। প্রতিবারই আগে ব্যাটিংও নিলেন। জয়ও পেলেন শতভাগ! ভারতের পর অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড। এরপর পাকিস্তানকে হারিয়ে সবার আগে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে খেলা নিশ্চিত করেছে ‘কাগজে-কলমে’ বিশ্বকাপের আগে বিদায়ের তালিকায় থাকা নিউজিল্যান্ড। সেই দলটিই কিনা বাংলাদেশকেও হারিয়ে গ্রুপের সেরা দল হয়েই শেষ চারে খেলবে! বাংলাদেশের জন্য পুরো বিশ্বকাপটাইতো আসলে বিধ্বস্ত ছিল। শুরুতে তাসকিন আহমেদ, আরাফাত সানির বোলিং এ্যাকশনে ত্রুটি ধরা। এরপর পরীক্ষা দেয়ার পর এ দুজনকেই অবৈধ ঘোষণা করা। মাঝপথে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে পেটের পীড়ার জন্য তামিম ইকবালের খেলতে না পারা। তাসকিন ইস্যুতে আইসিসির কাছে আপীল করেও কোন সুরাহা না হওয়া। তাসকিন নিষিদ্ধ থাকা। সর্বশেষ ভারতের বিপক্ষে জয়ের এত কাছাকাছি গিয়েও ১ রানে হারা। পুরোটা বিশ্বকাপই যেন বাংলাদেশের পথে শুধু কাটা আর কাটাই ছিল। সেই কাটা দূর হল না নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও। টানা তিন হারের পর কিউইদের কাছেও হেরে টানা চার হারের শিকার হলো বাংলাদেশ। খালি হাতে এখন দেশের মাটিতে ফিরতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। ঠিক যেমনটি ২০০৭ সালে দ্বিতীয় পর্বে ওঠার পর এরআগে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত টানা চার বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কপালে জুটেছে। এবারও তাই জুটল। এবার বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ দুর্দান্তই খেলেছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে বাজেভাবে হেরেছে। কিন্তু এরপর থেকে বাংলাদেশকে অন্যরূপেই দেখা গেছে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তামিম খেলতে হয়তো বাংলাদেশ জিতেই যেত। শেষ পর্যন্ত লড়াই করে হেরেছে বাংলাদেশ। এরপর ভারতের বিপক্ষে যে কতটা ভাল খেলেছে বাংলাদেশ, তা সবার মুখে মুখে যে শনিবার ম্যাচে হারের আগ পর্যন্তও বাংলাদেশের প্রশংসা ভেসেছে; তাতেই বোঝা গেছে। কিন্তু শেষ ম্যাচে এসে কি করল বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। মাশরাফি আগেরদিন বলেছিলেন, ‘সবাই শোকে আছে। আমাদের তা ভালই জানা আছে। চেষ্টা করব ভাল কিছু দিতে।’ কোথায় ভাল কিছু দিবে দল, উল্টো লজ্জা দিয়ে শেষ করল। গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে এসে দুদলের হারানোর কিছুই ছিল না। তবে পাওয়ার ছিল অনেক কিছু। নিউজিল্যান্ড জিতলে গ্রুপ সেরা হয়ে, অপরাজিত থেকেই সেমিফাইনালে খেলতে নামত। আর বাংলাদেশ জিতলে টি২০ বিশ্বকাপ থেকে একটি জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারত। নিউজিল্যান্ড তাদের পরিকল্পনায় সফল। আর বাংলাদেশ দল শুধু ব্যর্থই হলো না, হাবুডুবু খেল। ক্রিকেটাররা নিজেরাও লজ্জায় পুড়লো, বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদেরও যেন লজ্জা দিল। ভারতের কাছে হারের পর এত আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। সেই হারের পরও ক্রিকেটপ্রেমীরা ক্রিকেটারদের সঙ্গেই থেকেছেন। দলকে সমর্থন দিয়েই গেছেন। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৭০ রানে অলআউট হওয়ার লজ্জা সবাইকেই ঘিরে ধরল।
×