ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অনেকেই পদ ছাড়তে চান না

একাধিক পদে থাকা বিএনপি নেতারা হতাশ

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ২৭ মার্চ ২০১৬

একাধিক পদে থাকা বিএনপি নেতারা হতাশ

শরীফুল ইসলাম ॥ বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলে গঠনতন্ত্র সংশোধন করায় এক সঙ্গে দলের একাধিক পদে থাকা নেতারা হতাশ। চেয়ারপার্সনের নির্দেশ সত্ত্বে¡ও তাঁদের অনেকেই পদ ছাড়তে চাচ্ছেন না। কেউ কেউ একাধিক পদ ছাড়তে সম্মত হলেও দলের নতুন জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে নিজের অবস্থান দেখে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে চান। উল্লেখ্য, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের অনেক কেন্দ্রীয় নেতা এক সঙ্গে একাধিক পদ দখল করে আছেন। আর দলে সক্রিয় থেকেও অনেক নেতা কোন পদ পাচ্ছেন না। তাই এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দলের ভেতরে পদ পাওয়া নেতাদের সঙ্গে পদ না পাওয়া নেতাদের চরম বিরোধ চলে আসছে। আর দলীয় হাইকমান্ড বার বার উদ্যোগ নিয়েও বিষয়টি সুরাহা করতে পারেনি। তবে ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত বিএনপির ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে এক নেতার একাধিক পদে থাকার পথ বন্ধ করে দেয়ায় দলের ভেতরে থাকা দীর্ঘদিনের এ সমস্যাটির সমাধান হচ্ছে বলে সাধারণ নেতাকর্মীরা মনে করছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিএনপির অনেক কেন্দ্রীয় নেতা এখনও দলের একাধিক পদ দখল করে আছেন। বিএনপির বর্তমান নির্বাহী কমিটিতে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদে রয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন মারা যাওয়ার পর থেকে ৫ বছর ধরে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এ ছাড়া তিনি ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির অঙ্গ সংগঠন কৃষক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। বিএনপির নতুন নির্বাহী কমিটিতে তিনি মহাসচিব হতে যাচ্ছেন বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে। কিন্তু জাতীয় কাউন্সিলে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে এক নেতার এক পদ করা হলেও তিনি ৪টি পদের একটিও ছাড়েননি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য পদে রয়েছেন মির্জা আব্বাস। স্থায়ী কমিটির সদস্য পদ দখলে রাখার পাশাপাশি তিনি ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। তবে ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের আগে থেকেই তিনি কারাগারে রয়েছেন। রাবেয়া চৌধুরী বিএনপির নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান। একই সঙ্গে তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতির পদও ধরে রেখেছেন। দলের আরেক ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী একই সঙ্গে পটুয়াখালী জেলা বিএনপিরও সভাপতি। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পদে রয়েছেন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শামসুজ্জামান দুদু। এর পাশাপাশি তিনি কৃষক দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদ দখল করে আছেন। বিএনপি চেয়ারপার্সনের আরেক উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর দখলে রয়েছে দুই পদ। চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টার পাশাপাশি তিনি চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। জাতীয় কাউন্সিলে গঠনতন্ত্র সংশোধনের পরও তিনি একাধিক পদ ছাড়ছেন না। ঢাকা জেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি আব্দুুল মান্নান। একই সঙ্গে তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পদেও রয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপার্সনের আরেক উপদেষ্টা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতির পদেও রয়েছেন। চেয়ারপার্সনের আরেক উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান টাঙ্গাইল জেলা বিএনপিরও সভাপতি। সাবেক ডাকসু ভিপি ও ছাত্রদলের সভাপতি আমান উল্লাহ আমান বর্তমানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব। একই সঙ্গে তিনি ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদ দখল করে আছেন। জাতীয় কাউন্সিলের পরও তিনি কোন পদ ছাড়েননি। দলের আরেক যুগ্ম-মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি। যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু রাজশাহী মহানগর বিএনপিরও সভাপতি। ভারতে কারাবন্দী বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদ কক্সবাজার জেলা বিএনপিরও সভাপতি। বিএনপিতে এখনও একা ৩টি পদ দখল করে আছেন সাবেক ছাত্রদল সভাপতি ফজলুল হক মিলন। বিএনপির নির্বাহী কমিটিতে তিনি ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রয়েছেন। এ ছাড়া তিনি গাজীপুর জেলা ও কালিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। জাতীয় কাউন্সিলে গঠনতন্ত্র সংশোধনের পরও তিনি ৩টি পদের একটিও ছাড়েননি। বিএনপির আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবর রহমান সরোয়ারের দখলেও রয়েছে তিনটি পদ। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ দখলে রাখা ছাড়াও তিনি শ্রমিক দলের উপদেষ্টা ও বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। দলের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলুও রয়েছেন ২ পদে। সাংগঠনিক সম্পাদকের পাশাপাশি তিনি লালমনিরহাট জেলা বিএনপিরও সভাপতি। বিএনপির আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী। একই সঙ্গে তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপিরও সভাপতি। বিএনপির অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম ঢাকা মহানগর বিএনপির উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। রাজশাহী জেলা বিএনপির সভাপতি নাদিম মোস্তফা দলের নির্বাহী কমিটির বিশেষ সম্পাদক পদেও রয়েছেন। সাবেক ডাকসু জিএস খায়রুল কবির খোকন বিএনপির নির্বাহী কমিটির শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক। অন্যদিকে তিনি নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। প্রশিক্ষণ-বিষয়ক সম্পাদক কবির মুরাদ মাগুরা জেলা বিএনপির সভাপতি। একই সঙ্গে তিনি জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতির পদও ধরে রেখেছেন। সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী দলটির কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও পুনর্বাসন-বিষয়ক সম্পাদক। তিনি কুষ্টিয়া জেলা বিএনপিরও সভাপতি। ফরিদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাদা মিয়া বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-শিল্পবিষয়ক সম্পাদক। আবুল খায়ের ভূঁইয়া বিএনপির নির্বাহী কমিটির সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক। একই সঙ্গে তিনি লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি এবং ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য। সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বিএনপির যুববিষয়ক সম্পাদক। একই সঙ্গে তিনি যুবদলের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। দলের স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুল। তিনি নাটোর জেলা বিএনপির সভাপতি। স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল। তিনি বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক। একই সঙ্গে তিনি ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব। বিএনপির স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক আব্দুুল হাই দলের মুন্সীগঞ্জ জেলার সভাপতি। দলের শিল্প বিষয়ক সম্পাদক একেএম মোশাররফ হোসেন ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলার সভাপতি। সমবায় বিষয়ক সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য। বিএনপির সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি। দলের সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নুরী আরা সাফা মহিলা দলের সভাপতি। মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা বিএনপির সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করছেন। বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি। সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি। সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আসলাম চৌধুরী চট্টগ্রাম উত্তর জেলার আহ্বায়ক। সহ-পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক মোজাহার আলী প্রধান জয়পুরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি। সহ-সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সাহাবুদ্দিন আহমেদ ঢাকা মহানগর বিএনপিরও সদস্য। দলের সহ-কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আমিন উর রশীদ ইয়াসিন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। সহ-শিল্প বিষয়ক সম্পাদক এমএ মালেক জাসাস সভাপতি। সহ-মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আবু সাঈদ খান খোকন ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। এ ছাড়াও বিএনপির নির্বাহী কমিটির শতাধিক সদস্য বিভিন্ন সাংগঠনিক জেলার গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। জানা যায়, এভাবে একাধিক পদে থাকা বিএনপি নেতারা এখন তাদের পদ রক্ষায় দেনদরবার করছে। তবে গঠনতন্ত্র সংশোধনের ফলে এখন তাদের একাধিক পদ ধরে রাখা অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। অপরদিকে একাধিক পদে থাকা নেতাদের এক পদ রেখে অন্য পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য দলের পদবঞ্চিত নেতাদের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান বলেন, জাতীয় কাউন্সিলে দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন হওয়ায় এখন আর এক ব্যক্তি একাধিক পদে থাকতে পারবেন না। তবে এখনও না ছাড়লেও দলের নতুন জাতীয় নির্বাহী কমিটি হওয়ার পর হয়ত এক পদ রেখে অন্য পদগুলো সংশ্লিষ্ট নেতারা ছেড়ে দেবেন।
×