ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ২৮ মার্চ ২০১৬

গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

প্রতিটি ঘোষিত দিবসই তাৎপর্যপূর্ণ; প্রতিটি দিবসের নেপথ্যেই রয়েছে বিশেষ ইতিহাস। বিশ্বব্যাপী কোন বিশেষ দিবস পালনের ফলে সারা পৃথিবীর মানুষের সেই ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকানোর অবকাশ ও সুযোগ তৈরি হয়। সেই ইতিহাস যদি কোন জাতির রক্তাপ্লুত মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়, তবে সেটি বিশ্বব্যাপী প্রেরণা যোগায় মানবতার পতাকা উর্ধে তোলার জন্য। ১৯৭১ সালের পঁচিশে মার্চ রাতে বাংলাদেশে যে গণহত্যা হয়েছিল তা গত শতাব্দীতে অনেক দেশে সংঘটিত গণহত্যার পাশে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৯৭১ সালের পঁচিশে মার্চ এক রাতে বাংলাদেশে লক্ষাধিক মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সেই পৈশাচিক বর্বরতা যা গণহত্যার ইতিহাসে এক ভয়াবহতম ঘটনা। এই জঘন্যতম হত্যাকা-ের ইতিহাস, দলিলপত্র, ভিডিও বা ছবি দেখলে যে কেউ অপরাধীদের ধিক্কার জানাবে। মানুষ ও মানবতার পক্ষে দাঁড়াবে বিশ্ব বিবেক। এর মধ্য দিয়ে আরও জোরালো হবে জেনোসাইডে যুক্ত পাকিস্তানী বাহিনীর বিচারের দাবি। পঁচিশে মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে দীর্ঘদিন যাবত কাজ করে আসছে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার আন্দোলন। যদিও এক শ’ বছর আগে সংঘটিত আর্মেনিয়ার গণহত্যার স্বীকৃতির জন্য সে দেশের সরকার ও জনগণ সম্মিলিতভাবে কাজ করে অবশেষে তা অর্জন করেছে। ২০১৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আর্মেনিয়ার প্রস্তাবের কারণে ইতোমধ্যে ৯ ডিসেম্বরকে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস ঘোষণা করেছে। সাম্প্রতিক বিশ্বে পাকিস্তানের ভাবমূর্তি এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে। জঙ্গীরাষ্ট্র হিসেবে তাদের পরিচিতি গড়ে উঠেছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশকেই অসহযোগিতা করে আসছে পাকিস্তান। দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার বিভিন্ন ফোরামেও দেশটির অসহযোগিতা বাড়ছে। স্পষ্ট করে বললে বলতে হয়, এই অসহযোগিতা করা ছাড়া তাদের কোন বিকল্পও নেই। কারণ, তারাই বর্তমান বিশ্বে জঙ্গীবাদের মোড়ল হয়ে উঠেছে। পাকিস্তানের কারণেই ভারত, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানে জঙ্গীবাদের ঝুঁকি বাড়ছে। স্মরণযোগ্য যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমসের এক সংবাদ বিশ্লেষণে উঠে এসেছিল- আইএসসহ বিভিন্ন জঙ্গীগোষ্ঠীর উত্থানে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর হাত রয়েছে। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সিরিয়া, ইরাক ও লিবিয়ায় তৎপর জিহাদীগোষ্ঠী আইএসসহ বিশ্বের বিভিন্ন জিহাদীগোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। পাকিস্তান যে কত বড় বর্বর রাষ্ট্র সেটা একাত্তরেরও অনেক বছর আগেই জেনেছিল বাংলাদেশের মানুষ। দেশটির মানবতা ও সভ্যতাবিরোধী ভূমিকাটি চূড়ান্তভাবে জানা গিয়েছিল একাত্তরের পঁচিশে মার্চ রাতে। সেই ইতিহাস গোটা বিশ্বকে জানানোর জন্য ওই দিবসটিকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণার চিন্তাটি ছিল দূরদর্শী। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী দল আওয়ামী লীগ এখন সরকারে। অভিন্ন সরকারের সদিচ্ছা ও উদ্যোগে মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে আজ সুপ্রতিষ্ঠিত। দেশবাসীর প্রত্যাশা সরকার একইভাবে এই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে পঁচিশে মার্চে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সেজন্য আদর্শিকভাবে ’৭১-এর গণহত্যার সঙ্গে আল কায়েদা, আইএসের সাম্প্রতিক গণহত্যা একই সূত্রে গাঁথা- এটি বিশ্ববাসীর সামনে বিশেষভাবে তুলে ধরা জরুরী।
×