ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ মুশফিক এখন টি২০’র বোঝা!

প্রকাশিত: ০৬:১২, ২৮ মার্চ ২০১৬

‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ মুশফিক এখন টি২০’র বোঝা!

মোঃ মামুন রশীদ ॥ এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় সাফল্যটা বাংলাদেশ দলের জন্য এবারের টি২০ বিশ্বকাপেই এসেছে। হয়তো কথাটি অবিশ্বাস্যই মনে হবে। কিন্তু সেটাই সত্য। ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের ক্ষেত্রে অনেক কিছুই এসেছে এবারের বিশ্বকাপে। ওপেনার তামিম ইকবাল প্রথম বাংলাদেশী ক্রিকেটার হিসেবে টি২০ ফরমেটে এক হাজার রানের মালিক হন তিনি। পরে সেই রেকর্ডটা ছুঁয়েছেন সাকিব আল হাসানও। এছাড়া টি২০ ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে বল হাতে ৫০ উইকেট ও ১ হাজার রানের গর্বিত মালিকও হন তিনি। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচে প্রথম বাংলাদেশী বোলার হিসেবে বিশ্বকাপে এক ম্যাচে ৫ উইকেট শিকারের কৃতিত্ব দেখান তরুণ পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। বর্তমানে বিস্ফোরক ইনিংস খেলে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এবং সাব্বির রহমান স্বীকৃত টি২০ স্পেশালিস্ট হয়ে গেছেন দলের। কিন্তু টি২০ ফরমেটে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে সেঞ্চুরি হাঁকান তামিম ইকবাল প্রাথমিক রাউন্ডে ওমানের বিরুদ্ধে। যদিও এরপর তিনি দাবি করেছিলেন বাংলাদেশ দলের সেরা টি২০ ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীম। সেই মুশফিক দীর্ঘদিন ধরেই ব্যাট হাতে চরম ব্যর্থ। এশিয়া কাপ থেকে শুরু করে চলতি বিশ্বকাপের সব ম্যাচ খেলেও দলকে কিছুই উপহার দিতে পারেননি। উল্টো ভারতের বিরুদ্ধে ১ রানের হারের ম্যাচে শেষ ওভারে উইকেট বিলিয়ে এসেছেন! দীর্ঘদিন সুযোগ পেয়েও সেটা কাজে লাগিয়ে নিজেকে ফিরে পাননি। ইতোমধ্যেই প্রমাণ হয়ে গেছে মুশফিক এখন টি২০ দলের বোঝাস্বরূপ। এবার বাংলাদেশ ক্রিকেটকে হাঁটতে হবে তার বিকল্প খোঁজার রাস্তায়। সেই রাস্তাটা ইতোমধ্যেই অবশ্য পেয়ে গেছে বাংলাদেশ দল। তরুণ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান এবার বিশ্বকাপ স্কোয়াডে ছিলেন। মুশফিকের টানা ব্যর্থতার পরও সেই সোহানকে খেলানো হয়নি। এর একটাই কারণ, মুশফিক অতীতে যা করেছেন সেটার জন্যই তার ওপর আস্থা রেখেছিল দলের কোচ, অধিনায়ক এবং টিম ম্যানেজমেন্টের অন্যরা। ভয়াবহ বাজে সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন মুশফিক যেখান থেকে কোনভাবেই বেরোতে পারছেন না। ক্রিকেট পরাশক্তিদের ক্ষেত্রে এসব পরিস্থিতিতে দেখা যায় অপরিহার্য ব্যাটসম্যানদেরও বিশ্রাম দিতে। কিন্তু মুশফিকের ক্ষেত্রে সেই চেষ্টাও করা হয়নি। এশিয়া কাপ থেকে শুরু করে মুশফিকের ব্যাটিং চিত্রটা ছিল টেলএন্ডার ব্যাটসম্যানের মতো। সেটা নির্দিষ্ট এক ছন্দে এগিয়ে গেছে। মুশফিকের ব্যাটিং নৈপুণ্যের তালিকাটায় দুই অঙ্কে যাওয়া ইনিংসের সংখ্যাটাও খুব কম! এশিয়া কাপে ভারতের বিরুদ্ধে ১৬*, আরব আমিরাত ৪, শ্রীলঙ্কা ৪, পাকিস্তান ১২, ভারত ৪ এবং বিশ্বকাপে হল্যান্ডের বিরুদ্ধে ০, পাকিস্তান ১৮, অস্ট্রেলিয়া ১৫*, ভারত ১১ ও নিউজিল্যান্ড ০। অর্থাৎ ১০ ইনিংসে ১০.৫ গড়ে তার রান মাত্র ৮৪! টি২০ ফরমেটে উন্নয়নশীল একটি দলের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান এত ব্যর্থতার পরেও দলে টিকে থাকাটা কতটা যৌক্তিক সেটাও এখন প্রশ্নের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। এমনকি এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের আগেও খুব বড় কোন ইনিংস খেলতে পারেননি তিনি জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ৪ ম্যাচের সিরিজে। ৫৭ টি২০ ম্যাচে একটি মাত্র অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন ২০১৩ সালের ৬ নবেম্বর নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঢাকায়। মোট ৪৯ ইনিংস ব্যাট করেছেন যার মধ্যে ২০ রানের বেশি করতে পেরেছেন মাত্র ১৩ ইনিংসে! টি২০ ক্যারিয়ারে মুশফিকের রান ১৭.৫৭ গড়ে ৭০৩! নির্ভরযোগ্য এবং টি২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিক একটা সময় ছিলেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। এখনও তিনি টেস্ট দলের অধিনায়ক। ছিলেন ওয়ানডে ও টি২০ দলের নেতৃত্বেও। নিজে থেকেই কিছুদিন টি২০ ম্যাচের বাইরে যাওয়ার কথাটাও নিশ্চয় ভাববেন তিনি। ২৮ বছর বয়সী এ মেধাবী ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে এখনও বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনেক কিছুই পাওয়ার আছে। কিন্তু এই পর্যায়ে তিনি টি২০ দলের বোঝা হয়ে গেছেন তা পরিসংখ্যানই বলছে! সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিক ব্যর্থ হলেও অন্যরা ছিলেন দারুণ ফর্মে। তামিম চলতি বিশ্বকাপে ওমানের বিরুদ্ধে প্রাথমিক রাউন্ডে ধর্মশালায় হাঁকালেন ৬৩ বলে ১০ চার ও ৫ ছক্কায় ১০৩ রানের অপরাজিত ইনিংস। সেদিনই প্রথম বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি ১ হাজার রানের মালিক হয়ে যান। চলতি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত তিনিই রান সংগ্রহের দিক থেকে সবার ওপরে। আর বিশ্বকাপের আগে বাজে সময়ের মধ্যে যাওয়া বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানও দারুণ ফর্মে ফিরেছেন। তিনি ৭ ম্যাচে ১০ উইকেট শিকার করে তিন নম্বরে। এক হাজার রান ও ৫০ উইকেটও হয়ে গেছে তার। পুরো আসরে মুস্তাফিজ খেলতে না পারলেও তিন ম্যাচ খেলেই মুস্তাফিজ চমক দেখিয়েছেন। ৯ উইকেট তার ঝুলিতে নিয়ে চারে অবস্থান করছেন। এর মধ্যে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে বিশ্বকাপে এক ম্যাচে ৫ উইকেট নিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। ২২ রানে ৫ উইকেট নিয়ে চলতি আসরের সেরা বোলিং নৈপুণ্যটাও তার দখলে। দুই আফগান বোলার মোহাম্মদ নবি ও রশিদ খান ১১ উইকেট করে নিয়ে প্রথম দুটি স্থান দখল করেছেন। আর ধারাবাহিকভাবে সফল ছিলেন বোলিংয়ে আল আমিন হোসেন এবং ব্যাটিংয়ে সাব্বির ও মাহমুদুল্লাহ।
×