ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কুড়িগ্রামে বিস্তীর্ণ জনপদে মৌ-চাষ

দুধকুমার ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় শোভা পাচ্ছে শত শত মৌচাক

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ২৮ মার্চ ২০১৬

দুধকুমার ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় শোভা পাচ্ছে শত শত মৌচাক

রাজু মোস্তাফিজ ॥ ‘মৌ মাছি-মৌ মাছি কোথা যাও নাচি নাচি দাঁড়াও না একবার ভাই, ঐ ফুল ফোটে বনে যাই মধু আহরণে দাঁড়াবার সময় তো নাই।’ কবির এই কবিতার দৃশ্য এখন কুড়িগ্রামের উত্তর-পূর্বাংশে নাগেশ্বরী, উলিপুর, রাজীবপুর, রৌমারী, ভুরুঙ্গামারী উপজেলার দুধকুমার, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকার বিস্তীর্ণ জনপদে। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভিতরবন্ধ ইউনিয়নের মাঠেরপার, উড্ডামারী, খানসামারভিটা, মাধরাম মহিদিপুর, কাছিচর, পাঁচগাছি এলাকায় বিভিন্ন বাড়ির বারান্দা, গাছের ডাল ও মসজিদের চালসহ বিভিন্ন স্থানে সারি সারি মৌমাছির চাক। এছাড়া ঘোগাদহ, যাত্রাপুর, নুনখাওয়া, কালিগঞ্জ এলাকার ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমারগুলোতে অসংখ্য মৌচাক দেখা গেছে। মৌয়ালিরা (মধু আহরণকারী) এসব মৌচাক থেকে মধু প্রতিদিন কাটছে। প্রতি মৌয়ালি প্রতিদিন বিভিন্ন মৌচাক থেকে দুই থেকে তিন মণ মধু সংগ্রহ করে প্রতিকেজি ৩-৪শ’ টাকায় বিক্রি করছে। অনেক মানুষ যাচ্ছে মৌচাক দেখতে। হঠাৎ করে কুড়িগ্রামের বিভিন্ন নদ-নদী অববাহিকায় এত মৌচাক কেন তার অনুসন্ধুানে জানা গেছে এবার আমন মৌসুমে ব্যাপক হারে আমন ধানের ক্ষতি হয়েছিল। কৃষকরা তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য ব্যাপকহারে সরিষার আবাদ করেছিলেন। চর-দ্বীপ চরগুলোতে যে দিকে তাকাই সেদিকে শুধু সরিষার ক্ষেত আর ক্ষেত। এসব ক্ষেতে ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছি এসে মধু সংগ্রহ করছে। মৌমাছিগুলো ক্ষেতের পাশের বিভিন্ন গ্রামে বিভিন্ন বাড়িতে গাছের ডালে বড় বড় মৌচাক করেছে। নুনখাওয়ার মৌয়ালি বছির উদ্দিন জানান, প্রতিদিন বিভিন্ন মৌচাক থেকে এক-দেড় মণ মধু সংগ্রহ করছি। বিভিন্ন গ্রামে ১০ থেকে ১৫ জন মৌয়ালি মধু সংগ্রহে নেমেছে। এ সব টাটকা মধু শহরের মানুষরা এসে তিন থেকে চার শ’ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও জানান, এ অঞ্চলে এত মধুর চাক আমাদের এই জীবনে আমরা দেখিনি। দিগদারী গ্রামের কবিরাজ হোসেন আলী জানান, মৌমাছির মধু আমরা কিনে বিভিন্ন ঔষধে ব্যবহার করছি। তার মতে, মধু মানবদেহের জন্য মহাঔষধ। হঠাৎ করে ব্যাপক মৌমাছির আগমনে গ্রামের মানুষ মৌমাছির উপদ্রবে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। মাঠের পার গ্রামের আইনুলের স্ত্রী মর্জিনা বেগম জানান, শোয়ার ঘরের দরজার সামনে বারান্দায় মৌমাছি বাসা বেঁধেছে। ভয়ে প্রায় দুই সপ্তাহ থেকে ওই ঘরে কেউ থাকি না। ভিতরবন্ধ এলাকার কাশেম আলীর ছোট্ট শিশু বাড়ির ভেতরে মৌচাকে ঢিল ছুড়লে মৌমাছি গৃহকর্ত্রী মঞ্জুরি বেগমকে হূল বসিয়ে আহত করে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় নাগেশ্বরী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কুড়িগ্রাম কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ শওকত আলী সরকার জানান, কৃষকরা আমনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিভিন্ন নদ-নদী অববাহিকার চর-দ্বীপ চর এলাকায় ব্যাপকহারে সরিষা লাগিয়ে ছিল। চলতি মৌসুমে জেলায় ১৯ হাজার ২শ’ ৩০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করেছেন কৃষকরা। সরিষার ফুল থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছি মধু আহরণে করছে। এসব মৌমাছি বসত বেঁধেছে নদের তীরবর্তী বিভিন্ন লোকজনের বাড়ির ভেতরে ও গাছের ডালে এবং বিভিন্ন স্থাপনায়। তাই এবার এত এ অঞ্চলে মধু দেখা যাচ্ছে। এতে লাভবান হচ্ছে ঐ সব গ্রামের মানুষ।
×