ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মারুফ রায়হান

ঢাকার দিনরাত

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ২৯ মার্চ ২০১৬

ঢাকার দিনরাত

ঢাকা দেশের রাজধানী বলেই দেশের কোন প্রান্তে বড় ধরনের অন্যায় সংঘটিত হলে তার বিরাট প্রভাব পড়ে এই মহানগরেই। কুমিল্লা সরকারী ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান (তনু) ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় ঢাকায় নানা মহল থেকে তীব্র প্রতিবাদ হচ্ছে। এমনকি ঢাকা থেকে প্রতিবাদী সংগঠন রোডমার্চ করে কুমিল্লা অভিমুখে যাত্রা করে সেখানেও সমাবেশ করছে। ২০ মার্চ তনুর মরদেহ পাওয়া যায় কুমিল্লা সেনানিবাসের পাহাড় হাউস এলাকায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুধু ক্ষোভ ও প্রতিবাদেই ফেটে পড়েনি তরুণ প্রজন্ম, তাদের উদ্যোগে শাহবাগে অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রতিবাদী সমাবেশ, চলছে সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের ভেতর দিয়ে প্রতিবাদ জানানো। স্বাধীনতা দিবসের কয়েকদিন আগে থেকেই প্রতিদিনই ঢাকার কোথাও না কোথাও সমাবেশ হচ্ছে তনু হত্যার বিচারের দাবিতে। ঢাকা যে এখনও তার প্রতিবাদী সত্তা সমুন্নত রেখেছে, এসব তারই উজ্জ্বল উদাহরণ। স্বাধীনতা উৎসব ছাব্বিশে মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ঢাকায় সপ্তাহব্যাপী, কখনো সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন নিয়মে পরিণত হয়েছে। পতাকার রং লাল-সবুজের ছোঁয়ায় পোশাক পরে সব বয়সী নারী-পুরুষের স্বাধীনতা উৎসবে যোগদান এখন ঢাকাবাসীর জীবনধারা তথা সংস্কৃতিরই অংশ। প্রতি বছরই এই উৎসব আয়োজনে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন মাত্রা। যেমন এবার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় থ্রিডি ভিডিও পরিবেশনা বিশেষভাবে নগরবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। হাতিরঝিলে নৌকাবাইচকেও উৎসবের নবতর সংযোজন বলা যায়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শাহবাগে পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘অনিল বাগচীর একদিন’ দেখে মনে হলো এধরনের ছবি বেশি বেশি প্রদর্শিত হওয়া দরকার। তাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বর্বরতার কথা নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে। দুঃখজনক হলো মিলনায়তনে খুব কম দর্শক ছবিটি দেখলেন। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের স্বাধীনতা উৎ?সবের কথা বিশেষভাবে বলা দরকার। কারণ শ্রোতাদের বেশিরভাগই থাকে স্কুলের শিক্ষার্থী। এদের কাছেই মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকারের ইতিহাস তুলে ধরা জরুরী। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণা, কবিতা, গান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পথনাটকÑ সব মিলিয়ে শিক্ষণীয় ও উপভোগ্য আয়োজন। গতানুগতিক অনুষ্ঠানের বাইরে উদ্ভাবনী ও সৃজনী ক্ষমতা প্রয়োগ করে আগামীতে ঢাকায় আরও বর্ণাঢ্য ও তাৎপর্যপূর্ণ উৎসব হোকÑ এটাই প্রত্যাশা। গ্রীষ্মবান্ধব মৌসুমী বিক্রেতা এপ্রিল আসার অল্প বাকি। তন্দুর তৈরির উনুনের মধ্যকার গনগনে আঁচের মতো দিনগুলো এখনও না এলেও ঢাকায় বেশ গরম অনুভূত হচ্ছে। বিশেষ করে রোদেলা দুপুরে সূর্য যেন আগুন গোলা ছুড়ে দিচ্ছে। গ্রীষ্মকালকে সামনে রেখে ঢাকায় মৌসুমী শরবত ও ডাব বিক্রেতাদের দেখা মেলে। ফুটপাথের ওপর তারা তাদের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। আগে গ্রীষ্মকালে রাজধানীর রাজপথে বেশি দেখা যেত আখের রস খাওয়ার তোড়জোড়। ছাল বের করে ফেলা কঞ্চিসম লম্বা লম্বা আখের ধড় ঢুকিয়ে দেয়া হতো একটানা বিচিত্র শব্দ তোলা দুই চাকাঅলা মাড়াইকলে। চিড়ে চ্যাপ্টা করে আখের সবটুকু রস নিংড়ে বের করে আনা হতো। সত্যি-মিথ্যে জানিনে, সেই ছেলেবেলাতেই শুনেছিলাম গ্লাসের মধ্যে স্যাকারিন দেয়া থাকে আগে থেকেই। তাই আখের রস এত মিঠা লাগে। দেখতে দেখতে ঢাকার রাস্তায় আখের রস বিক্রি কমে এলো। সেই জায়গা দখল করতে চলেছে বোধকরি লেবুর শরবত। কোন যন্ত্রের প্রয়োজন পড়ছে না। হাতেই তা তৈরি করা যায়। আখের বাতিল ছোবড়ার জঞ্জাল জমানো আর জায়গামতো সেই আবর্জনা ফেলে দেয়ার ঝক্কি নেই। কচলানো লেবু আর কতটা জায়গা নেয়। অবশ্য বলছি বটে লেবু কচলানোর কথা, আসলে তার বালাই নেই। চাপ-দেয়া হ্যান্ডিকলের পেটে গোটা কিংবা আধ টুকরো লেবু ঢুকিয়ে এক চাপে তার রস বের করে ফেলা সম্পূর্ণ ঝক্কিহীন। চাকা লাগানো কাঠের পাটাতনের ওপর শরবতের দোকান সাজিয়ে বসতে আলাদাভাবে লাগে কেবল পানির ফিল্টার; অবশ্য তার ওপরের কম্পার্টমেন্টে একতাল জমাট বাঁধা বরফ থাকা চাই। প্রচ- গরমে হিমশীতল না হোক মোটামুটি ঠা-া লেবুর শরবতের কদরই আলাদা। কোন কোন শরবতওয়ালা আবার চিনি দেয়া লেবুর পানির ভেতর সামান্য টেস্টিং সল্টও দিয়ে থাকেন। কাঠের পাটাতনের অনেকটা জুড়ে রাখা হয় সবুজ লেবুর স্তূপ। একইসঙ্গে তরমুজের শরবতও মেলে কোনো কোনো এলাকায়। তবে ফালি তরমুজই সহজলভ্য। ব্যস্ত সড়কের মোড়ে যে শরবতওলাকে দেখলাম তাকে আমি রুচিবানই বলব। তিনি সবুজাভা বাড়িয়েছেন সবুজ লেবুর পাশে ছোট্ট সবুজ বালতি রেখে। চাকাওয়ালা কাঠের গাড়ি নয়, তিনি টেবিল পেতেই বসেছেন। বসেছেন বলাটাও ভুল, তিনি সারাক্ষণ দাঁড়িয়েই থাকেন দুই হাত সামনে বাড়িয়ে টেবিলের ওপর ভর দিয়ে খানিকটা ঝুঁকে। টেবিলের সামনের অংশটায় আবার লাল কাপড় ঝুলিয়ে দিয়েছেন। সবমিলিয়ে শরবত বিক্রির জায়গাটা একটা ছোটখাটো অস্থায়ী দোকানের আদল পেয়েছে। মাত্র পাঁচ টাকায় ঠা-া এক গ্লাস লেবুর শরবত কেনার লোকের তেমন অভাব ঘটছে না (শুনেছি কোথাও কোথাও আবার দশ টাকায় বিকোচ্ছে এক গ্লাস)। রবিবার সন্ধ্যায় হাতিরঝিলে দেখলাম দশ টাকায় বিকোতে। ক্রেতার কমতি নেই। রাজধানীর লাখো কর্মসন্ধানী ভাসমান গরিব মানুষের জীবনসংগ্রামের ভেতর চৈত্র এসেছে দুঃসহ গরমের কঠিন কামড় নিয়ে। তাদের পাশে এই শরবত-ডাব বিক্রেতারাও আছেন স্বস্তিদানকারী বান্ধব হয়ে। ঘর্মাক্ত মানুষকে সরাসরি তৃপ্তিদানের মতো পেশায় যুক্তদের মনের স্বস্তিটার খোঁজ কি কেউ রাখে? তবে স্বাস্থ্য সমস্যার ব্যাপারে সতর্ক থাকা দরকার। শরবত কী পানি দিয়ে বানানো হয়, তার কোন ঠিক থাকে না। মাছের পচন ঠেকাতে যে বরফ ব্যবহার করা হয়, অনেক সময় সেই বরফ শরবতে মেশানো হয়। এই বরফগুলো বিশুদ্ধ পানি দিয়ে জমানো হয় কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার সুযোগ থাকে না। বিক্রেতারা যে গামছা দিয়ে বরফের চাঁই ঢেকে রাখেন, সেটাও অনেক সময় নোংরা থাকে। দূষিত পানি পেটে গেলে ডায়রিয়া, আমাশয়, টাইফয়েড ও জন্ডিস হতে পারেÑ এটা অনেক তৃষ্ণার্তেরই মাথায় থাকে না। তিন বছর ১ মাস পর... শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে, আর শেষ হচ্ছে আজ ২০১৬ সালের ২৯ মার্চ। তিন বছর ১ মাসই তো! বলছি মগবাজার মৌচাক উড়াল সড়কের কথা। না, পুরো কাজ শেষ হচ্ছে না, কেবল সাতরাস্তা থেকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল পর্যন্ত উড়াল সড়কের কাজ সমাপ্ত। যা গোটা প্রকল্পের তিন ভাগের একভাগ। আগামীকাল বুধবার সমাপ্তকৃত অংশটির উদ্বোধন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। ২ দশমিক ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই অংশ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২১২ কোটি টাকা। প্রথম দফায় ২০১৪ সালে এবং পরে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে এ অংশের কাজ শেষ করার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে গত শনিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। গত সপ্তাহের লেখাতে তুলেছি এই উড়াল সড়ক নির্মাণ কাজে অংশ নেয়া এক শ্রমিকের করুণ মৃত্যুর কথা। নির্মাণশ্রমিকদের নিরাপত্তায় বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে এখনও জানা যায়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গণমাধ্যমকে জানিয়েছে চলতি বছরের মধ্যেই গোটা কাজটি সম্পন্ন হবে। অবশ্য কর্তৃপক্ষ দফায় দফায় উড়াল সড়কের কাজ শেষের তারিখ দিয়েও কথা রাখতে পারেনি। এবার রাখুক, এটুকুই এলাকাবাসীর চাওয়া। আর ঢাকাবাসী আশায় আশায় দিন গুনছে উড়াল সড়কটি পূর্ণাঙ্গরূপে চালু হলে যানজটে শ্রমঘণ্টা অপচয় হয়ত হ্রাস পাবে। বসন্তের ফুল উজাড় সৌন্দর্যের বাগান যেন রাজধানীর একেকটা পার্ক। তবু বসন্তকাল এলে অনেক কবি-সাহিত্যিকই যান উদ্যানে সামান্য শান্তির আশায়। বিদেশের বহু পার্কে ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতাধারী একজন ব্যক্তি রমনায় গিয়েছিলেন। তার জবানিতেই শোনা যাক রমণীয় রমনায় অভিজ্ঞতার একচ্ছত্র : ‘রমনা পার্কে ছবি তুলছিলাম। নাগলিঙ্গম ফুলের ছবি তোলার সময় কয়েকজন কৌতূহলী ভ্রমণকারী এসে দাঁড়ালেন, ছবি তোলা শেষ করে ভিউ ফাইন্ডার থেকে চোখ সরাবার পর একজন জানতে চাইলেন, ভাই, কী ফুল এইগুলা? বললাম, নাগলিঙ্গম। পাশ থেকে আরেকজন জিজ্ঞেস করলেন, এগুলো কি খাওয়া যায়? আমি তাজ্জব। একটা অপরিচিত ফুল দেখে খাওয়ার কথা মনে পড়ে যাদের, তারা কী প্রকৃতির মানুষ। একটু মজা করে বলি, সবকিছু কি খেতে হয়? শুধু চোখে দেখলে হয় না? তারা কী বুঝলেন কে জানে। আমরা যে যার পথ ধরি। পরে দেখি আরেকজন হাঁটা শেষ করে উদোম গায়ে নাগলিঙ্গম ফুল পাড়ার চেষ্টা করছেন। বুঝলাম, ইনিও খাদকশ্রেণীর একজন। তার ভুঁড়িটা দেখলেই বোঝা যায়।’ পার্কের কথা থাক, এই বসন্তে অনেক প্রকৃতিপ্রেমীর নিজের বাগানে (তা ফ্ল্যাটের ছাদেই হোক বা বাসার সামনের একচিলতে খোলা জায়গায়) বসন্ত ছড়িয়ে দিয়েছে ফুলের শোভা। তাদেরই একজনের অভিব্যক্তি এখানে তুলে ধরা যাক। ফেসবুকে উদ্ভিদ চত্বর নামে যে পেজটি রয়েছে তাতে ঢাকারও বহু উদ্ভিদপ্রেমী পোস্ট দিয়ে থাকেন। গত সপ্তাহে ঢাকার নাজু খান শেয়ার করেছেন তার বাগানে ফোটা ফুলের ছবি। লিখেছেনÑ ‘ছাদে গিয়ে দেখি লিলি একাই শাসন করছে পিটুনিয়া সাম্রাজ্য, সঙ্গে হাসছে বাগানবিলাস।’ এখন মোটামুটি সব নার্সারিতেই এই লিলি পাওয়া যায় অথবা আগারগাঁওয়ের দোকানগুলোতে মেলে। এই পোস্ট দেখে মন্তব্য করলেন একজনÑ ‘ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে বহে কিবা মৃদু বায়... আহা কি রূপ তোমাদের দেখে নয়ন জুড়িয়ে গেল। আপা আপনার বাগানের কাছে আমার একচিলতে বারান্দার এক টুকরো বাগান কিছুই না।’ প্রত্যুত্তরকারীও কম যান না। লিখলেনÑ ‘একটি গাছে দুটো পাতা আছে আপনার, সবটুকু বিষ টেনে নিয়ে আপনাকে আনন্দিত রাখছে আগামীকালের জন্য। সেটুকুও অনেকের নেই তাই আপনি ভাগ্যবান।’ ঢাকার বায়ুদূষণ দুদিন ঢাকার বাইরে ছিলাম। সেই সুবাদে বুঝলাম ঢাকার দিনরাত কত ব্যস্ততা, উৎকণ্ঠা আর বিড়ম্বনায় ভরপুর। ঢাকার বাইরে জীবন এখনও অনেক শান্ত, স্থির, স্নিগ্ধ। ঢাকায় ফেরার সময় সাভার পেরুনোর পর ঢাকা যত নিকটবর্তী হচ্ছিল, তত যেন বাড়ছিল যানবাহনের সংখ্যা এবং তার জট। তবে সবচেয়ে যেটা লক্ষ্যযোগ্য তা হলো দূর থেকে বায়ুম-লের দিকে তাকিয়ে যেন অনুভব করে উঠতে পারছিলাম ধুলো-ধোঁয়ার চাদরে কী পরিমাণ ঢাকা পড়ে আছে আমাদের সাধের রাজধানী! বায়ুদূষণ দিন দিন বাড়ছে, অথচ সব যেন আমাদের গা সওয়া হয়ে গেছে। রাজধানীর বায়ুদূষণের যে চিত্র আমরা পাই, তা উদ্বেগজনক। আর এই অবনতির অন্যতম কারণ পরিবেশ অধিদফতর, নগর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর নজরদারিহীনতা। পরিবেশ অধিদফতরের দায়িত্ব যেন গণবিজ্ঞপ্তি জারিতেই শেষ! দূষণ নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ খুব কমই দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে নগরবাসীও কি অসচেতন নয়? বাধ্য না করা পর্যন্ত কেউ আইন মানতে চায় না। আমরা নিজেরা অসুস্থ হচ্ছি, আমাদের সন্তানরাও শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানির মতো অসুখে পড়ছে। এর পরও আমরা সচেতন হব না? ব্রততী-জয়তীর পরিবেশনা বসন্তে কবিতা ও গান শোনার জন্য কি নাগরিক কান উৎকর্ণ থাকে? তা না হলে সেদিন খামারবাড়ির অভিজাত কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তন এমন কানায় কানায় পূর্ণ হবে কেন! মঞ্চের পেছনের পর্দায় পলাশ ফুলের শৈল্পিক উদ্ভাসন মুহূর্তেই দর্শকশ্রোতাদের মনে বসন্তের রং ছড়িয়ে দিতে ছিল পারঙ্গম। আয়োজক ডার্ড গ্রুপের সংস্কৃতিপ্রিয়তার পরিচয় আগেও পেয়েছে রাজধানীবাসী। তবে আমার কাছে তাদের যে কাজটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ তা হলো মোবাইলে বাংলা বই পড়ার সফল উদ্যোগ গ্রহণ। ‘সেইবই ডটকম’ ইতোমধ্যে দেশের নামীদামী লেখকসহ নবীন-তরুণ বহু লেখকের সঙ্গে লিখিত চুক্তি সম্পন্ন করেছে। ‘দুই পারের কানাকানি’ শীর্ষক কবিতা ও গান শুরুর আগে এবিষয়ে কিছু আলোকপাত করলেন প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার। ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায় ও জয়তী চক্রবর্তীÑ পশ্চিমবঙ্গের খ্যাতিমান আবৃত্তিশিল্পী ও সঙ্গীতশিল্পী। এই দুই জনপ্রিয় শিল্পীর পরিবেশনা আমন্ত্রিত অতিথিরা দারুণ উপভোগ করলেন। স্বাধীনতার মাস মার্চ চলছেÑ এটি স্মরণে রেখেছিলেন দুজনেই। ব্রততী তাই তাঁর আবৃত্তির ইতি টানলেন শামসুর রাহমানের ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতার মধ্য দিয়ে। জয়তীও শোনালেন দেশপ্রেমের গান। তবে দুজনারই নির্বাচনে প্রাধান্য বিস্তার করে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সত্যি বলতে কি, ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়কে কবিগুরুর কবিতার আবৃত্তি-বিশেষজ্ঞ বললেও ভুল হবে না। দীর্ঘ সব কবিতা স্মৃতি থেকে মুগ্ধকর বাচনে তিনি পরিবেশন করেন। ভাবছিলাম একই আবৃত্তিশিল্পীর কণ্ঠে জীবনানন্দের কবিতাগুলো কেন কানে পশার মতো হলো না! বুঝলাম কবিতার ভাব বা মেজাজ যথার্থ অনুধাবনে সমর্থ হলেও তার প্রায়োগিকতা মানোত্তীর্ণ নাও হতে পারে। শম্ভু মিত্রের কণ্ঠে জীবনানন্দের ‘বোধ’ কবিতাটি এখনও আমাদের কানে লেগে আছে। যাহোক, জয়তী চক্রবর্তীর গানের কথা বলা যাক। মূলত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী হলেও পরিবেশন করলেন আধুনিক, লোকসংগীত, এমনকি সাঁওতালি সুরের গান। ভারি মিষ্টি গলা। সব গানই শ্রুতিসুখকর। কান পেতে শুনবার মতো। চোখ না বুঁজে যাঁরা গান শুনলেন তাঁরা দেখতে পেলেন শিল্পীর মুখাভিব্যক্তি। সেটা সংগীত উপভোগে বরং সহায়কও ছিল। আয়োজক প্রতিষ্ঠানকে ধন্যবাদ। ২৭ মার্চ ২০১৬ [email protected]
×