ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রায়ের ফলে দুই মন্ত্রীর পদত্যাগে বাধ্যবাধকতা নেই ॥ আইনমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৯ মার্চ ২০১৬

রায়ের ফলে দুই মন্ত্রীর পদত্যাগে বাধ্যবাধকতা নেই ॥ আইনমন্ত্রী

তপন বিশ্বাস ॥ আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত হলে মন্ত্রিত্ব হারানোর আইনগত কোন সুযোগ নেই। পূর্ণাঙ্গ রায়ের অপেক্ষায় আদালত অবমাননায় দোষী সাব্যস্ত দুই মন্ত্রী। এ ব্যাপারে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পেলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, এখানে কিন্তু সংবিধান ক্ষুণœ হওয়ার কোন ব্যাপার নাই। পদত্যাগ করার কোন বাধ্যবাধকতাও নেই। এটা সম্পূর্ণ তাদের ব্যক্তিগত বিবেচনার ব্যাপার। এ প্রসঙ্গে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, তাদের মন্ত্রিত্ব থাকার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে। তিনি বলেন, নৈতিকতার বিষয়টি ভিন্ন, সংবিধানে নৈতিকতার বিষয়টি বলা হয়েছে সংসদ সদস্য পদের জন্য। ফৌজদারি অপরাধে নৈতিক পদস্খলন জনিত কারণে দুই বছর সাজা প্রাপ্ত হলে কেউ সংসদ সদস্য পদে বহাল থাকতে পারবেন না। আমি মনে করি, দুই মন্ত্রী যে সাজা পেয়েছেন, এতে তাদের মন্ত্রিত্ব যাবে না। এদিকে বৈঠক শেষে আদালত অবমাননায় অভিযুক্ত খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হওয়ার পর এ বিষয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আদালত অবমাননার দায়ে মন্ত্রিত্ব অবসানের সুস্পষ্ট কোন বিধান নেই। সংবিধানের ৬৬(২) ধারায় বলা আছে, “কোন ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার এবং সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবে না, যদি (ক) কোন উপযুক্ত আদালত তাঁকে অপ্রকৃতিস্থ বলে ঘোষণা করেন; (খ) তিনি দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পর দায় থেকে অব্যাহতি লাভ না করে থাকেন; (গ) তিনি কোন বিদেশী রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করেন কিংবা কোন বিদেশী রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করেন; (ঘ) তিনি নৈতিক স্খলনজনতি ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছর কারাদ-ে দ-িত হন এবং তাঁর মুক্তি লাভের পর পাঁচবছর কাল অতিবাহিত না হয়ে থাকে; (ঙ) তিনি ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ যোগসাজশকারী (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশের অধীন কোন অপরাধের জন্য দ-িত হয়ে থাকেন; (চ) আইনের দ্বারা পদাধিকারীকে অযোগ্য ঘোষণা করছে না, এমন পদ ব্যতীত তিনি প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোন লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকেন; অথবা (ছ) তিনি কোন আইনের দ্বারা বা অধীন অনুরূপ নির্বাচনের জন্য অযোগ্য হন। সংবিধানের আলোকে কোন ব্যক্তি সংসদ সদস্য পদ হারাবেন যদি তিনি এ জাতীয় কোন অপরাধ করেন। কিন্তু আদালত অবমাননার দায়ে সংসদ সদস্য পদ হারানোর কোন বিধান আইনে নেই। সূত্র জানায়, কেউ সংসদ সদস্য পদ হারালেও তার মন্ত্রিত্ব থাকতে পারে। প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভায় ১০ শতাংশ টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী নিয়োগ করতে পারেন। মূলত কেউ মন্ত্রিত্ব হারাবে কি হারাবে না তা নির্ভর করে প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির ওপর। প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশে রাষ্ট্রপতি শপথ পাঠ করিয়ে মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন। আদালত অবমাননায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় কামরুল ইসলাম ও আ ক ম মোজাম্মেল হক ‘নৈতিকভাবে মন্ত্রী পদে থাকার অধিকার হারিয়েছেন’ বলে আইনজীবীদের একটি অংশ দাবি করলেও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, এখানে পদত্যাগ করার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। তবে পদত্যাগ করাটা সম্পূর্ণ তাদের ব্যক্তিগত বিবেচনার ব্যাপার। একই কথা বলেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, এখানে আইনগত ব্যাপার আছে, আরেকটা আছে নৈতিকতা। নৈতিকতার ব্যাপারটা যার যার নিজের ব্যাপার। সেটা আমাদের কিছু বলার নাই। মার্চের শুরুতে যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেমের আপীল মামলার রায় নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতিকে জড়িয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল। ওই বক্তব্যের কারণে আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে রবিবার তাদের সাজা দেয় আপীল বিভাগ। দু’জনকে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদ-, অনাদায়ে সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদ-ের রায় ঘোষণা করে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বলেন, আদালত অবমাননার বিষয়ে দেশের জনগণকে একটি বার্তা পৌঁছে দিতেই দুই মন্ত্রীকে এ দ-। এই সাজার পর কামরুল ও মোজাম্মেল মন্ত্রী পদে থাকতে পারেন কি না সেই প্রশ্ন উঠলে আইনজীবীদের এক পক্ষে বলা হয়, এই রায়ের কারণে মন্ত্রিত্ব না থাকার কোন বিধান সংবিধানে নেই। অন্য পক্ষের দাবি, ‘শপথ ভঙ্গের’ কারণে তারা মন্ত্রী থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। এ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে অংশ নেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। বৈঠক শেষে বেরিয়েই এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে হয় আইনমন্ত্রী ও সড়ক যোগাযোগ মন্ত্রীকে। কামরুল ও মোজাম্মেল আর মন্ত্রী পদে থাকতে পারেন কি না- এ প্রশ্নে আনিসুল হক বলেন, “এখানে এটা একদমই পরিষ্কার, এখানে কিন্তু সংবিধান ক্ষুণœ হওয়ার কোন ব্যাপার নাই। এখানে পদত্যাগ করার কোন বাধ্যবাধকতা নাই। এটা সম্পূর্ণ তাদের ব্যক্তিগত বিবেচনার ব্যাপার।” আদালত নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্যে মন্ত্রীদের শপথভঙ্গ হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, না, শপথভঙ্গ হয়নি। সাংবাদিকদের প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ নিয়ে একটা শব্দও আলোচনা হয়নি। সংবিধান লঙ্ঘন হয়েছে এটা কি হুট করে বলা যায়? বৈঠকে দুই মন্ত্রীকে কেমন দেখেছেন- এ প্রশ্নে কাদের বলেন, “উনারা আগেই মতোই ছিলেন, অ্যাজ ইউজুয়াল। আমি উনাদের মধ্যে ব্যতিক্রম দেখিনি।” নৈতিকভাবে তারা এখন আর মন্ত্রী থাকতে পারেন কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরও কাদের এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, আমরা তো একেক সময় একেক কথা বলব না। দেশের প্রধান বিচারপতি প্রতিষ্ঠান। তার ব্যাপারে কোন সুইপিং রিমার্কস করা সঙ্গত নয়, সমীচীন নয়। কাদের বলেন, আদালতের রায় নিয়ে সরকারীভাবে বা দলীয় ফোরামে কোন আলোচনা হয়নি। আর আলোচনা হওয়ার আগে তিনি নিজেও ‘আরেকটি সুইপিং রিমার্কস’ করতে চান না। আদালত নিয়ে মন্তব্যে দুই মন্ত্রীর শপথভঙ্গ হয়েছে বলে মনে করেন কি না জানতে চাইলে কাদের আইনমন্ত্রীকে দেখিয়ে দেন। তিনি বলেন, শপথ থাকে কি থাকে না- আইনমন্ত্রী ভাল বলতে পারবেন। আমি আইন পড়িনি, কাজেই আইন সম্পর্কে জানি না। দুই মন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত কি না- এমন প্রশ্নে কাদের বলেন, আমার একজন কলিগের পদত্যাগ আমি দাবি করব- এটা তো ঠিক না। প্রধানমন্ত্রীও এ বিষয়ে কোন নির্দেশনা দেননি বলে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী জানান।
×