ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

না’গঞ্জে ৭ খুন

দুই মামলায় ম্যাজিস্ট্রেটসহ দু’জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৯ মার্চ ২০১৬

দুই মামলায় ম্যাজিস্ট্রেটসহ দু’জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন

নিজস্ব সংবাদদাতা, নারায়ণগঞ্জ, ২৮ মার্চ ॥ নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের দুটি মামলায় এক ম্যাজিস্ট্রেটসহ দু’জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এই প্রথম এই মামলায় আসামি নূর হোসেন ও তারেক সাঈদ মোহাম্মদের আইনজীবীরা সাক্ষীদের জেরা করেছেন। ৫ জনের সাক্ষ্য নেয়ার দিন ধার্য্য থাকলেও সময়স্বল্পতার কারণে দু’জনের সাক্ষ্য নেয়ার পর পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ৩১ মার্চ তারিখ ধার্য্য করেন। সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত একঘণ্টা বিরতি দিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে এই সাক্ষ্য গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সোমবার সকালে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে ৭ খুনের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন, র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর (অব) আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার (অব) এম এম রানাসহ কারাগারে আটক ২৩ আসামিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে হাজির করা হয়। এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চাঁদনী রূপম, নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদ চেয়ারম্যান, তার ছেলে সাইদুল ইসলাম, নিহত মনিরুজ্জামান স্বপনের ভাই মিজানুর রহমান রিপন ও তাদের নিকট আত্মীয় শাহ্জালালের সাক্ষ্য দেয়ার জন্য নোটিস করা হলে তারা হাজির হন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট চাঁদনী রূপম প্রথমে আদালতে সাক্ষ্য দেন। তার আদালতে এই হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত দায় স্বীকার করে এবং হত্যাকা-ের বর্ণনা দিয়ে ৪ আসামি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন এবং সাক্ষী হিসেবে দেন আরও একজন। সে স্বীকারোক্তির বিষয়ে তিনি আদালতে সাক্ষ্য দেন। এ সময় র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তা ও নূর হোসেনসহ ৩৫ আসামির পক্ষের আইনজীবীরা সাক্ষীদের জেরা করেন। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত একটানা চাঁদনী রূপম আদালতে সাক্ষ্য দেন। আদালত এক ঘণ্টার জন্য সাক্ষ্য গ্রহণ মূলতবি রেখে দুপুর দুইটায় আবার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। পরবর্তীতে নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের বন্ধু নিহত মনিরুজ্জামান স্বপনের ভাই মিজানুর রহমান রিপন আদালতে সাক্ষ্য দেন। এসময় একইভাবে ৩৫ আসামির আইনজীবীরা তাকে জেরা করেন। পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন জানান, দুটি মামলায় ৫ জন করে ১০ জন সাক্ষীর হাজিরা দিয়েছি। সাক্ষীদের মধ্যে ২ জন করে ৪ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। ৩৫ আসামিপক্ষের আইনজীবী সাক্ষীদের জেরা করেছেন। সময়স্বল্পতার কারণে অপর ৩ সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রদানের জন্য বিজ্ঞ আদালত আগামী ৩১ মার্চ পরবর্তী তারিখ ধার্য্য করেন। সাক্ষীরা মামলা প্রমাণের জন্য ভাল সাক্ষী দিয়েছেন বলে তিনি জানান। পিপি ওয়াজেদ আলী খোকন আরও জানান, ৭ খুনের দুটি মামলার বাদীর আলাদা আলাদা সাক্ষ্য ব্যতীত পরবর্তী সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ একটি মামলায় নেয়া হলেও সেটি দুটি মামলায় জবানবন্দী ও আসামিপক্ষের জেরা গৃহীত হবে। আমি রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আদালতে দুটি মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ একটিতে করার আবেদন জানালে তা মঞ্জুর করেন। এ বিষয়ে আদালত আসামিপক্ষের মতামত জানতে চাইলে তারাও এ বিষয়ে সম্মতি জানান। এদিকে দুটি মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী জেলা আইনজীবী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন জানান, নিহত মনিরুজ্জামান স্বপনের ভাই মিজানুর রহমান রিপন আদালতে দেয়া সাক্ষ্যে জানান, কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের সঙ্গে নূর হোসেনের বিরোধ ছিল। এই বিরোধের জের হিসেবে নূর হোসেন প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাকে হত্যার পরিকল্পনা করছিল। নিহত স্বপন এই বিষয়টি তার ভাই রিপন ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জানিয়েছিলেন। সে বিষয়টি আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন রিপন। মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের পক্ষের আইনজীবী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট খোকন সাহা সাংবাদিকদের জানান, আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী যে বিচারক রের্কড করেছেন আমরা তার ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো আদালতে তুলে ধরেছি। অপর সাক্ষী নিহত মনিরুজ্জামান স্বপনের ভাই মিজানুর রহমান রিপন আদালতে যে সাক্ষ্য দিয়েছেন তা চাক্ষুস সাক্ষী না। এরা ঘটনা সর্ম্পকে বিস্তারিত বলতে পারেনি এবং ঘটনা প্রমাণ করতে পারেনি। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকা থেকে সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু সিরাজুল ইসলাম লিটন, সহযোগী যুবলীগ নেতা মরিুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, স্বপনের গাড়ি চালক জাহাঙ্গীর, সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিমকে অপহরণের তিন দিন পর লাশ উদ্ধার করা হয়। খুনের ঘটনায় প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও তার ৪ সহযোগী হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বাদী হয়ে একটি এবং সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়ির চালক ইব্রাহিম হত্যার ঘটনায় জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে একটিসহ ফতুল্লা মডেল থানায় মোট দুটি মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ এক বছর তদন্তের পর তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির ওসি মামুনুর রশিদ ম-ল ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল মামলায় নূর হোসেন ও র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
×