ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নিবেদিত মঞ্চকর্মী শামীমা আক্তার মুক্তা

প্রকাশিত: ০৭:২৩, ২৯ মার্চ ২০১৬

নিবেদিত মঞ্চকর্মী শামীমা আক্তার মুক্তা

সাজু আহমেদ ॥ বাংলাদেশের মঞ্চ নাটক বিশ্বমানের। তবে এর পেছনে প্রবীণদের দীর্ঘ দিনের সংগ্রামের পাশাপাশি তারুণ্যের ভূমিকাও কম নয়। বলা হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে তরুণদের হাত ধরে মঞ্চনাটক উত্তরোত্তর সমৃদ্ধ হচ্ছে। বিশেষ করে যে কয়জন তরুণ নাট্যকর্মী অভিনয় ও নির্দেশনার পাশাপাশি, নেপথ্যের বিভিন্ন কাজে মেধার স্বাক্ষর রাখছেন তাদের মধ্যে শামীমা আক্তার মুক্তা অন্যতম। মুক্তা মঞ্চে গত প্রায় ১৯ বছর ধরে যুক্ত রয়েছেন অন্তত ২০টি নাটকে সহস্রাধিকবার মঞ্চে অভিনয় করেছেন। চারটি নাটক নির্দেশনা এবং নাটকের নেপথ্যে কাজ করে প্রশংসিত হয়েছেন। নিজের ‘মেঠোপথ’ সংগঠনের মাধ্যমে সঙ্গীত প্রতিভারও স্বাক্ষর রাখছেন নাট্যধারার এই কর্মী। নিজের ক্যারিয়ার প্রসঙ্গে মুক্তা জনকণ্ঠকে জানান ছোটবেলা থেকেই থিয়েটারের প্রতি তাড়না কাজ করত। মনের ভেতরে সুর তালের টান অনুভব করতেন। সেই টানে ১৯৯৭ সালে নিজ জেলা মুন্সীগঞ্জের ‘অনিয়মিত সাহিত্য সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী’ থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হন। তখন থেকেই প্রত্যয় ছিল আজীবন থিয়েটারকে কেন্দ্র করেই বাঁচবেন। তিনি জানান, মফস্বলে মেয়েদের থিয়েটার করাটা চাট্টিখানি কথা নয় ! নানা বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও নিজের ইচ্ছা শক্তি বলেই আজ এ পর্যায়ে আসতে পেরেছেন তিনি। মুন্সীগঞ্জের পর ২০০৪ সালে ঢাকার সিএটির সঙ্গে কাজ শুরু করেন মুক্তা। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৬ সালে উদীচীর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়। এর মাঝে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির অনেকগুলো রেপার্টরিতে কাজ করেন। বর্তমানে ঢাকার প্রথম সারির দল নাট্যধারার বিভিন্ন প্রযোজনায় নিয়মিত অভিনয় করছেন। থিয়েটারের জন্যই নাচ শিখেছেন। পাশাপাশি লোক সঙ্গীত নিয়ে পড়াশোনা করছেন সরকারী সঙ্গীত কলেজে। সেখানে বর্তমানে এমমিউজ করছেন তিনি। এর মধ্যে অসংখ্য কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন। বর্তমানে মুক্তা ‘মেঠোপথ’ নামের একটি গানের দল নিয়ে ব্যস্ত আছেন। যেখানে সমমনা কয়েকজন বন্ধু মিলে বাংলা গানের চর্চা করছেন। উদ্দেশ্য একটাই বাঙালী সুর বাঙালী ঐতিহ্যকে শ্রোতাদের মাঝে তুলে ধরা। মুক্তা জানান, গানের দল করার পেছনে আরেকটি কারণ হলো মনের খোরাক যোগান গান দিয়ে। গান গাইতে ভাল লাগে তাই দল করা। যাতে গানের চর্চাটাকে বেগবান করতে পারি। মুক্তা অভিনীত নাটকগুলোর মধ্যে মুন্সীগঞ্জের অনিয়মিত সাহিত্য সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর ‘সেই সমতটে এই জনপদে’, সিএটির ‘সোনাই বিবির পালা’, ‘ব্রান্ড’ ও ‘ মিশন’, উদীচীর ‘হাফ আখড়াই’, ‘রাজনৈতিক হত্যা’, পরিবেশ থিয়েটারের ‘এলিজি অব সিডর’ ও ‘রাম নন্দের আঁখ’, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ‘একশ বস্তা চাল’, ‘গাজী কালু চম্পাবতির পালা’ এবং ‘ক্ষেত মজুর খৈমুদ্দিন’, ‘রুদ্র রবী ও জালিয়ানওয়ালা বাগ’, নাট্যম রেপার্টরির ‘দমের মাদার’, লন্ডন রেপার্টরির ‘মিরান্ড’ এবং ‘মোনা’, নাট্যধারার ‘আয়না বিবির পালা’, ‘রথের রশি’ ও ‘গররাজি কবিরাজ’, ‘এবং অশ্বমেধ যজ্ঞ’ এবং সর্বশেষ থিয়েটার ৫২ প্রযোজিত জয়ীতা মহলানবীশের নির্দেশনায় ‘নননপুরের মেলায়’, ‘একজন কমলা সুন্দরী ও একটি বাঘ আসে’ নাটকে অভিনয় করছেন। নাটকের পা-ুলিপি বদরুজ্জামান আলমগীর। এ নাটকে মুক্তা কমলা সুন্দরীর চরিত্রে অভিনয় করছেন। নাটকের গল্প একটি যুদ্ধ শিশুকে নিয়ে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে নারী নির্দেশকের খুব অভাব তাই এই নারী নির্দেশককে আমি সাধুবাদ জানাই। নতুন নাটক প্রসঙ্গে মুক্তা বলেন, নাটকে আমি আমার সর্বোচ্চ পারফমেন্স করার চেষ্টা করছি। আগামী ২৯ মার্চ স্টুডিও থিয়েটার হলে নাটকের টেকনিক্যাল শোর পর। অচিরেই নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হবে। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি টিভি নাটক ও বিজ্ঞাপনেও কাজ করেছেন। মুক্তা অভিনীত টিভি নাটকের মধ্যে রয়েছে এসএটিভির ধারাবাহিক ‘পরি’, একুশেটিভির টেলিফিল্ম ‘দ্য চেইন’, ‘চোখের বালি’, ‘থার্ড আই’ এবং আনন্দ টিভির ‘তবু ভালবাসি’ অন্যতম। এছাড়া দেশটিভি ও বৈশাখী টিভিতে লাইভ গানের অনুষ্ঠান করেছেন। এছাড়া মুক্তা আশীষ খন্দকার পরিচালিত ‘বাথান’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তবে মঞ্চকর্মী নিজেকে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তিনি। থিয়েটার কর্মী মুক্তার জন্য শুভ কামনা।
×