ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আউশ চাষে প্রণোদনা

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ৩০ মার্চ ২০১৬

আউশ চাষে প্রণোদনা

সরকার কয়েক বছর আগেই কৃষিতে বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা প্রদানের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করে। প্রণোদনা প্রদানের ধারাবাহিকতা রক্ষা সম্ভব হয়েছে মূলত কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর দূরদর্শিতা ও আন্তরিকতার কারণেই। আউশ ধান আবাদের জন্য উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রান্তিক চাষীকে কোটি কোটি টাকার প্রণোদনা-সুবিধা দেয়ার কার্যক্রম চালু হয় ২০১২ সালে। এরপর থেকে প্রতিবছর এ খাতে অর্থ বরাদ্দ যেমন বাড়ছে, তেমনি অধিক সংখ্যক চাষীকে প্রণোদনার আওতায় আনা হচ্ছে। বলাবাহুল্য এটি কৃষিপ্রধান দেশের জন্য কার্যকর একটি উদ্যোগ। বর্তমান সরকার কৃষিবান্ধব বলেই প্রণোদনা কার্যক্রম উত্তরোত্তর জোরদার হচ্ছে। রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী এবারের আউশ চাষের জন্য প্রণোদনার যে ঘোষণা দিয়েছেন তা আউশ চাষে প্রান্তিক কৃষকদের নিশ্চয়ই উৎসাহিত করবে। কৃষি উন্নয়ন ও কৃষকের স্বার্থ রক্ষাকে প্রাধান্য দেয়ার সুফল দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। প্রতিবছরই বাম্পার ফলন হচ্ছে। ষোলো কোটি মানুষের দেশটিতে নানা কারণে প্রতিবছর কৃষি জমির পরিমাণ হ্রাস পেলেও মাটির উর্বরতার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে কুশলী কৃষকরা দেশকে খাদ্যে স্বয়ংস্পূর্ণতার দিকে নিয়ে গেছেন। সরকারের নীতি এক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক হয়েছে। বীজ ও সারের কোনো সঙ্কট নেই। কৃষকদের স্বল্প সুদে ঋণ দেয়া হচ্ছে। ফলন বেশি হলে স্বাভাবিকভাবেই বাজারে সরবরাহে ঘাটতি থাকবে না। সেক্ষেত্রে ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার একটা আশঙ্কাও উঁকি দিয়ে যায়। আবার আমদানিকৃত ফসল, বিশেষ করে চালের মূল্য বাজারে কম হলে সেক্ষেত্রেও কৃষকের ন্যায্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। শুধু আউশ চাষের জন্য আগাম প্রণোদনা নয়, সরকার ইতোপূর্বে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোয় রবি মৌসুমের জন্যও প্রণোদনা দিয়েছে। কৃষকদের উন্নত জাত এবং নতুন উদ্ভাবিত ফসল আবাদের উৎসাহিত করতে কৃষি মন্ত্রণালয় ওই উদ্যোগ নেয়। চলতি মৌসুমে সেচের সুব্যবস্থা নেইÑ আউশনির্ভর এমন জেলাগুলোতে এই ধানের বিভিন্ন জাত জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। দেশের উত্তর, মধ্য ও বরিশাল অঞ্চলের অপেক্ষাকৃত শুষ্ক অঞ্চলে এই জাত বেশি উপযোগী। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রতিটি ইউনিয়নের কৃষকদের কমিটি আছে ও তাদের কার্ডও রয়েছে। ওই কার্ড দেখেই কৃষকদের প্রণোদনা দেয়া হবে। এর জন্য আলাদা বরাদ্দের প্রয়োজন হবে না, মন্ত্রণালয়ের বাজেট থেকেই সংস্থান হবে। টাকা পেতে কৃষকদের জন্য কোন সমস্যা না হয় সেলক্ষ্যে এবারই প্রথম বিকাশের মাধ্যমে কার্ডধারী ওই সব কৃষকের কাছে প্রণোদনার টাকা পাঠানো হচ্ছে। আমাদের কৃষিকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। কৃষককে যেন সার, বীজ, সেচ ইত্যাদি খরচ ওঠাতে হিমশিম খেতে না হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে। আজকে আমাদের খাদ্যশস্য উৎপাদনে যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা তা ধরে রাখতেই ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে, মূল্যায়ন করতে হবে কৃষকের অবদান। কৃষি উৎপাদনে প্রণোদনার অর্থ বরাদ্দে কৃষকরা উপকৃত হন, এটা সত্য। তবে বর্তমান প্রণোদনার পর আউশ উৎপাদনে আগামীতে কতটুকু অগ্রগতি সাধিত হলো সেটাও মনিটর করা দরকার।
×