ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আবদুল গাফ্্ফার চৌধুরী

এক কদম এগুবার জন্য আগে দু’কদম পেছাতে হবে

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ৩০ মার্চ ২০১৬

এক কদম এগুবার জন্য আগে দু’কদম পেছাতে হবে

কথাটা বলেছিলেন সোভিয়েট-বিপ্লবের নির্মাতা লেনিন। বলেছিলেন, ‘এক পা এগুতে হলে আগে দু’পা পেছাতে হবে।’ কথাটা মনে পড়ল বাংলাদেশে রাষ্ট্রধর্মের বিধান সম্পর্কে হাইকোর্টের রায় শুনে। দেশের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্মের বিধান ঢোকানোর বিরুদ্ধে ১৯৮৮ সালে মামলা করা হয়েছিল। এত দীর্ঘকাল পর উচ্চ আদালত সেই মামলাটি খারিজ করে দিলেন। সংবিধানে রাষ্ট্রধর্মের বিধান বলবৎ রইল। এ জন্য দেশের সেক্যুলারিস্ট মহলের একটা বড় অংশে হতাশার ছায়া নেমেছে। যারা বড় আশায় বুক বেঁধেছিলেন এই ভেবে যে, দেশে জামায়াত-বিএনপি-শিবির যখন এতটাই বিপর্যস্ত, তখন একজন স্বৈরাচারী শাসক কর্তৃক সংবিধানের মৌলিক চরিত্র ধ্বংস করে তাতে রাষ্ট্রধর্মের বিধান সংযোজনের যে উদ্দেশ্যমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিলেন, তা বাতিল হবে এবং সংবিধান তার ’৭২ সালের পূর্ব চরিত্র ফিরে পাবে। তাদের আশা পূর্ণ হয়নি। ঢাকা থেকে আমার সেক্যুলারপন্থী এক বন্ধু টেলিফোনে চরম হতাশা প্রকাশ করে বললেন, ‘বড় আশা ছিল, আওয়ামী লীগের এবারের শাসনামলেই দেশের সংবিধান তার পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র ফিরে পাবে। তা পেল না দেশটা। বড় বেশি পিছিয়ে গেল।’ তাকে মহামতি লেনিনের সেই ঐতিহাসিক বাণী শোনালাম, ‘এক কদম এগুতে হলে দু’কদম পেছাতে হয়।’ বন্ধুকে বললাম, এই রায় দেশটাকে এক অনিবার্য গৃহযুদ্ধ থেকে বাঁচিয়েছে। রাষ্ট্রধর্মকে ইস্যু করে দেশের মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী দেশময় অরাজকতা সৃষ্টির জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল। অন্যান্য ইস্যুতে এই অপশক্তি কোন আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। সরকার তাদের সহজেই দমন করতে পেরেছে। কিন্তু রাষ্ট্রধর্মের ইস্যুতে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের মধ্যে একটা ইমোশন রয়েছে। এই ইমোশনকে কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রধর্মের ব্যাপারে সহজেই সাধারণ মানুষকেও বিক্ষুব্ধ করে রাস্তায় নামানো সম্ভব। এই ব্যাপারে আন্দোলন শুরু হলে বিএনপি, জাতীয় পার্টি প্রকাশ্যে এবং ক্ষমতাসীন দলের ভেতরের একটা শক্তিশালী অংশও নেপথ্যে সমর্থন যোগাত। হেফাজতী অভ্যুত্থানের সময়েও বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে এই অভ্যুত্থানের পেছনে সমর্থন যোগাতে দেখা গেছে। সেবার মাদ্রাসার ছাত্রদের ছাড়া সাধারণ মানুষের সমর্থন হেফাজতীদের পেছনে ছিল না। কিন্তু রাষ্ট্রধর্মের ইস্যুতে ধর্মের নামে সহজেই ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত ও বিক্ষুব্ধ করে রাস্তায় নামানো সম্ভব হতো। প্রশাসনিক শক্তি দ্বারা এই আন্দোলনকে হয়ত দমন করা যেত। কিন্তু তাতে যে সংঘর্ষ ও রক্তপাত হতো তা একটা গৃহযুদ্ধের রূপ নিতে পারত। এই রায় দেশকে সে অবস্থা থেকে বাঁচিয়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতাকে ইস্যু করে দেশে সংঘাত ও সংঘর্ষ দেখা দিক; হাসিনা সরকার বহু চেষ্টা করে গণতন্ত্রের যে নাজুক কাঠামোটা ধরে রেখেছেন তা ভেঙ্গে যাক এবং ধর্মরক্ষার নামে আন্দোলন করে সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী জোট আবার ক্ষমতায় আসুক এটা আমি চাই না। দেশের সংবিধানে আজ ধর্মনিরপেক্ষতার বিধান ঢোকানো যায়নি, ভবিষ্যতে একদিন অবশ্যই তা করা যাবে। সংবিধান অপরিবর্তনীয় ধর্মগ্রন্থ নয়। সব দেশেই প্রয়োজনমতো সংবিধান সংশোধন ও পরিবর্তন করা হয়। বাংলাদেশেও হয়েছে। ভবিষ্যতে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মনকে ধর্মান্ধতার প্রভাব থেকে মুক্ত করা গেলে এবং ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে সুষ্ঠু জনমত তৈরি করা গেলে অবশ্যই বাংলাদেশের সংবিধানে আবার ধর্মনিরপেক্ষতার বিধান ফিরিয়ে আনা যাবে। সেজন্য ধৈর্য ধরতে হবে। জনমত তৈরি করতে হবে। সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার বিধান যুক্ত থাকলেই কোন দেশ ধর্মনিরপেক্ষ হয়, তার কোন নজির নেই। কোন দেশের মানুষ যদি ধর্মনিরপেক্ষ না হয়, ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে সংখ্যগরিষ্ঠের শক্তিশালী সমর্থন গড়ে না ওঠে, তাহলে সে দেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা থাকলেও দেশটি ধর্মনিরপেক্ষ হয় না। কাজির গরু যেমন কেতাবে থাকে, গোয়ালে থাকে না, তেমনি কেতাবের ধর্মনিরপেক্ষতাও কখনও জনসমাজে ও জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠা পায় না। কম্যুনিস্টরা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় পূর্ব ইউরোপ দখল করে সেখানে জনমনকে প্রস্তুত করার আগেই গির্জা ও মসজিদে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিল। সেটা ধর্মনিরপেক্ষতা ছিল না, ছিল ধর্মের উচ্ছেদ চেষ্টা। ফল কী দাঁড়িয়েছিল? কম্যুনিস্ট সরকারগুলোর পতনের সঙ্গে সঙ্গে সকলের আগে গির্জা ও মসজিদের তালা খুলে গেছে। মানুষ আরও বেশি করে ধর্মপ্রবণ হয়েছে এবং গির্জা ও মসজিদে ঢুকেছে। কোন আদর্শ যত ভাল হোক জনগণের মাথায় তা জোর করে চাপিয়ে দেয়া যায় না। চাপিয়ে দেয়া গেলে তুরস্কে ধর্মনিরপেক্ষতাভিত্তিক এত শক্তিশালী ফরমালবাদের আজ এই পরিণতি ঘটত না। মধ্যপ্রাচ্যে নাসেরের শক্তিশালী সেক্যুলার আরব জাতীয়তাবাদ মুরসির ইসলামিক ব্রাদারহুডের হাতে মার খেত না। বাংলাদেশে আমরা যে ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদকে সংবিধানে স্থান দিয়েও টিকিয়ে রাখতে পারিনি তার কারণ আমাদেরই একটা ভ্রান্তি। স্বাধীনতার যুদ্ধে জয়ী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ধরে নিয়েছিলাম, আমাদের জনসমাজে ধর্মনিরপেক্ষতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে। জনসমাজ কয়েক শতাব্দীর সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতার প্রভাবমুক্ত হয়ে রাতারাতি অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে গেছে। তা যে হয়নি তার প্রমাণ পঁচাত্তরের ট্র্যাজেডির পর দু’দশক ধরে আমরা পেয়েছি। সংবিধান থেকে শুধু ধর্মনিরপেক্ষতা কর্তন হওয়া নয়, বিএনপি ও জামায়াতের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক ও ধর্মান্ধ শক্তির অভ্যুত্থান আমরা দেখেছি। যে অভ্যুত্থানের মোকাবেলায় আওয়ামী লীগসহ সকল সেক্যুলার দলগুলোকেই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে হচ্ছে। হেফাজতের তেরো দফার বিরুদ্ধে সবল কণ্ঠে তারা কথা বলতে পারেনি। মুক্তমনা ব্লগার হত্যা নীরবে সহ্য করতে হয়েছে। ভারতে গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা চলছে আজ সত্তর বছর ধরে। তারপরও সেদেশে ধর্মনিরপেক্ষতা আজ উগ্র হিন্দুত্ববাদের ভয়ানক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি ধর্মীয় রাষ্ট্রের কাঠামো ভেঙ্গে স্বাধীন হওয়ার পর কী করে ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদ শুধু সংবিধানে যুক্ত করে রাতারাতি তা প্রতিষ্ঠা করা গেছে এই ভ্রাান্তিতে আমরা ভুগেছি তা ভেবে এখন বিস্মিত হই। আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধ হয়েছে পাকিস্তানের শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে। সেখানে ধর্মনিরপেক্ষতা ছিল একটি সেøাগান মাত্র। এটাকে আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠাদানের জন্য আমরা কোন আন্দোলন করিনি। জনমনকে এই আদর্শ গ্রহণের জন্য প্রস্তুত করিনি। ধরেই নিয়েছি সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষ কথাটি যুক্ত করলেই রাষ্ট্রে ও সমাজে আদর্শটি প্রতিষ্ঠা পেয়ে যাবে। এই ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ দেশের বৃহত্তর জনসমাজ কেন, আওয়ামী লীগের কর্মী ও নেতাদের একটা বড় অংশের মধ্যেও কখনও প্রতিষ্ঠা পায়নি, পেলে আওয়ামী লীগসহ অধিকাংশ অসাম্প্রদায়িক দল এত শীঘ্র রাজনীতির ধর্মীয় কালচারের কাছে আত্মসমর্পণ করত না। স্বাধীনতা লাভের পর সব পেয়েছির আত্মতুষ্টিতে না ভুগে আমাদের উচিত ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সমাজকে দীর্ঘকালের সাম্প্রদায়িক ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রভাবমুক্ত করার জন্য শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলা। ধর্ম ও ধর্মান্ধতা যে এক জিনিস নয়, ধর্মনিরপেক্ষতা যে ধর্মহীনতা নয় এই সত্য সাধারণ মানুষকে বোঝানো। ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলার বদলে আমাদের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক নেতারাও ভেবেছেন, কেবল কেতাবে লিখে দিলেই ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা পেয়ে যাবে। তা হয়নি। বরং সাম্প্রদায়িক ও ধর্মভিত্তিক দলগুলো একজোট হয়ে এই বলে শক্তিশালী প্রোপাগান্ডা চালিয়েছে যে, ধর্মনিরপেক্ষতা হলো ধর্মহীনতা। ধর্মনিরপেক্ষতায় যে কোন দেশে সকল ধর্মের অস্তিত্ব ও সমানাধিকার রক্ষার গ্যারান্টি এই সত্যটা অশুভচক্র জনসাধারণকে বুঝতে দেয়নি, সেক্যুলার রাজনৈতিক দলগুলোও জনগণকে সে কথা বোঝানোর জন্য কোন আন্দোলনে নামেনি। কেবল বক্তৃতা-বিবৃতিতে দায়সারা গোছের বক্তব্য রেখেই দায়িত্ব পালন করেছে। এরই সুযোগ নিয়েছে উগ্র মৌলবাদী দলগুলো। সব দেশেই সাধারণ মানুষ ধর্মপ্রাণ। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষও। মৌলবাদী দলগুলো সাধারণ মানুষের এই ধর্মবিশ্বাসকেই পুঁজি করে তাদের মধ্যে ধর্মান্ধতা ঢুকিয়েছে এবং ধর্মান্ধতার এই ধারালো অস্ত্রের সাহায্যেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল ভিত্তিগুলোকে (ধর্মনিরপেক্ষতাসহ) একে একে ধ্বংস করার চেষ্টা চালাচ্ছে। মনে রাখতে হবে দেশের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্মের বিধানটি ঢুকিয়েছেন এক চরিত্রহীন স্বৈরশাসক। তিনি তার ক্ষমতার স্বার্থে ধর্মকে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। তিনি ক্ষমতায় থাকতে পারেননি। কিন্তু দেশের উগ্র মৌলবাদীদের হাতে একটি বিপজ্জনক অস্ত্র তুলে দিয়ে গেছেন, যে অস্ত্রের সামনে দাঁড়াবার শক্তি ও জনসমর্থন এখন সেক্যুলার রাজনৈতিক শিবিরের তেমন নেই। এই অবস্থায় সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার বিধান রাখার প্রশ্নে সংঘাত দেখা দিলে দেশের নাজুক গণতান্ত্রিক কাঠামোটিকেও টিকে থাকতে দেবে কি? বর্তমান হাসিনা সরকার অধিকাংশ ব্যাপারেই মধ্যপন্থা গ্রহণ করে বহু চেষ্টায় দেশের এই নাজুক গণতন্ত্রের কাঠামো এবং সেই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় ধর্মনিরপেক্ষতার দুর্বল অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। এই সরকারকে অপ্রস্তুত অবস্থায় এবং দেশে ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে জনমত যখন সংগঠিত ও শক্তিশালী নয়, তখন কোন প্রকার সংঘাতে যাওয়ার দাবি তোলা কি সঙ্গত হবে? কোন লক্ষ্যে পৌঁছা যখন সহজ ও সম্ভব মনে হয় না, তখন ধৈর্যধারণ ও কৌশল অবলম্বনের জন্যই লেনিন বলেছিলেন, এক কদম আগাবার জন্য দু’কদম পেছুতে হবে। সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার বিধান ফিরিয়ে আনতে হলে আগেই সংঘাতে না গিয়ে জনমত তৈরি করতে হবে, যে কাজটি রাষ্ট্রের চারটি আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য গত ৪৫ বছরেও করা হয়নি। এমন যে কট্টর কম্যুনিস্ট নেতা কিউবার ফিডেল ক্যাস্ট্রো, তিনিও প্রবল বিরুদ্ধ জনমতের মোকাবেলায় দু’কদম পিছু হটেছিলেন। বেশ কয়েক বছর আগের কথা। কিউবায় কম্যুনিস্ট শাসন উৎখাতের জন্য আমেরিকা ও তার পশ্চিমা মিত্রেরা সে দেশের মৌলবাদীদের উস্কে দিয়েছিল। ফিডেল ক্যাস্ট্রো কিউবায় ক্রিসমাস পালন বাতিল করে দিয়েছিলেন। ক্রিশ্চান মৌলবাদীরা এটাকেই ইস্যু করে কিউবায় ক্রিশ্চান ধর্মের অবমাননা করা হয়েছে বলে প্রচারণা শুরু করে। তাদের সমর্থন জানাতে ভ্যাটিকানের পোপ কিউবা সফরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। তাকে সংবর্ধনা দেয়ার জন্য কিউবার মানুষের মধ্যে বিরাট সাড়া পড়ে যায়। জনমতের এই বিরুদ্ধ স্রোত দেখে ক্যাস্ট্রো আর সংঘাতে ও সংঘর্ষে যাননি। তিনি দু’পা পিছিয়ে ঘোষণা দেন, কিউবায় আবার ক্রিসমাস পালন করা যাবে। তবে এই উৎসবের নাম হবে পিপল ক্রিসমাস বা জনগণের ক্রিসমাস। ক্যাস্ট্রো নিজে বিমানবন্দরে গিয়ে ভ্যাটিকানের পোপকে স্বাগত জানান এবং পোপের উপস্থিতিতে এক বিরাট জনসভায় বক্তৃতা দেন। এভাবে বিরুদ্ধ জনমতের সঙ্গে সংঘর্ষে না গিয়ে, দু’পা পিছিয়ে ক্যাস্ট্রো কিউবায় কম্যুনিস্ট বিপ্লব ও কম্যুনিস্ট সরকারকে রক্ষা করেন এবং মার্কিন ও মৌলবাদীদের চক্রান্ত ব্যর্থ করে দেন। বাংলাদেশেও হেফাজতী অভ্যুত্থানসহ বিভিন্ন মৌলবাদী চক্রান্তের মুখে মধ্যপন্থা গ্রহণ করে হাসিনা সরকার সেসব চক্রান্ত ব্যর্থ করে দিয়েছেন। রাষ্ট্রধর্ম সংক্রান্ত হাইকোর্টের বর্তমান রায় এই ধরনের আরেকটি ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়েছে বলে আমি মনে করি। তবে সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার বিধান ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টাটি পিছিয়ে গেলে চলবে না। এ জন্য দেশের গণতান্ত্রিক দলগুলোর উচিত শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলা। ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে শক্তিশালী জনমত গড়ে তোলা। এই জনমত সংগঠিত হলে দেশের জনপ্রতিনিধিরাই অদূর ভবিষ্যতে সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার বিধান ফিরিয়ে আনবেন বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। এক কদম আগাবার জন্য যদি এখন দু’কদম পেছাতে হয়, তাতে আপত্তি করা সম্ভবত ঠিক হবে না।[ লন্ডন ২৯ মার্চ, মঙ্গলবার, ২০১৬]
×