ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রিভিউ চেয়ে নিজামীর আবেদন

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৩০ মার্চ ২০১৬

রিভিউ চেয়ে নিজামীর আবেদন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আপীলে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত বদর বাহিনীপ্রধান জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী খালাস চেয়ে রিভিউ (রায় পুনর্বিবেচনার) আবেদন করেছেন। তার ছেলে ব্যারিস্টার নাজীব মোমেন মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মঙ্গলবার ৭০ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদন সুপ্রীমকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দিয়েছি।’ এই আবেদনে মোট ৪৬টি যুক্তি তুলে ধরে সব দ- থেকে নিজামীর খালাস চাওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। উল্লেখ্য, বিগত চারদলীয় জোট সরকারের মন্ত্রী নিজামী চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর দশ ট্রাক অস্ত্র মামলারও মৃত্যুদ-াদেশ পাওয়া আসামি। এদিকে, অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) যে আবেদন করেছেন, শীঘ্রই তার ওপর শুনানির পদক্ষেপ নেয়া হবে। তিনি বলেন, যে তিনটি চার্জে (অভিযোগে) আপীল বিভাগ মৃত্যুদ- (নিজামীর) বহাল রেখেছে তার বিরুদ্ধে রিভিউ করেছেন আসামিপক্ষ। রায় যেটা ছিল, আমরা মনে করি সে রায় বহাল থাকবে। রিভিউটা শুধু হবে আইনগতভাবে। রিভিউয়ে আপীলের রায়ে কোন ভুল-ভ্রান্তি আছে কি-না সেটা দেখা হবে। অন্যদিকে আসামির প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আলবদর বাহিনীর সঙ্গে নিজামীর সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল না। আপীল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় নিজামীর রিভিউ পুনর্বিবেচনার আবেদন দায়ের করার পর এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি রিভিউতে তারা বিষয়টি ভালভাবে দেখবেন। আমরা আশা করি নিজামী রিভিউতে খালাস পাবেন।’ একাত্তরের বদরপ্রধান নিজামীর রিভিউ না টিকলে রাষ্ট্রপতির কাছে তিনি প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন। দুই আর্জিই নাকচ হলে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে কারা কর্তৃপক্ষ দ- কার্যকরের ব্যবস্থা নেবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাবনায় হত্যা, ধর্ষণ এবং বুদ্ধিজীবী গণহত্যার দায়ে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ-ের রায় দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি আপীল আংশিক মঞ্জুর করে সেই ফাঁসির রায়ই বহাল রাখে সর্বোচ্চ আদালত। সুপ্রীমকোর্ট ১৫ মার্চ নিজামীর আপীলের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর ওই দিনই আসামির মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনাল থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ঘুরে লাল শালুতে মোড়ানো সেই মৃত্যু পরোয়ানা পরদিন সকালে কাশিমপুরে পৌঁছলে নিজামীকে তা পড়ে শোনায় কারা কর্তৃপক্ষ। এর পর নিজামীর আইনজীবী ও পরিবারের সদস্যরা দুই দফা কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে নিজামীর সঙ্গে দেখা করেন। ওই সাক্ষাতে নিজামীই রিভিউ চাওয়ার নির্দেশনা দেন বলে তার আইনজীবীরা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী রায় প্রকাশের পর ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদন করার সুযোগ দেয়া হয় আসামিকে। সে হিসাবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় থাকলেও তার দু’দিন আগেই এ আবেদন জমা দেয়ার কথা জানালেন নিজামীর ছেলে। ট্রাইব্যুনালের রায়ে প্রসিকিউশনের আনা ১৬ অভিযোগের মধ্যে আটটিতে নিজামীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এর মধ্যে ২, ৪, ৬ ও ১৬ নম্বর ঘটনায় নিজামীর ফাঁসির রায় আসে। আর অপরাধে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হওয়ায় ১, ৩, ৭ ও ৮ নম্বর অভিযোগে নিজামীকে দেয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদ-। আপীলের রায়ে বলা হয়, যে আট অভিযোগে তিনি (নিজামী) ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন, তার মধ্যে ১, ৩ ও ৪ নম্বর অভিযোগে তিনি খালাস পেয়েছেন। আর ২, ৬, ৭, ৮ ও ১৬ নম্বর অভিযোগে তার দ- বহাল রয়েছে। এর মধ্যে ২, ৬ ও ১৬ নম্বর অভিযোগে পাবনার বাউশগাড়ি, ডেমরা ও রূপসী গ্রামের প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে পাকিস্তানী সেনারা হত্যা ও ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ; পাবনার ধুলাউড়ি গ্রামে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৫২ জনকে হত্যা এবং পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবী গণহত্যার দায়ে নিজামীর ফাঁসির রায় বহাল রেখেছে আপীল বিভাগ। ৪ নম্বর অভিযোগে পাবনার করমজা গ্রামে নয়জনকে হত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাটের অভিযোগে ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদ- হলেও আপীলে তিনি খালাস পেয়েছেন। ট্রাইব্যুনালের রায়ে ১, ৩, ৭ ও ৮ নম্বর অভিযোগে আটক, নির্যাতন, হত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র ও সংঘটনে সহযোগিতার চারটি অভিযোগে নিজামীকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়েছিল। সর্বোচ্চ আদালত প্রথম দুটিতে খালাস দিয়ে পরের দুটিতে সাজা বহাল রেখেছে।
×