ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রার্থনা করব, কাল কোহালি যেন রান না পায় ‍: ক্রিস গেইল

প্রকাশিত: ২০:১১, ৩০ মার্চ ২০১৬

প্রার্থনা করব, কাল কোহালি যেন রান না পায় ‍: ক্রিস গেইল

অনলাইন ডেস্ক ॥ লাইটস, ক্যামেরা, অ্যাকশন! গাল থেকে ঝুলছে পাতলা দাড়ি। ঘাড় পর্যন্ত নেমে আসা চুলের কোথাও কোথাও সোনালি রং ধরেছে। প্রাকৃতিক নয় ও সব, পুরোপুরি কৃত্রিম। আকর্ণবিস্তৃত হিংস্র হাসিটা হাসছেন এখন। উপরের তিনটে শব্দ বলতে-বলতে যে ভাবে এগিয়ে আসছেন দু’হাত ছড়িয়ে, দেখলে যে কোনও শিশুর রাতের ঘুম উড়ে যাবে তো বটেই, এমনকী যুবার শিরদাঁড়া দিয়ে নামতে পারে কুলকুল হিমস্রোত! ইনি রক্তমাংসের সত্যি তো? দেখে তো মনে হচ্ছে দৈত্য, ক্যারিবিয়ান দৈত্য! ইনি ক্রিস গেইল, মুম্বইয়ের ভরদুপুরে এখন সমবেত মিডিয়ার দিকে যিনি এগিয়ে আসছেন! ব্যাটের প্রহার বা বলের আদর এ দু’টো ছাড়াই স্রেফ দর্শনে ঘাবড়ে দেওয়ার ঐতিহ্য ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটে নতুন নয়। চার ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ফাস্ট বোলারকে দেখে তৎকালীন ব্যাটসম্যানদের তো আর নিছক বোলার মনে হত না। চলমান মৃত্যুদূতই লাগত। আবার ভিভ রিচার্ডস চুইংগাম চিবোতে-চিবোতে যখন তাকাতেন, বোলারের অবস্থা কী দাঁড়াত, সর্বজনবিদিত। মঙ্গলবারও তো। ড্যারেন স্যামির যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ভারতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে এসেছে তার ম্যানেজারের আশেপাশে ঘুরঘুরের বাইরে সিসিআই জনতা তো আর কিছু করতে পারল না। সম্ভ্রমে হোক। ভয়ে হোক। আসলে কিছু করারও নেই। খয়েরি টি শার্টের ভদ্রলোকের নামটা যে ক্লাইভ লয়েড! এবং অতীতের যেমন ক্লাইভ-ভিভ। অধুনা ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের তেমন গেইল। ভাবা যায়, খোলা মাঠে সামনে এসে দাঁড়ানোর প্রথম তিন মিনিট কোনও প্রশ্নই করতে পারল না মিডিয়া! বরং তাঁর ভয়াল হিমদৃষ্টির দিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকল অসীম সম্মোহনে। চলে যাওয়ার পরেও থেকে গেল একই রকম আবিষ্ট। গেইল চলে যাওয়ার পরে মিডিয়ার কাউকে কাউকে অস্ফুটে বলতে শোনা গেল যে, রেকর্ডারে কথাবার্তার সময় ছ’মিনিট দেখাচ্ছে। কিন্তু অভিজ্ঞতাটা আজীবনের। ঘটনা। বৃহস্পতিবার যে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নামবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ একে তো তারা টুর্নামেন্ট ফেভারিট। তার উপর টিমটায় বিরাট কোহালি নামক একজন আছেন, যিনি দিনের পর দিন একা হাতে ছিন্নভিন্ন করে ছাড়ছেন বিপক্ষকে। পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কেউ বিরাট-লাঞ্ছনার হাত থেকে বাদ যায়নি। কিন্তু ক্যারিবিয়ান কিংয়ের কথার্বাতা শুনলে ফেভারিট-টেভারিট সব মুহূর্তে গুলিয়ে যাবে। বিরাট-সম্ভ্রম অবশ্যই আছে। ক্রিস গেইল বলে দিলেন, তিনি প্রার্থনা করবেন যেন বৃহস্পতিবারের ওয়াংখেড়েতে বিরাট কোহালি চুপচাপ থাকেন। প্রবল নাটুকে ভঙ্গিতে চিৎকার করে বলেও দিলেন, “প্লিজ, ডোন্ট ফায়ার বিরাট! আচ্ছা ঠিক আছে, রান করো। তুমি রান করো কিন্তু তোমার টিম হারুক!” এমএসডির টিমকেও কোথাও সরাসরি অসম্মান করলেন না। কিন্তু নিপুণভাবে প্রত্যেক মন্তব্যের শিরা-উপশিরায় যেন চরম তাচ্ছিল্যও গুঁজে দিয়ে গেলেন! যা জানতে পারলে বোধহয় প্রাক্-সেমিফাইনাল টিম ইন্ডিয়ার ভাল লাগবে না। একেবারে ভাল লাগবে না। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের প্রশ্নটায় ঢোকার আগে পর্যন্ত টের পাওয়া যায়নি। ততক্ষণ পর্যন্ত বিরাট-স্তুতি চলছিল। ক্যারিবিয়ান দৈত্যকে তখনও স্রেফ দর্শনেই দৈত্য মনে হচ্ছিল, মেজাজে নয়। বারবার যিনি বলে চলেছেন, কোহালি যে এই জায়গায় একদিন যাবেন তিনি জানতেন। জানতেন, তাঁর আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্যাপ্টেন একদিন গোটা ক্রিকেট বিশ্বকে পদানত করে ছাড়বেন। গেইলকে তখন এটাও বলতে শোনা যাচ্ছে, ধোনির টিমে একা বিরাট নয়। এমন সব ম্যাচ উইনার আছে যাদের একজনকে হিসেবে বাইরে ছেড়ে রাখলে আর দেখতে হবে না। ম্যাচ শেষ! কিন্তু অশ্বিন-প্রসঙ্গ ঢুকতেই সে সব সম্প্রীতির ছবি-টবি স্রেফ উধাও হয়ে গেল। উল্টে ছিটকে বেরোল ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানের দানবীয় রূপ যাকে ক্রিকেটপৃথিবী চেনে। কেউ একজন জিজ্ঞেস করেছিলেন, ধোনি তো অশ্বিনকে দিয়ে শুরু করাতে পারেন। প্রথমেই আপনাকে ফেলতে পারেন অশ্বিনের স্পিন-ধাঁধায়। ভেবেছেন কিছু? প্রত্যুত্তরে যা এল, তাকে ছোটখাটো অগ্নুত্‌পাত বলা যায়। “ধোনি কি আগে কখনও অশ্বিনকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে শুরু করায়নি? আমার কাছে ওটা তাই চমক নয়। কিন্তু এটাও শুনে রাখুন, ক্রিস গেইল যে কোনও বোলারের জন্য তৈরি থাকবে! ক্রিস গেইল যে কারও জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত। কে বল করল না করল, ক্রিস গেইলের তাতে কিছু যায় আসে না,” রীতিমতো ফুঁসতে-ফুঁসতে গেইল আরও জুড়ে দেন, “যে বোলারই আসুক, গেইল তার উপর সোজা ঝাঁপিয়ে পড়বে। গেইল চাইবে, বলের সেলাই খুলে দিতে! চাইবে, বল যতটা সম্ভব জোরে মারতে। বোলার নয়, বল দেখবে আর একটাই থিওরি থাকবে। বিট ইট!” শুনলে ঝটিতি মনে পড়ে যাবে ওয়াংখেড়ে কিউরেটরের কথা। বিতর্কের সুধীর নায়েক এখনও আছেন। কিন্তু যিনি পিচের কাজকর্ম আদতে করেন বলে শোনা গেল সেই রমেশ মামুনকর এ দিন বলছিলেন যে, ওয়াংখেড়ে পিচে টার্ন নয়, রান থাকবে। তা হলে? গেইল চললে? ভারত-সমর্থকদের ধুকপুকুনি আরও বাড়তে পারে সওয়া ছ’ফুটের অবয়বের পরবর্তী কথাগুলো শুনলে। ইঙ্গিতে যা আরও মারাত্মক। আরও ভয়াবহ। “বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই সেঞ্চুরি পাওয়াটা বেশ ভাল। তবে বৃহস্পতিবার একটা বড় রান চাই। দেশকে ফাইনালে তুলতে হবে।” “ইন্ডিয়া ফেভারিট। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজও অঘটন ঘটানোর জন্য তৈরি হচ্ছে। আমি বাদেও টিমে কম ম্যাচ উইনার নেই।” চোটে আক্রান্ত ফ্লেচারের জায়গায় এ দিন টিমে ঢোকা মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের লেন্ডল সিমন্সকে ধরেই কথাটা সম্ভবত বলা হল। বলে আর দাঁড়ালেনও না গেইল। ব্যাটটাকে টুথপিকের মতো দোলাতে-দোলাতে সটান ঢুকে গেলেন নেটে। আর পরবর্তী এক ঘণ্টায় নির্মীয়মাণ সিসিআই গ্যালারির ছাদের উপর যে নিরন্তর ‘পাশবিক অত্যাচার’ চলল, দেখলে মনে হবে সামনে এখন থেকেই তিনি অশ্বিন দেখছেন! যে নৃশংসতার সারমর্ম এক লাইনে মিটিয়ে ফেলা যায়। বিওয়্যার ইন্ডিয়ান্স, গেইল ইজ কামিং। ভারত সাবধান, গেইল আসছে! সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×