ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ উত্তেজনাপূর্ণ সেমিফাইনাল আজ

প্রকাশিত: ০৬:০১, ৩১ মার্চ ২০১৬

ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ উত্তেজনাপূর্ণ সেমিফাইনাল আজ

মিথুন আশরাফ, মুম্বাই থেকে ॥ শেষ হয়ে আসছে টি২০ বিশ্বকাপ। অথচ যেন এখনও ঘুমন্ত ভারতের জনতা! কারও মধ্যে বিশ্বকাপ নিয়ে নেই কোন উত্তাপ। কলকাতায় যেমন, ব্যাঙ্গালুরুতে তেমন; এমনকি মুম্বাইয়ে ব্যস্ত নগরীতেও একইরকম। কারও মধ্যে ক্রিকেট নিয়ে নেই মাতামাতি। প্রতি স্থানে খেলার দিন যেমন শুধু স্টেডিয়ামমুখী হয় দর্শকরা, যখন ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সেমিফাইনাল ম্যাচ শুরু হবে, এর আগেও দর্শকদের আনাগোনা দেখা যাবে। অথচ ভারতে ক্রিকেটকে সবকিছুর উর্ধে রাখা হয়। সেটি আসলে ভারত জিতলেই শুধু বোঝা যায়। উৎসব শুরু হয়ে যায়। দল হারলেই আবার ‘যাচ্ছে-তাই’ বলা শুরু করে দেয় ভারতের জনগণ। হার কোনভাবেই সহ্য করতে পারে না তারা। আজ তাহলে ভারত দল কী করবে? পারবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে ফাইনালে উঠতে? না কি ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে বিদায় নেবে? তা খেলা শেষ হতেই বোঝা যাবে। তবে ম্যাচটির আগে যে দুই দলই চার ম্যাচের মধ্যে ২টি করে টি২০ ম্যাচে জিতেছে, যে দলই জিতুক এগিয়ে যাবে। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামটি দারুণ। সবকিছু চকচকে, তকতকে। গ্যালারি দিয়ে স্টেডিয়াম এমনভাবে ঘেরাও করা বাইরের কোন কিছুই দেখা যায় না। শুধু আকাশ দেখা যায়। অথচ প্রায় ৩৫ হাজার দর্শক ধারণা ক্ষমতার স্টেডিয়ামটির চারপাশে অপরূপ সব দৃশ্য। একদিকে ভারত মহাসাগর। স্টেডিয়াম থেকে বের হয়ে ২ মিনিট হাঁটলেই ‘মেরিন ড্রাইভ’। যেখানে বসে সমুদ্রের হিম বাতাসের সঙ্গে আড্ডা দেয়ার দুর্দান্ত স্থান। আরেকদিকে রাস্তা। ভিআইপি রোড। আরেক পাশে আছে এ্যাথলেটিক্স মাঠ ও রেল লাইন। যেখান দিয়ে মেট্র্রো রেলগুলো চলাচল করে। আরেকদিকে নামী-দামী সব হোটেল। কিন্তু কোন কিছুই দেখা যায় না। গ্যালারি দিয়ে এমনভাবে ঢেকে রাখা হয়েছে, শুধু ক্রিকেটটাই উপভোগ্য। সেই উপভোগের দিন আজ। দুই দলই বিশ্বকাপে চরম শক্তিশালী। দুটি সেমিফাইনালের মধ্যে ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচটি উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে পরিণত হয়েছে। ভারত দলটিকে তো বিশ্বকাপের শিরোপা জেতার দল আগেই ঘোষণা করে দিয়েছেন বিশ্বের সাবেক সব ক্রিকেটাররা। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে শিরোপা রেসে না রাখা হলেও আজ সেমিফাইনালে খেলছে দলটি। শুধু তাই নয়, ভারতের জন্য হুমকিও হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওয়াংখেড়েতে এখন পর্যন্ত দুই দলের মধ্যকার কোন ম্যাচ হয়নি। এবারই প্রথম টি২০ ম্যাচ খেলবে দুই দল। সেই ম্যাচে দুই দলকেই ধরা হচ্ছে ফেবারিট। গ্রুপ পর্ব থেকে ভারতও ১ ম্যাচ হেরে সেমিফাইনালে উঠেছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজও তাই। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যেখানে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হেরেছে, সেখানে ভারত হেরেছে গ্রুপ পর্বের সেরা দল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। মনে করা হচ্ছে, আফগানদের বিপক্ষে যেখানে হোঁচট খেয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারতের কাছেও খাবে। কিন্তু ভারতের জন্য সেমিফাইনালের আগে বড় হোঁচট হয়ে এসেছে যুবরাজ সিংয়ের না থাকা। ইনজুরিতে বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেছে যুবরাজের। আর এ বিষয়টি ভারতকে যে চিন্তায় ফেলেছে, সেটি ভারতকে হারিয়েও দিতে পারে। আজ সেমিফাইনাল ম্যাচ আসলে যতটানা ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যে লড়াই হবে, তারচেয়ে বেশি কোহলি-গেইলের মধ্যে লড়াই দেখা হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে, ম্যাচে জয়ের মূল মন্ত্রই হচ্ছে কোহলি নয় তো গেইলকে থামাও। ভারত যদি গেইলকে থামিয়ে দিতে পারে, জয় নিশ্চিত। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ যদি কোহলিকে থামিয়ে দিতে পারে ফাইনালে যাওয়া নিশ্চিত। এমন একটি অবস্থা হয়ে গেছে, ভারত অথবা ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের চেয়ে কোহলি ও গেইলের খেলা দেখতেই যেন আসবেন সবাই! মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়েতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ না খেললেও ভারত খেলেছে। ২০১২ সালে একটি টি২০ ম্যাচ খেলেছে, একটিতেই হেরেছে। তাও আবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। এবার সামনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং ম্যাচটি বিশ্বকাপের; যেখানে এগিয়ে আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজই। ২০০৯ ও ২০১০ সালের বিশ্বকাপে জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে জিতেছে ভারত। এ হিসেবে একটি বিষয় বোঝা যাচ্ছে, উপমহাদেশে ভারতেরই জেতার সম্ভাবনা বেশি। এখন ওয়াংখেড়ের ভেতর ও বাইরের সৌন্দর্য্য কোন দলের গায়ে হাত বুলিয়ে দেবে সেটির অপেক্ষাতেই সবাই।
×