ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ ‘বিনিয়োগ বিকাশ’ কর্মসূচী

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ৩১ মার্চ ২০১৬

শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ ‘বিনিয়োগ বিকাশ’ কর্মসূচী

এম শাহজাহান ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ ব্র্যান্ডিংয়ে এবার যুক্ত হলো ‘বিনিয়োগ বিকাশ’ কর্মসূচী। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে এই কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগের ফলে দেশে বিনিয়োগের খরা কাটবে বলেও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। ‘বিনিয়োগ বিকাশ’ বহির্বিশ্বে এমনভাবে ব্র্যান্ডিং করা হবে যাতে বিদেশীরা এদেশে বিনিয়োগ এগিয়ে আসেন। এছাড়া দেশী উদ্যোক্তাদেরও আস্থা ফিরিয়ে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে ইতোমধ্যে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিনিয়োগের প্রধান বাধাগুলো কি তা চিহ্নিত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এসব বাধা দূর করে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানো হবে। এ লক্ষ্যে জাতীয় শিল্পনীতিও বিনিয়োগবান্ধব করা হয়েছে। সম্প্রতি মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত জাতীয় শিল্পনীতির খসড়ায় বলা হয়েছেÑ কোন বিদেশী নাগরিক বাংলাদেশে ১০ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বা প্রায় আট কোটি টাকা বিনিয়োগ করলে অথবা কোন স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানে ২০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ প্রায় ১৬ কোটি টাকা স্থানান্তর করলে তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেয়া হবে। সরকারের এই উদ্যোগকে বিদেশীরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বলে দাবি করেছেন উদ্যোক্তারা। এছাড়া ভারত, চীন, জাপান ও কোরিয়ার বিনিয়োগ বাড়াতে ওই দেশগুলোর জন্য পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চল সংরক্ষণ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছেন। এছাড়া দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নে ৩০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। শুধু তাই নয়, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে আগামী পনের বছরে সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। এর ফলে দেশের রফতানি আয় বৃদ্ধি পাবে অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে প্রায় ১ কোটি মানুষের। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে নেয়া আট কর্মসূচীকে ব্র্যান্ডিং করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। এর সঙ্গে এবার বিনিয়োগ বিকাশ কর্মসূচী যুক্ত করা হয়েছে। বাকি কর্মসূচীগুলো হচ্ছে- একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, যা আগামী বছরে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক নামে পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে, এর পরই রয়েছে আশ্রয়ন প্রকল্প, ডিজিটাল বাংলাদেশ, শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচী, নারীর ক্ষমতায়ন, ঘরে ঘরে বিদ্যুত, কমিউনিট ক্লিনিক ও শিশু বিকাশ এবং সামষ্টিক নিরাপত্তা কর্মসূচী। এবার নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বিনিয়োগ বিকাশ কর্মসূচী। এই কর্মসূচীর বাইরে পরিবেশ সুরক্ষা নামে আরও একটি কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর একান্ত ব্যক্তিগত ইচ্ছায় এসব কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। যা ‘শেখ হাসিনা বিশেষ উদ্যোগ’ নামে পরিচিত। এসব কর্মসূচী দ্রুত বাস্তবায়ন ও ব্র্যান্ডিং সংক্রান্ত পর্যালোচনা সভা করবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। শীঘ্রই প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্ব এই সভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ সম্প্রতি জনকণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত ইচ্ছায় ‘শেখ হাসিনা বিশেষ উদ্যোগ’ কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। এসব কর্মসূচী গ্রহণের ফলে রূপকল্প-২১ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। এছাড়া জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা (এসডিজি) আগামী পনের বছরের মধ্যে পূরণ করতে হলেও এসব কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে হবে। বিনিয়োগ সংক্রান্ত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতেই হবে। বিনিয়োগ আকর্ষণে আগামী নতুন বাজেটেও বিশেষ কর্মকৌশল গ্রহণ করা হবে। বিদ্যমান বিনিয়োগের সক্ষমতা বাড়িয়ে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এজন্য বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে। জানা গেছে, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে শেখ হাসিনার দৃঢ় অঙ্গীকার ও বিভিন্ন গণমুখী উদ্যোগের মধ্যে এই ১০টি ক্ষেত্রকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গবর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। শীঘ্রই সংর্শ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়-পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বিদ্যুত বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করবে অর্থ মন্ত্রণালয়। ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বাড়ানো হবে ॥ উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে ক্রমপুঞ্জিভূত মূলধন বাড়ানো। গত দশ বছরে মোট বিনিয়োগ বেড়ে জিডিপির ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে ২৮ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ে সরকারী বিনিয়োগ জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৬ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত হলেও ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ জিডিপির ২১ থেকে ২২ শতাংশের মধ্যে সীমিত রয়েছে। এই বাস্তবতায় সরকারের পক্ষ থেকে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ স্থবিরতা দূর করে মধ্যমেয়াদে (২০১৬-১৮) তা জিডিপির ২৪ শতাংশে উন্নীত করা হবে। একই সময়ে সরকারী বিনিয়োগও জিডিপির ৭ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিকে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে-রূপকল্পের স্বপ্ন হচ্ছে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে জীবনমান উন্নয়ন। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে মোটা দাগে সরকারের কৌশল হচ্ছে উপযুক্ত অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর উন্নয়ন, গণদ্রব্য ও সেবার যোগান বৃদ্ধি, বিশ্ব বাজারের সঙ্গে ক্রমান্বয়ে একীভূত হওয়া, উৎপাদন বিশেষায়ন ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষা। আর এগুলোর জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বিনিয়োগ ও বিনিয়োগের উৎকর্ষ বৃদ্ধি করা। বিনিয়োগে অগ্রাধিকার ॥ সরকারী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বরাবরের মতো এবারের বাজেটেও প্রবৃদ্ধি সহায়ক খাতসমূহ অগ্রাধিকার দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। বিশেষ করে ভৌত ও সামাজিক অবকাঠামো খাত বিদ্যুত, জ্বালানি, পরিবহন, যোগাযোগ, বন্দর উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আইসিটি খাতে অধিকতর সম্পদ সঞ্চালন করা। ঘোষিত রূপকল্প-২১ সাল নাগাদ বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা হবে। এছাড়া পরিবহন খাতে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কসমূহকে চার লেনে উন্নীতকরণের চলমান কাজ দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করার পদক্ষেপ রয়েছে। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেন রাস্তা দ্রুত সম্পন্ন করার মতো বিষয় রয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নে জোর দেয়াসহ দ্রুত সময়ের মধ্যে বৃহৎ আট প্রকল্পের কাজ শেষ করা।
×