ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দেশীদশের উৎসব শুরু বসুন্ধরায়

বৈশাখের রং লোকজ ভাবনা, ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সমন্বয়

প্রকাশিত: ০৬:১০, ৩১ মার্চ ২০১৬

বৈশাখের রং লোকজ ভাবনা, ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সমন্বয়

মোরসালিন মিজান ॥ বৈশাখ বলে কথা! যেনতেনভাবে উদ্যাপন করা যায় না। বিশেষ করে পোশাকে বাঙালী হওয়া চাই-ই। বাংলা বছরের প্রথম দিনে শহুরে মানুষ অন্যের সংস্কৃতি সত্যি ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করেন। সামনে আনেন নিজের চেহারাটি। গর্বের সঙ্গে তুলে ধরেন। সে গর্ব দৃশ্যমান হয় বিশেষত পোশাকে। বাঙালীর সবচেয়ে বৃহৎ অসাম্প্রদায়িক উৎসবটি মাথায় রেখে ব্যস্ত সময় কাটান উদ্যোক্তারা। দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো। এরই মাঝে সেই প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। লাল-সাদা রঙে সাজছে শীর্ষ ফ্যাশন হাউসগুলোর শোরুম। বিশেষ করে দেশীদশের পোশাক নিয়ে শুরু হয়ে গেছে উৎসব। ১৬ দিনব্যাপী উৎসব বুধবার থেকে বসুন্ধরা সিটি শপিংমলে শুরু হয়েছে। অভিজাত শপিংমল। বিদেশী পোশাকের সমাহার। এর পরও আশ্চর্য দ্যুতি ছড়াচ্ছে দেশীয় পোশাকের সমন্বিত উদ্যোগ দেশীদশ। এই চত্বরে দশটি দেশীয় ফ্যাশন হাউস। হাত ধরাধরি করে আছে নিপুণ, কে ক্র্যাফট, অঞ্জনস, রঙ, বাংলার মেলা, সাদাকালো, বিবিয়ানা, দেশাল, নগরদোলা ও সৃষ্টি। সারা বছর এখানে পাওয়া যায় দেশীয় পোশাক। তবে সামনে যেহেতু বৈশাখ, লাল-সাদা রঙের উৎসব আয়োজন করা হয়েছে। শোরুমগুলোর ভেতরই সব আয়োজন। সবাই নিজেদের নতুন পোশাক একসঙ্গে মেলে ধরেছেন। যেদিকে তাকানো যায়, ঐতিহ্যের ছোঁয়া। আধুনিকতার সমন্বয়। যেন বৈশাখের আগেই এসে গেছে বৈশাখ। সন্ধ্যায় দেশীদশ চত্বরে বৈশাখী উৎসব ১৪২৩’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। উদ্যোক্তাদের সঙ্গে নিয়ে প্রদীপ জ্বালিয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন প্রখ্যাত ডিজাইনার চন্দ্র শেখর সাহা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পোশাক সংস্কৃতিতে বৈশাখ গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে বৈশাখের ফ্যাশন নিয়ে আলাদা করে ভাবছেন ডিজাইনাররা। এখন সে ভাবনা আরও পরিণত হয়েছে। সাত-আট মাস আগেই নতুন ডিজাইন নিয়ে কাজ শুরু হয়ে যায়। কোন্ লোকজ শিল্পরীতি অনুসরণ করবেন, তা নিয়ে বিষদ ভাবেন ডিজাইনাররা। একবার যেভাবে করেন, অন্যবার তা থেকে বেরিয়ে নতুন কিছু দেয়ার চেষ্টা থাকে তাদের। উদ্যোক্তাদেরও নিজস্ব পরিকল্পনা থাকে। দু’য়ে মিলে কাজ এগিয়ে যায়। তবে তিনি দুঃখ করে বলেন, দেশটা আমাদের হলেও দেশীয় পোশাকের বাজার মন্দা। আমাদের ওয়ার্ডরোবের তাকে তাকে সাজানো পোশাকের ৯৯ ভাগ বিদেশী। আশাহত শিল্পী আবেদনের সুরে বলেন, অন্তত ৪০ ভাগ দেশী পোশাক রাখুন ওয়ার্ডরোবে। দেশীয় পোশাক ব্যবহারে সচেতন ও আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নিজেদের পোশক নিয়ে গর্ব করা শিখতে হবে। গায়ের পোশাকটি দেখিয়ে বলতে হবে, এটি আমার দেশের ডিজাইনারের করা। নিজ দেশের তাঁতিদের বোনা কাপড়। আমাদের উদ্যোক্তারা এটি বাজারে এনেছেন। এভাবে বলতে পারার শক্তি বৈশাখ বাঙালীকে দেবেÑ এমন প্রত্যাশা করেন চন্দ্র শেখর সাহা। অনুষ্ঠানে দেশীদশের এবারের প্রস্তুতি তুলে ধরে সমন্বয়ক আশরাফুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় দশটি ফ্যাশন নিয়ে দেশীদশ। সব সময় চেষ্টা করে ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও গৌরবান্বিত বিষয়গুলো তুলে ধরতে। এবারও তাই। দশটি হাউসের বৈশাখী আয়োজন তুলে ধরছি। লাল ও সাদা রঙের প্রাধান্য দিয়ে করা। প্রতিটি হাউস নিজেদের থিম নিয়ে কাজ করেছে। আলোচনা শেষে আয়োজন করা হয় বর্ণাঢ্য ফ্যাশন শো। প্রতিটি ফ্যাশন হাউসের নতুন পোশাক প্রদর্শন করেন মডেলরা। ১০ প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত ১১০টি পোশাক পরিধান করে র‌্যাম্পে হেঁটে যান তারা। বিশেষ একটি কিউ ছিল শুধু শাড়ির। দশ প্রতিষ্ঠানের দশটি শাড়ি তুলে ধরা হয় ফ্যাশন শোতে। ফ্যাশন শো বলে দেয়, এবার পোশাকের বৈশাখ কেমন হবে। ফ্যাশন শো শেষে দেশীদশের প্রতিটি শোরুম ঘুরে দেখা যায় বৈশাখের রঙে সাজানো। ঝলমল করছে লাল-সাদা। অঞ্জনসের স্বত্বাধিকারী শাহীন জনকণ্ঠকে জানান, এবারও নিজস্ব চিন্তা থেকে কাজ করেছেন তারা। দেশী মোটিফগুলো ব্যবহার করেছেন। যোগ হয়েছে রিকশা পেন্টিং। মোটিফটি নিয়ে বিশেষ কাজ হয়েছে। তিনি জানান, সব বয়সীর জন্য পোশাক তৈরি করা হয়েছে। একই ডিজাইনের ডুয়েট পোশাক আছে। অভিন্ন পোশাকে সাজতে পারবে গোটা পরিবারও। ফ্যাশন হাউস সাদাকালো’র স্বত্বাধিকারী আজহারুল হক আজাদ বলেন, আমরা বাঙালীর ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি জন্মলগ্ন থেকেই লালন করছি। বৈশাখের পোশাকে সেটাই উপজীব্য। এবার গ্রামবাংলার ঐতিহ্য গামছা থেকে মোটিফ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, গামছা ডিজাইনে শাড়ি, পাঞ্জাবি, ফতুয়া সব করেছি আমরা। বৈশাখের আগেরদিন পর্যন্ত চলবে উৎসব।
×