ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে প্রিমিয়ার ভার্সিটি ছাত্র হত্যায় গ্রেফতার পাঁচজন রিমান্ডে

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ৩১ মার্চ ২০১৬

চট্টগ্রামে প্রিমিয়ার ভার্সিটি ছাত্র হত্যায় গ্রেফতার পাঁচজন রিমান্ডে

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বিবিএ ফাইনাল ইয়ারের শিক্ষার্থীদের বিদায় সংবর্ধনাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী খুনের ঘটনায় মামলা করেছেন নিহতের বাবা আবু তাহের। পরিকল্পিত এ হত্যাকা-ের ঘটনায় চকবাজার থানা পুলিশ এজাহারভুক্ত ১৬ জনের মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সূত্রপাত থেকে শুরু করে গুরুতর আহত করা পর্যন্ত অনেক তথ্যই উদ্ধার হয়েছে। বুধবার বিকেলে গ্রেফতারকৃত পাঁচজনকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই হুমায়ুন কবির ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। বিচারক ফরিদ আলম প্রত্যেক আসামিকে পৃথক ৩ দিন করে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে, ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বাগ্বিত-া থেকে শুরু করে ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটছে। গত দু’মাস ধরে এ ধরনের কোন্দল দানা বেঁধে শেষ পর্যন্ত এমবিএ শিক্ষার্থীর হত্যাকা-ের মধ্য দিয়ে কিছুদিনের জন্য বন্ধ হয়েছে বলে দাবি করেছে শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে শিক্ষা জীবন শেষ করার আগেই শিক্ষার্থীদের প্রাণহানির ঘটনায় যারা জড়িত তাদের অচিরেই গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। অন্যথায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়াও শিক্ষাঙ্গনে রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন থেকে বিরত থাকাসহ রাজনীতিমুক্ত করার দাবিও জানান অভিভাবকরা। এদিকে ছাত্রলীগের একাংশ সংবাদ সম্মেলন করাসহ মানববন্ধন ও বিচার দাবির মাধ্যমে সোহেল হত্যার ক্লু উদ্ঘাটনে পুলিশকে সহায়তা করার ঘোষণা দিয়েছে। অপরদিকে এ ধরনের আয়োজন নিজেদের রক্ষার হাতিয়ার হতে পারে বলে ধারণা সাধারণ শিক্ষার্থীদের। এ হত্যাকা-ের ব্যাপারে চকবাজার থানার ওসি আজিজ আহমেদ জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত পাঁচজন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ অনুযায়ী তথ্য মিলেছে ঘটনাটি পরিকল্পিত। দীর্ঘ দু’মাসের অন্তর্কোন্দলের জের ধরে এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে পুলিশের ধারণা। চকবাজার থানা পুলিশের নথিতে নিবন্ধনকৃত এজাহার থেকে জানা গেছে, নিহত নাসিম আহমদ সোহেল এমবিএর ছাত্র। মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে বন্ধুদের মোবাইল থেকে মামলার বাদী ও নিহতের বাবা আবু তাহের জেনেছেন গুরুতর আহত অবস্থায় সোহেলকে সিএসসিআর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ার কারণে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেল পৌনে ৫টার দিকে সোহেলের মৃত্যু হয় চিকিৎসাধীন অবস্থায়। পরিকল্পিত এ হত্যাকা-টি দীর্ঘ দুই মাসের জের। প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির তৃতীয় তলায় প্রথম দফায় সোহেল এবং তার সঙ্গীদের ওপর হামলা করে এজাহারনামীয়রা। গুরুতর আহত অবস্থায় সোহেলকে হাসপাতালে ভর্তির জন্য নিয়ে আসার সময় পুনরায় দ্বিতীয় তলায় আরেক দফায় হামলা করা হয়। এ সময় সোহেলের বন্ধু ইমতিয়াজ রাহাত ও রনি চন্দ্র শীলসহ অন্য সহপাঠীরা সোহেলকে বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করলেও সোহানের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতেই সোহেল গুরুতর আহত হয়েছে। এদিকে সিএসসিআর হাসপাতালে ভর্তির পর সোহেলের অবস্থা বেগতিক দেখে চিকিৎসকরা তাকে চমেক হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। মূলত ধারালো ছোরার আঘাতের ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় সোহেলের মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন। এদিকে ঘটনাস্থলে থাকা সোহেলের কয়েক সহপাঠী জানিয়েছে, বিবিএর বিদায় অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে পুরো অনুষ্ঠান সাজানো থেকে শুরু করে সম্পন্ন পর্যন্ত বিভিন্ন ইভেন্টের দায়িত্বে ছিল সোহেল। এক্ষেত্রে প্রধান অতিথি নির্ধারণ নিয়ে ক্যাম্পাসে কয়েক দফায় জটিলতাও সৃষ্টি হয়েছে। গত দুই মাস ধরে এ ধরনের আয়োজনকে সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য ৩১ মার্চ (বৃহস্পতিবার) ঘিরে চলছিল নানা আয়োজন। সকালেই সোহেল বাসা থেকে বেরিয়ে একাই ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। এরপর সহপাঠীদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা চলে ক্যাম্পাসের তৃতীয় তলায়। সেখানেই সোহেলকে খুঁজে বের করে নেয় অনুষ্ঠানের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী শিক্ষার্থী নামীয় সন্ত্রাসীরা। পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সোহেলসহ কয়েকজনের ওপর হামলে পড়ে। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে আশরাফ, নিশান, জিয়াউল, মোস্তফা ও তামিম সোহেলকে লাথি মারতে মারতে ফ্লোরে ফেলে দেয়। একপর্যায়ে লাঠি দিয়ে সোহেলের পায়ে ও পিঠে মারতে থাকে। সোহানের সঙ্গে থাকা ধারালো ছোরা দিয়েই উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করা হয় সোহেলকে। এ সময় সোহেলের সহপাঠী ইমতিয়াজ রাহাত এবং রনি এগিয়ে গেলে তাদের ওপরও হামলা চালানো হয়। মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে আক্রমণকারীরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এ ঘটনায় চকবাজার থানা পুলিশ প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্র্থী আশরাফুল ইসলাম ওরফে আশরাফ, ওয়াহিদুজ্জামান ওরফে নিশান, জিয়াউল হায়দার চৌধুরী, এসএম গোলাম মোস্তফা ও তামিমুল আলম ওরফে তামিমকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে পুলিশ। থানায় নিয়ে আসার পর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা তাদের দলবলে থাকা আরও ১১ জনের নাম স্বীকার করে। এরা হলো ইব্রাহিম ওরফে সোহান, কাজী জয়নাল আবেদিন, সাইফুদ্দিন, আবু জাহির ওরফে উজ্জ্বল, নিজাম উদ্দিন (আবিদ), সাইকুল মোহাম্মদ (তারেক), নুরুল ফয়সল ওরফে স্যাম, সাইফুল ইসলাম (সাকিব), আবু ফয়েজ, রাশেদুল হক (ইরফান) ও নাজমুল হক এ মামলার এজাহারনামীয় আসামি। এ ছাড়াও অজ্ঞাত আরও ২০/২৫ জন এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল বলে গ্রেফতারকৃতরা পুলিশকে জানিয়েছে। তবে পুলিশের তথ্যে উঠে এসেছে এসব আসামি পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকা- ঘটিয়েছে এবং তারা জিইসি, চকবাজার, পাঁচলাইশ ও বহদ্দারহাটকেন্দ্রিক। প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এটা পড়ালেখার স্থান। এখানে কোন ধরনের রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের স্থান নয়। একজন শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বোর্ড সভার মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম অনির্ধারিত সময়ের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। ৫ এপ্রিল চট্টগ্রামে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট ॥ প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাসিম আহমদ সোহেলের হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে ছাত্র ধর্মঘটসহ কর্মসূচী ঘোষণা করেছে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের একাংশ। বুধবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগও দাবি করেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আগামী তিন দিনের মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা না হলে ৩ এপ্রিল চট্টগ্রামের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সমাবেশ ও ৫ এপ্রিল ছাত্র ধর্মঘট পালন করা হবে। ৬ এপ্রিল পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে অবস্থান ধর্মঘট পালিত হবে। ছাত্রলীগ নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেনের পদত্যাগও দাবি করেন। পদত্যাগ না করলে আগামী ৭ এপ্রিল থেকে ভিসির কার্যালয় অবরোধের কর্মসূচী ঘোষণা দিয়ে তারা বলেন, তিনি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত সে কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে।
×